লক্ষ্যে পৌঁছাতে শিক্ষায় চাই আমূল পরিবর্তন: শিক্ষামন্ত্রী

আজকের বাংলাদেশকে আগামীর কাঙ্ক্ষিত জায়গায় নিয়ে যেতে যে প্রস্তুতি প্রয়োজন, তা নিশ্চিত করতেই শিক্ষায় আমূল পরিবর্তন আনা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Dec 2021, 12:39 PM
Updated : 6 Dec 2021, 06:35 PM

তিনি বলেছেন, যখন প্রয়োজন তখন ছোটখাটো পরিবর্তন আনার পুরনো পদ্ধতিতে এখন আর কাজ হবে না।

সোমবার বিকালে তৌফিক ইমরোজ খালিদী লাইভে অতিথি হয়ে এসেছিলেন দীপু মনি। সরকার প্রাক প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাক্রম ও মূল্যায়ন পদ্ধতিতে যে বড় পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে, সে বিষয়ে খোলামেলা আলোচনায় নানা প্রশ্নের উত্তর তিনি দিয়েছেন। 

এই পরিকল্পনাগুলো সরকার কীভাবে বাস্তবায়ন করবে, এই জটিলতার মধ্যে দিয়ে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা কতটা কীভাবে মানিয়ে নিতে পারবে- সেই প্রশ্নগুলো মন্ত্রীর সামনে রেখেছিলেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী।

উত্তর দিতে গিয়ে দীপু মনি শিক্ষায় এই পরিবর্তন আনার কারণটি ব্যাখ্যা করেন।

তিনি বলেন, জাতীয় পর্যায়ে সরকারের কতগুলো লক্ষ্য আছে। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ডিজটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য ‘পূর্ণ’ হয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে সরকার এগোচ্ছে। ২১০০ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের একটা বদ্বীপ পরিকল্পনাও রয়েছে।

আবার কিছু আন্তর্জাতিক অঙ্গীকারও বাংলাদেশের রয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যগুলো অর্জন করতে হবে। কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর সংখ্যাধিক্যের যে সুবিধার (ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড) কথা বলা হয়, তা কাজে লাগানোর জন্য আর বছর দশেক সময় পাওয়া যাবে। এরই মধ্যে অনেক সময় নানা কারণে নষ্ট হয়ে গেছে।

“এই যে এতগুলো স্বপ্ন আমাদের আছে, লক্ষ্য আছে, আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার আছে, তার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব, তার যে চ্যালেঞ্জ আছে, সেগুলো মোকাবেলা করা। তার সফল অংশীদার হতে হলে আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। এই এতকিছুর জন্য মূল যে জায়গাটিতে আমাদের তৈরি হতে হবে, সেটা হচ্ছে শিক্ষা। মূল হাতিয়ার শিক্ষা।

“কাজেই সেই পরিবর্তনটা, কোনো ছোটখাটো টুকটাক রোজকার– এটা একটু সারিয়ে নিলাম, ওটা একটু পরিবর্তন করলাম, ওই পরিবর্তন দিয়ে আসলে আমাদের কাজ হবে না।… সেই বোধ থেকেই আমাদের সার্বিক এই পরিবর্তন।”

সরকার যে পারিকল্পনা নিয়েছে, তাতে ২০২৫ সাল থেকে পুরোপুরি নতুন শিক্ষাক্রমে পড়বে শিক্ষার্থীরা। ২০২৩ সাল থেকে এটি ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করার আগে আগামী জানুয়ারি থেকেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ২০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিবর্তিত শিক্ষাক্রমের পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হবে।

তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষা না রাখা, এসএসসির আগে কোনো পাবলিক পরীক্ষা না নেওয়া, নবম-দশম শ্রেণিতে বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগের বিভাজন তুলে দেওয়াসহ একগুচ্ছ পরিবর্তনের কথা বলা হচ্ছে সেখানে।

বাংলাদেশের ৫০ বছরের ইতিহাসে এ পর্যন্ত আটটি শিক্ষা কমিশন হলেও কোনো সুপারিশই পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি।

