আলাদা হবে জোড়া জমজ শিশু লাবিবা-লামিসা

আড়াই বছরের বেশি সময় পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দ্বিতীয় দফায় অস্ত্রোপাচারের মাধ্যমে আলাদা হতে যাচ্ছে জোড়া জমজ শিশু লাবিবা-লামিসা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Dec 2021, 01:52 PM
Updated : 11 Dec 2021, 01:52 PM

শনিবার দুপুরে হাসপাতালের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে চিকিৎসকরা জানান, সবকিছু ঠিক থাকলে সোমবার অস্ত্রোপচার হবে। এতে নয় থেকে ১০ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে।

দুই বছর আট মাস বয়সী লাবিবা-লামিসা নিলফামারীর জলঢাকা উপজেলার যদুনাথপুর গ্রামের লাল মিয়া-মনুফা বেগম দম্পতির সন্তান। ২০১৯ সালের ১৫ এপ্রিল উপজেলা সদরের একটি ক্লিনিকে তাদের জন্ম হয়।

সংবাদ সম্মেলনে শিশু দুটির জোড়া লাগা দেহ আলাদা করার বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আশরাফ উল হক কাজল।

“আমরা খুবই আশাবাদী। আমরা সফল হব বলে ধারণা করছি। জোড়া শিশু দুটির যখন নয়দিন বয়স, তখন তারা রংপুর মেডিকেল থেকে ঢাকা মেডিকেলে আসে।  তারা প্রায় দেড় মাস এখানে ভর্তি ছিল।

“এর মধ্যে তাদের পায়ুপথে অস্ত্রোপচার ও পেট দিয়ে মল ত্যাগের ব্যবস্থা করা হয়। এরপর তাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। করোনা ভাইরাসের কারণে এতদিন শিশু দুইটির অস্ত্রপচার করা সম্ভব হয়নি।”

তিনি জানান, গত ২৮ অক্টোবর আবারও শিশু দুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন তাদের বাবা-মা।

এর আগে ২০১৭ সালের অগাস্টে এই হাসপাতালের ২২ জন চিকিৎসকের প্রায় নয়ঘণ্টা পরিশ্রমে পিঠ থেকে কোমরের নীচ পর্যন্ত জোড়া লাগা ১০ মাস বয়সী যমজ শিশু তোফা ও তহুরার অস্ত্রোপচার সফল হয়।

অধ্যাপক কাজল বলেন, “এর আগে জোড়া শিশু তোফা-তহুরার অস্ত্রোপচারে আমরা সফল হয়েছি। আশা করি এ ক্ষেত্রেও আমরা সফল হতে পারব। লাবিবা-লামিসার জোড়াটা একটু ব্যতিক্রম।

“তাদের পায়ুপথ, মাসিকের রাস্তা এবং মেরুদণ্ডে সমস্যা আছে। যেগুলো আলাদা করতে হবে। আমরা খেয়াল রাখব তারা যেন ভবিষ্যতে পূর্ণাঙ্গ নারী হিসেবে বেড়ে উঠতে পারে। ইনশাল্লাহ আমরা সফল হব।”

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, জোড়া জমজ শিশু লাবিবা-লামিসার অস্ত্রোপচারে শিশু সার্জারি ছাড়াও নিউরো সার্জারি, প্লাস্টিক সার্জারি, রেডিওলোজি, ইউরোলোজি, অর্থোপেডিকস সার্জারির চিকিৎসকরা যুক্ত থাকবেন।

নিওরোসার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. অসিত চন্দ্র সরকার বলেন, “জোড়া শিশুর অস্ত্রোপচারের বিষয়ে আমরা আশাবাদী। আমরা সাবধানে এগোতে চাই। তবে গ্যারান্টি দিয়ে বলা খুব মুশকিল।”

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. টিটো মিঞা বলেন, “এর আগেও আমরা জোড়া শিশুর অস্ত্রোপচার করেছি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একটা খুব বড় বিষয় হলো, আমরা চিকিৎসকরা টিমসহ একসাথে কাজ করি। ইনশাল্লাহ এবারেও সমস্যা হবে না। বিজয়ের মাসে আমরাও বিজয়ী হব।”

হাসপাতালে শিশু দুটির বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জন্মের অল্প কিছুদিনের মধ্যে লাবিবা-লামিসার এক দফা অস্ত্রোপচার হয়। সেসময় চিকিৎসকরা এক বছর পর আসতে বলেন।

মা মনুফা বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শিশু দুটিকে নিয়ে খুব সমস্যায় থাকতে হয়। একজন হাঁটতে চাইলে,অন্যজন বসতে চায়। একজন খেতে চাইলে অন্যজন কাঁদে। একজন ঘুমাতে চাইলে অন্যজন চিৎকার করে। আমি ঠিকমত ঘুমাতে পারি না। এদের সঙ্গে সবসময় থাকতে হয়।”

বাবা লাল মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি রাজ মিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করি। বাচ্চাগুলার চিকিৎসার খরচ চালানোর মত টাকা আমার কাছে নাই। করোনার সময় কাজও বন্ধ ছিল।

“হাতে কোনো টাকা নাই। তবে গ্রাম থেকে অনেক সাহায্য পাইছি। আর লাবিবা-লামিসার চিকিৎসার খরচ এই হাসপাতাল থেকেই দিতেছে। আমি শুধু সবার কাছে দোয়া চাই আমার বাচ্চাগুলার জন্য।”

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের  প্রধান অধ্যাপক বিধান সরকার,শিশু সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল হানিফ টাবলু,শিশু সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সাহ্নূর ইসলাম, বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. আইয়ুব আলী ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহাকারী পরিচালক আশরাফুল আলম।