‘মাসুদ রানা’র ২৬০ বইয়ের স্বত্ব আবদুল হাকিমের: হাই কোর্ট

সেবা প্রকাশনীর পাঠকপ্রিয় স্পাই থ্রিলার ‘মাসুদ রানা’ সিরিজের ২৬০টি এবং ‘কুয়াশা’ সিরিজের ৫০টি বইয়ের লেখক হিসেবে মালিকানা স্বত্ব শেখ আবদুল হাকিমকে দিয়ে কপিরাইট অফিসের দেওয়া সিদ্ধান্তই বহাল রেখেছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Dec 2021, 07:24 AM
Updated : 13 Dec 2021, 07:46 AM

কপিরাইট অফিসের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে কাজী আনোয়ার হোসেনের করা রিটে গতবছর রুল দিয়েছিল হাই কোর্ট। সেই রুল খারিজ করে এবং কপিরাইট অফিসের দেওয়া সিদ্ধান্তের ওপর থাকা স্থগিতাদেশ বাতিল করে সোমবার রায় দিয়েছে বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের হাই কোর্ট বেঞ্চ।

এই মামলা চলার মধ্যেই চলতি বছর অগাস্টে ৭৪ বছর বয়সে মারা যান শেখ আবদুল হাকিম। মৃত্যুর চার মাস পর মাসুদ রানা সিরিজে তার ভূমিকার স্বীকৃতি মিললো হাই কোর্ট থেকে।   

অধ্যাপক কাজী মোতাহার হোসেনের ছেলে কাজী আনোয়ার হোসেন ১৯৬৬ সালে সেবা প্রকাশনী প্রতিষ্ঠা করে ‘মাসুদ রানা’ সিরিজ লেখা শুরু করেন; দ্রুতই তা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।

পরবর্তীতে কাজী আনোয়ার হোসেন পারিশ্রমিকের বিনিময়ে অন্যদের দিয়ে ‘মাসুদ রানা’ লেখাতেন। তার মধ্যে শেখ আবদুল হাকিমও রয়েছেন।

তবে ‘বাজারজাত করার স্বার্থে’ অন্যদের লেখাগুলো কাজী আনোয়ার হোসেন নিজের নামে প্রকাশ করতেন।

শুরুতে কোনো আপত্তি না থাকলেও ২০১০ সালে মাসুদ রানা সিরিজের ২৬০টি বইয়ের মালিকানা স্বত্ব দাবি করে কাজী আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে কপিরাইট আইনের ৭১ ও ৮৯ ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলেন শেখ আবদুল হাকিম।

নয় বছরেও কোনো সুরাহা না পাওয়ায় গতবছর ২৯ জুলাই তিনি কপিরাইট অফিসে অভিযোগ দায়ের করেন তিনি।

তিন দফা শুনানি, দুই পক্ষের যুক্তি-পাল্টা যুক্তি ও তৃতীয় পক্ষের বক্তব্যের আলোকে কাজী আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে কপিরাইট আইনের ৭১ ও ৮৯ ধারা লঙ্ঘনের প্রমাণ পাওয়ার কথা জানায় কপিরাইট অফিস।

গত বছর ১৪ জুন কপিরাইট অফিস সিদ্ধান্ত দেয়, ‘মাসুদ রানা’ সিরিজের ২৬০টি বই এবং ‘কুয়াশা’ সিরিজের ৫০টি বইয়ের লেখক হিসেবে শেখ আবদুল হাকিমই ওই বইগুলোর স্বত্বাধিকারী।

অধিকাংশ বইয়ের মালিকানা হারালেও ‘মাসুদ রানা’ সিরিজের স্রষ্টা হিসেবে চরিত্রটি কাজী আনোয়ার হোসেনের মালিকানায় থাকবে বলে সিদ্ধান্ত দেয় কপিরাইট অফিস।

কপিরাইট অফিসের সে সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে গত বছর হাই কোর্টে রিট করেন কাজী আনোয়ার হোসেন। সে রিটের প্রাথমিক শুনানির পর গত বছর ১০ সেপ্টেম্বর হাই কোর্ট কপিরাইট অফিসের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে রুল দেয়।

‘এখতিয়ার বহির্ভূত’ বিবেচনায় কপিরাইট অফিসের ওই রায় কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয় রুলে।

সংস্কৃতি সচিব, কপিরাইট অফিস, রেজিস্ট্রার অফ কপিরাইটস এবং কপিরাইট বোর্ডকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

সব পক্ষের শুনানি শেষে সোমবার সেই রুল খারিজ করে রায় দিল হাই কোর্ট। ফলে কপিরাইট অফিসের দেওয়া সিদ্ধান্তই বহাল থাকল।

আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এ বি এম হামিদুল মিসবাহ। কপিরাইট অফিসের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান ও ইফতাবুল কামাল অয়ন।

খুরশীদ আলম খান পরে সাংবাদিকদের বলেন, “গত বছর ১৪ জুন কপিরাইট অফিসের রেজিস্ট্রার কপিরাইট সংক্রান্ত আদেশ দিয়েছিলেন যে, কুয়াশা সিরিজের বইগুলো জব্দ থাকবে। আজকে উচ্চ আদালতে রুল খারিজ হয়ে সেটিই প্রমাণ করল সেগুলো জব্দই থাকবে। এ রায়ের ফলে কপিরাইট অফিসের সিদ্ধান্তই বহাল রাখলো উচ্চ আদালত।

“আদালত এও বলে দিয়েছেন, কাজী আনোয়ার হোসেন কোনো প্রতিকার চাইলে কপিরাইট আইন, ২০০০ অনুযায়ী জেলা অথবা দায়রা জজ আদালতে যেতে পারবেন।”

পরে কাজী আনোয়ার হোসেনের আইনজীবী হামিদুল মিসবাহ বলেন, “আদালত মালিকানা নিয়ে কোনো কথা বলেননি। আর আবেদনকারী কপিরাইট আইনের অধীন জেলা বা দায়রা কোর্টে প্রতিকার চাইতে পারেন বলে অবজারভেশন দিয়েছেন।

“আমরা আদালতের কাছে চেয়েছিলাম কপিরাইট রেজিস্ট্রারের কাজ অবৈধ ঘোষণা করার জন্য। আদালতের কাছে মনে হয়েছে, সংবিধানের ১০২ এর অধীনে এখানে চাওয়ার বিষয় না। এটা মনে করে রুলটি খারিজ করেছেন হাইকোর্ট। আমরা মনে করি এখানে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তাই আমরা আপিল করব।”