১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার সময় সরকার এক দফা শিক্ষা খাতের সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছিল। ১৯৯৭ সালে একটি শিক্ষানীতি প্রণয়নও হয়েছিল। তার ওপর সংসদে আলোচনা-সমালোচনা হলেও সরকার পরিবর্তনের পর তা চাপা পড়ে যায়।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলেন, এবার ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ শিক্ষাক্রম পরিবর্তনের পরিকল্পনা সাজাতে সময় পেয়েছে। এ ধরনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ১৫ থেকে ২০ বছর সময় লাগে।  

উত্তরে দীপু মনি বলেন, “ওই যে বললাম মনোযোগতে পরিবর্তনের একটা ব্যাপার, মনোযোগতের পরিবর্তন তো খুব দ্রুত হবে না। মানুষের আচরণে কোনো পরিবর্তন যখন আসতে হয়, সেটা কিন্তু অনেক সময়ের ব্যাপার।.. আমরা হয়ত পারপাসটা ঠিক করতে পারি, প্রোগ্রামটা ঠিক করতে পারি, পলিসিটা ঠিক করতে পারি, কিন্তু যে প্র্যাকটিসটা, সেটার জন্যই কিন্তু সময় লাগে।”

পিকেএসএফের চেয়ারম্যান এবং জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ প্রণয়ন কমিটির কো-চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ অনুষ্ঠানে বলেন, “সমস্যাগুলো সবাই জানেন, সবাই বলেন। কিন্তু সমাধানের যে পথটা, সেই পথটা নিয়ে খালি পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছি।

“আমার নিজের বিবেচনায়, যদি আমরা ২০১০ এর শিক্ষানীতি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করতাম, তাহলে এখনকার যে পরিবর্তনগুলা, সেগুলো হত, সেটা একটা ধারাবাহিকতার মধ্যে থাকত এবং একটা শক্ত ভিত্তি আমরা তৈরি করতে পারতাম।”

শিক্ষকরা পারবেন তো?

নতুন শিক্ষাক্রমের মূল্যায়নে একটি বড় অংশ রাখা হয়েছে শ্রেণিকক্ষের শিখনকালীন মূল্যায়নের ওপর, যেটি শিক্ষকরাই করবেন। পরীক্ষার চাপ কমাতে বছর শেষে সামষ্টিক মূল্যায়নের আগে শিক্ষাবর্ষ জুড়ে চলবে শিখনফল মূল্যায়ন।

শিক্ষাব্যবস্থাকে আরও কার্যকর ও বাস্তবভিত্তিক করতে এই পরিবর্তনগুলো প্রত্যাশিত ছিল বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে বড় এই পরিবর্তনের জন্য দেশের শিক্ষাব্যবস্থা কতটা প্রস্তুত, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।

বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) সহকারী অধ্যাপক কাজী কে শহীদুল্লাহ অনুষ্ঠানে বলেন, ১৯৭৪ সালে ড. কুদরাত-এ-খুদা কমিশনের দেওয়া দেশের প্রথম শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন হয়নি তিনটি কারণে।

তার ভাষায়, প্রথম কারণ হল কারিকুলাম বাস্তবায়ন করতে যোগ্য শিক্ষকের ঘাটতি। দ্বিতীয় কারণ, উপযুক্ত শিক্ষা উপকরণের ঘাটতি। তৃতীয় কারণ, শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে মূল্যায়ন পদ্ধতি অভিভাবকদের আস্থা পাননি।

এ বিষয়ে তৌফিক ইমরোজ খালিদীর প্রশ্নে দীপু মনি বলেন, “আমি বিশ্বাস করি। কোথাও কোথাও ভুল-ভ্রান্তি হতে পারে। কোথাও ইচ্ছাকৃত সমস্যা হতে পারে। আগামী বছর থেকে আমরা পাইলটিংয়ে যাব। এর মধ্যে শিক্ষকদের কাজ তো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেই শিক্ষক প্রশিক্ষণের কাজও শুরু হয়েছে।”

