অবশেষে সেই সার্জেন্টের মামলা নিল পুলিশ

ব্যাপক সমালোচনার মুখে ঢাকায় গাড়ির ধাক্কায় অবসরপ্রাপ্ত বিজিবি সদস্যের গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনায় ১৩ দিন পর মামলা নিয়েছে পুলিশ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Dec 2021, 02:54 PM
Updated : 16 Dec 2021, 02:54 PM

আহতের মেয়ে ‍পুলিশের সার্জেন্ট মহুয়া হাজং বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে বনানী থানায় যে মামলা করেছেন, তাতে চালকের সঙ্গে অজ্ঞাতনাম দুজনকে আসামি করা হয়েছে।

বনানী থানার ওসি ‍নুরে আযম মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সড়ক পরিবহন আইনের ৯৮ ও ১০৫ ধারায় করা মামলায় গাড়ির চালকের নাম উল্লেখ করা হয়নি।

“গাড়িটি জব্দ করার ও আসামি গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।”

মামলা নিতে প্রায় দুই সপ্তাহ দেরির কারণ জানতে চাইলে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি ওসি।

২ ডিসেম্বর মধ্যরাতে বিমানবন্দর সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ির ধাক্কায় গুরুতর আহত হন মনোরঞ্জন হাজং। দুই দফা অস্ত্রপচারে তার ডান পা হাঁটুর নিচ থেকে কেটে ফেলতে হয়। তিনি বারডেম হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন।

মনোরঞ্জনের একমাত্র মেয়ে মহুয়া ঢাকা মহানগর পুলিশে (ডিএমপি) কর্মরত।

তার অভিযোগ, তার বাবাকে ধাক্কা দেওয়া লাল রঙের বিএমডব্লিউ গাড়িটির চালকের বিরুদ্ধে মামলা করতে গেলে বনানী থানা ফিরিয়ে দিয়েছে।

মহুয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঘটনার পরদিন অসুস্থ বাবাকে হাসপাতালে রেখেই বনানী থানায় গিয়েছিলেন তিনি। থানার একজন পরিদর্শক তাকে বলেন, ‘তোমার চাকরির বয়স তো অল্পদিন। এ সমস্ত বিষয় নিয়ে বেশি মাতামাতি করো না, বিপদে পড়ে যাবা। আমি তো তোমার চেয়ে সিনিয়র, আমার কথা শোনো’।“

এমন কথা শোনার পর সার্জেন্ট মহুয়া থানা থেকে ফিরে যান।

তিনি বলছেন, এজাহারে সেই গাড়িচালক এবং তার ‘প্রভাবশালী’ বাবার নামও তিনি লিখেছিলেন। কিন্তু থানা মামলা নেয়নি।  

“যারা দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের পক্ষ থেকে সমঝোতা করার জন্য চাচ্ছে, তাদের আকার-ইঙ্গিতে এটা বুঝতে পেরেছি।”

অবসরে থাকা মনোরঞ্জন গুলশানের এক রেস্তোঁরায় নিরাপত্তা কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেন। ওই দুর্ঘটনার খবর বিভিন্ন টেলিভিশন স্টেশনে প্রচারও করা হয়।

এসব খবরের ভিডিওতে দেখা যায়, ২ ডিসেম্বর রাত ২টার পর বিমানবন্দর সড়কে মোড় ঘোরার জন্য মোটরসাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন মনোরঞ্জন হাজং। একটি গাড়ি এসে ধাক্কা দিলে তিনি ছিটকে পড়েন।

তাকে উদ্ধার করে রাজধানীর জাতীয় অর্থপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (পঙ্গু হাসপাতালে) ভর্তি করে পুলিশ।

৩ ডিসেম্বর মনোরঞ্জনের ডান পায়ের গোড়ালি কেটে ফেলেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু সংক্রমণ ছড়ালে পাঁচ দিন পর ৮ ডিসেম্বর আবারও অস্ত্রপচার করে ডান পাটি হাঁটুর নিচ থেকে কেটে ফেলতে হয়।

হৃদরোগের পাশাপাশি ডায়েবেটিস রয়েছে ষাটোর্ধ্ব মনোরঞ্জনের। সব বিবেচনায় পরে তাকে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

১৪ ডিসেম্বর টিভিতে প্রচারিত ভিডিওতে দেখা যায়, ওই দুর্ঘটনার পর লাল রঙের বিএমডব্লিউ গাড়ি জনতা আটক করে পুলিশে দেয়; গাড়ির চালকের ছবিও দেখানো হয়।

মামলা না নেওয়ার বিষয়ে ওই টেলিভিশনকে টেলিফোনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপকমিশনার আসাদুজ্জামান বলেন, “বিষয়টা আমাদের সদস্যের। আমাদের একটা সিনিয়র কমান্ড আছে, অথরিটি আছে, সবই আছে। আমার তো মনে হয় যে, এটা আপনাদের (গণমাধ্যমে) পর্যায়ে যাওয়ার কোনো দরকার ছিল না।

“আমাদের সহকর্মী মামলা না করতে পারার তো কোনো কারণ নেই। এটা তদন্ত হচ্ছে, তদন্তের পরেই আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব।“

মামলার পর সার্জেন্ট মহুয়া হাজংয়ের প্রতিক্রিয়া জানতে কল করা হলে তিনি ফোন ধরেননি; পরে এসএমএস পাঠিয়ে ফোন করলেও তিনি সাড়া দেননি।