বাবা-মার আয়-ব্যয়ের হিসাব সন্তানদেরও রাখতে হবে: প্রধান বিচারপতি

পিতা-মাতার আয়-ব্যয় জেনে নেওয়ার মাধ্যমে পরিবার থেকে শুরু করে সমাজের সর্বস্তরে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে নতুন প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Dec 2021, 12:11 PM
Updated : 9 Dec 2021, 01:41 PM

আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবসে বৃহস্পতিবার দুদকের আয়োজনে এক আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগ দিয়ে তিনি এ আহ্বান জানান।

প্রধান বিচারপতি বলেন, “আমি নবীন ছেলে-মেয়েদের উদ্দেশ্যে বলছি, তারা তাদের পিতা-মাতার কাছে বিনয়ের সাথে জানতে চাইবে যে, তাদের পিতা-মাতার বেতন-ভাতা কত? তাদের মাসিক আয় কত, মাসিক ব্যয় কত? তাদের সংসার কীভাবে চলে, তারা কীভাবে বিলাসবহুল জীবন-যাপন করে।”

পরিবারের সদস্যদের মধ্যে থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মাহমুদ হোসেন বলেন, দুর্নীতিবাজদের পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে বয়কট করতে হবে। তরুণ প্রজন্ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালে দেশ দুর্নীতিমুক্ত হতে বাধ্য।

আগে দুর্নীতিবাজদের সমাজ ‘বয়কট’ করলেও এখন উৎসাহিত করা হয়ে থাকে প্রধান বিচারপতি বলেন, “আমরা শৈশবে দেখেছি, দুর্নীতিবাজদের সমাজ থেকে বয়কট করা হত। তাদের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক স্থাপন করতে সংকোচ বোধ করা হত। বরং এখন তাদেরকে উৎসাহিত করা হয়। দুর্নীতিবাজদের তোষণ করা হয়। আমাদেরকে পূর্বের কালচারে ফিরে যেতে হবে।”

সমাজের শিক্ষিতরা ‘লোভী ও দুর্নীতিবাজ হলে’ দুর্নীতি প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে না বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমার সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয়, যখন দেখি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি অর্জনের পর রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হয়ে কিছু কিছু কর্মকর্তা দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়।

“দেশের বিদ্যান ব্যক্তিগণ লোভী হলে, ঐশ্বর্যের পেছনে ছুটলে, অসাধু হলে দুর্নীতিকে প্রতিরোধ করা কোনো দিন সম্ভব হবে না।”

কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যাতে দুর্নীতির মামলার শিকার না হন এবং কোনো দুর্নীতিবাজ যাতে পার পেয়ে না যায় সে বিষয়ে দুদক কর্মকর্তাদের সতর্ক নজর রাখার আহ্বান জানান এই বিচারপতি।

সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, “তদন্তকারী কর্মকর্তার মনে রাখতে হবে যে, একজন নিরপরাধ ব্যক্তি যেন দুর্নীতির মামলায় জড়িয়ে না পড়ে। অন্যদিকে অপরাধী যেই হোক না কেন, তার পদমর্যাদা কোনো অবস্থাতেই দুর্নীতির দায় থেকে পরিত্রাণের মাপকাঠি হবে না। একজন দুর্নীতিবাজ যাতে এই দায় থেকে মুক্তি না পায়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।”

দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রসিকিউশন টিমকে আরও শক্তিশালী করার আহ্বান জানিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা, প্রসিকিউশন ও বিচারকদের মধ্যে যৌথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে দুদককে উদ্যোগ নিতে বলেছেন তিনি।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একামেডিতে অনুষ্ঠিত সভার প্রধান অতিথি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের ধারণকৃত ভিডিও বক্তব্য তুলে ধরা হয়।

দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে দুদক কমিশনার মোজাম্মেল হক খান, জহুরুল হক ও দুদক সচিব মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বক্তব্য দেন।