কাটাখালীর পৌর মেয়র আব্বাস বরখাস্ত

জাতির পিতাকে নিয়ে ‘কটূক্তি’ এবং দুর্নীতির অভিযোগে রাজশাহীর কাটাখালী পৌরসভার মেয়র মো. আব্বাস আলীকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Dec 2021, 05:07 AM
Updated : 10 Dec 2021, 05:08 AM

জাতির পিতার ম্যুরাল স্থাপনের বিরোধিতায় বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের এক মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে কারাগারে আছেন দলীয় পদ হারানো এই আওয়ামী লীগ নেতা।  

তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে বুধবার স্থানীয় সরকার বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নিয়ে আব্বাসের যে ‘বিতর্কিত অডিও’ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, সে বিষয়ে ২৫ নভেম্বর তাকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি কোনো জবাব দেননি।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে ‘কটূক্তি ও অশালীন বক্তব্য’, দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে কাটাখালী পৌরসভার ১২ জন কাউন্সিলর মেয়র আব্বাস আলীর প্রতি অনাস্থা জানিয়ে তাকে অপসারণের আবেদন করেছেন বলেও প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়।

সেখানে বলা হয়, স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন অনুযায়ী, কোনো পৌরসভার মেয়র অথবা কোনো কাউন্সিলরকে অপসারণের কার্যক্রম শুরু হয়ে থাকলে অথবা তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলায় অভিযোগপত্র আদালতে গৃহীত হলে, মেয়র অথবা কাউন্সিলরের ক্ষমতা তার হাতে থাকা পৌরসভার স্বার্থের পরিপন্থি অথবা প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণে সমীচীন না হলে, সরকার লিখিত আদেশের মাধ্যমে তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করতে পারে।

“মামলায় গ্রেপ্তার হওযার কারণে আব্বাস আলী কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। এ কারণে পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারী ও পৌরসভার সেবা গ্রহণকারী সাধারণ নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এটি পৌরসভার স্বার্থের পরিপন্থি ও প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণ থেকে সমীচীন নয়। এ অবস্থায় পৌর মেয়রের পদ থেকে সাময়িকভাবে তাকে বরখাস্ত করা যুক্তিযুক্ত।”

নৌকা প্রতীক নিয়ে টানা দুইবার রাজশাহীর পবা উপজেলার কাটাখালী পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত আব্বাস আলী পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

সম্প্রতি ওই অডিও টেপ ফাঁস হওয়ার পর তাকে পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক পদের পাশাপাশি রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়া ওই অডিও টেপে বলতে শোনা যায়, রাজশাহী সিটি গেইটে বঙ্গবন্ধুর যে ম্যুরাল করার নকশা দেওয়া হয়েছে, সেটা ‘ইসলামি শরিয়ত মতে সঠিক নয়’। এটা করতে দিলে ‘পাপ হবে’।

ওই অডিও ভাইরাল হলে রাজশাহীতে তুমুল আলোচনা শুরু হয়। তার অপসারণের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি অংশ। রাজশাহীর নগরের রাজপাড়া, বোয়ালিয়া ও চন্দ্রিমা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তিনটি মামলা হয় আব্বাসের বিরুদ্ধে।

মেয়র আব্বাস প্রথামে দাবি করেছিলেন, ওই অডিও ‘এডিট করা’। তবে পরে ফেইসবুক লাইভে এসে তিনি স্বীকার করেন, ওই অডিও তিন-চার মাস আগের, ওই বক্তব্যও তার।

মেয়র সেখানে বলেন, স্থানীয় একটি মাদ্রাসার বড় হুজুরের কথায় প্রভাবিত হয়ে তিনি বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল না রাখার বিষয়টি বলেছিলেন ‘কথাচ্ছলে’।

কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলতে থাকেন, যদি এটা এত বড় ভুল হয়ে থাকে, সেজন্য তিনি ক্ষমা চান। ‘চক্রান্ত হচ্ছে’ দাবি করে সবাইকে পাশে দাঁড়ানোরও অনুরোধ করেন।  

মামলা হওয়ার পর ৩০ নভেম্বর রাতে ঢাকার কাকরাইলের হোটেল রাজমনি ঈশা খাঁ থেকে তাকে গ্রেপ্তার করার পর র‌্যাব জানায়, আব্বাস ‘দেশ ছাড়ার’ চেষ্টায় ছিলেন।    

সোমবার আদালতে হাজির করা হলে বিচারক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের এক মামলায় আব্বাসকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে তিন দিনের রিমান্ডে পাঠান।

পুরনো খবর