টাকা না পেয়ে ‘বের করে দিল’ হাসপাতাল, পথে শিশুর মৃত্যু

টাকা না দেওয়ায় ঢাকার শ্যামলীর বেসরকারি একটি হাসপাতাল থেকে যমজ দুই অসুস্থ শিশুকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Jan 2022, 07:34 PM
Updated : 7 Jan 2022, 01:40 PM

এরপর বৃহস্পতিবার বিকালে শিশু দুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে একটির মৃত্যু হয়।

এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে ‘আমার বাংলাদেশ হাসপাতাল’ নামে ওই হাসপাতালে দায়িত্বরত এক কর্মী বলছেন, ‘স্বেচ্ছায়ই’ ওই শিশু দুটিকে নিয়ে গিয়েছিলেন তাদের মা। 

ছয় মাস বয়সী দুই যমজ শিশু আব্দুল্লাহ ও আহামেদের মা আয়েশা বেগম। তিনি সাভারের বাটপাড়া রেডিও কলোনিতে থাকেন। তার স্বামী কুমিল্লার হোমনা উপজেলার মো. জামাল সৌদি আরবে থাকেন।

আয়েশা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ঠাণ্ডাজনিত রোগে ভোগার পর দুই শিশুকেই গত ৩১ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। কিন্তু সেখানে এনআইসিইউতে সিট খালি না থাকায় এক অ্যাম্বুলেন্স চালকের পরামর্শে কলেজ গেইট এলাকায় ‘আমার বাংলাদেশ হাসপাতালে’ ভর্তি করেন দুই শিশুকে। সেখানে তুলনামূলক কম খরচে চিকিৎসার আশ্বাসও তাকে দেওয়া হয়েছিল।

তিনি বলেন, ওই হাসপাতালের এনআইসিইউতে রেখে ছয় দিন চিকিৎসা দেওয়ার পর তারা ১ লাখ ২৬ হাজার টাকা দাবি করে। কয়েক দফায় ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হলেও তারা বাকি টাকার জন্য চাপ দেয়।

আয়েশা বলেন, “টাকা কমানোর জন্য বলা হয় এবং এত টাকা কোথা থেকে পাব জানিয়ে তাদের হাতে পায়ে ধরি, কিন্তু লাভ হয়নি।”

আয়েশা বেগমের দাবি, বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টার দিকে তাদের বের করে দেওয়া হয় এবং শাহিন নামে একজনের মাধ্যমে তাদের ঢাকা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়।

পথে একটি শিশুর মৃত্যুর পর অন্যটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আমার বাংলাদেশ হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে আয়েশা বলেন, এই হাসপাতালের গাফলতির কারণে তার এক শিশু মারা গেছে।

এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে আমার বাংলাদেশ হাসপাতালের অভ্যর্থনার দায়িত্বে থাকা নয়না আকতার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আয়েশার অভিযোগ ‘ঠিক নয়’।

“তারা ৫০ হাজার টাকা নয়, মাত্র ৪ হাজার টাকা দিয়েছে। এই হাসপাতালে খরচ বহন করতে পারবে না বলে স্বেচ্ছায় ‘শিশুদের কিছু হলে আমার বাংলাদেশ হাসপাতাল’ কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না’ বলে হলফনামাও দিযেছে।”

নয়না বলেন, “আমরা শিশু দুটিকে রাখতে চেয়েছি, তার প্রবাসী স্বামীর সাথেও কথা হয়েছে।”

তিনি বলেন, “হাসপাতালের সামনের একটি ওষুধের দোকান থেকে ১০ হাজার টাকার ওষুধ নিয়ে টাকাও দেয়নি তারা। এই টাকা দেওয়ার কথা বলে সেই দোকানের কর্মচারী শাহিনকে নিয়ে যায়। কিন্তু তাকে টাকা না দিয়ে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দিয়েছে বলে জেনেছি।”

ঢাকা মেডিকেল কলেজ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আয়েশার কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর শাহিনকে আটক করা হয়।

আয়েশা মোহাম্মদপুর থানায়ও অভিযোগ জানিয়েছেন।

থানার এসআই সাইফুল ইসলাম রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওই মহিলার সাথে কথা হয়েছে। আমার বাংলাদেশ হাসপাতালের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ দিলে সে অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

শাহিনকে আটকের কথা বাচ্চু মিয়া জানালেও মধ্যরাত অবধি তাকে সংশ্লিষ্ট শাহবাগ থানায় সোপর্দ করা হয়নি বলে থানার এসআই খন্দকার শাহরিয়ার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।