কিন্তু সেজন্য লাখ লাখ শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। শিক্ষকদের যথাযথভাবে তৈরি না করে শিখনকালীন মূল্যায়নের বিরাট ভার তাদের ওপর দেওয়া নিয়ে বিশেষজ্ঞদের শঙ্কার কথা তুলে ধরেন তৌফিক ইমরোজ খালিদী।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সে কারণেই তারা পরীক্ষামূলকভাবে শুরুতে ২০০ স্কুলে নতুন নিয়ম চালু করছেন, যাতে ধাপে ধাপে এগিয়ে নেওয়া যায়। 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক গৌতম রায় অনুষ্ঠানে বলেন, ক্ষমতাশীলদের চাপে শিক্ষকরা সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে পারবেন কিনা, নাকি তাদের ওপর চাপ থাকবে? কম নম্বর দিয়ে শিক্ষকরা পার পাবেন কিনা। ব্যবহারিক পরীক্ষায় ‘ক্ষমতার চর্চা’ দেখা যায়। শিক্ষককে স্বাধীনভাবে নম্বর দেওয়ার জন্য বিদ্যালয়গুলোকে প্রস্তুত করতে হবে।

“একজন শিক্ষক সারা বছর ধরে শিক্ষার্থীদেরকে আসলে মূল্যায়ন করার মতো পর্যাপ্ত সময় এবং পর্যাপ্ত মনোযোগ দিতে পারবেন কি-না, সে জায়গা থেকে আমরা একটা সন্দেহ আছে।”

অভিভাবক সালেক খোকন প্রশ্ন রাখেন, নগরের একজন শিক্ষক আর চরাঞ্চলের একজন শিক্ষক, কাকে কতটুকু প্রশিক্ষিত করা যাবে। অথবা শিক্ষকরা নির্মোহভাবে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে মূল্যায়ন করবেন কি-না। এ বিষয়গুলো সরকার কীভাবে দেখছে।

বিষয়গুলো নিয়ে তৌফিক ইমরোজ খালিদীর প্রশ্নে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “বহু দিনের জমে থাকা সব সমস্যাকে আপনি একটা উপায়ে বন্ধ করতে পারবেন না। আপনি এই শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করতে গেলে মনোজগতেও অনেক পরিবর্তন আনতে হবে। সেখানে অভিভাবকদেরও বড় ভূমিকা আছে।

“এই যে আপনি বললেন, অসততার প্রশ্ন আছে। সমাজের কোথাও কোথাও অসততা আছে। সে কারণে আমি ভালো কিছু চেষ্টা করব না, তা তো নয়। শিক্ষকের ওপর বিশ্বাস আর আস্থা রেখেই আমরা কোটি কোটি বাচ্চাকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠাচ্ছি। আজকেও সে বিশ্বাস নিয়ে পাঠাচ্ছি। তাহলে কালকে নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে কেন পাঠাব না?”

তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলেন, সরকারি চাকরির বেতন কাঠামোতে শিক্ষকদের যে জায়গায় রাখা হয়েছে, সেটা খুবই অসম্মানজনক। যুক্তরাজ্যে প্রাথমিকের শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চেয়েও বেশি বেতন পান। সরকার সিভিল সার্ভিসে সংস্কার আনবে কি না। 

উত্তরে মন্ত্রী বলেন, শিক্ষকদের মানোন্নয়ন করতে হলে তাদের সম্মান আর আর্থিক নিরাপত্তা দুটোই নিশ্চিত করা জরুরি বলে তিনি মনে করেন। যেসব দেশ শিক্ষায় ভালো করেছে, সেখানেই কাঠামোটা সেরকম। সেই কাঠামোগত পরিবর্তনটাই আনতে হবে।  

“শিক্ষকের আর্থিক নিরপত্তার জায়গাটা যদি বাড়াতে পারি, তার সামাজিক অবস্থান বাড়াতে পারি, এবং তার সঙ্গে আজকে যে পদ্ধতিতে শিক্ষায় যাবার চেষ্টা করছি, সেটায় যদি কিছুটা আমি এগোতে পারি, শিক্ষকের প্রতি কিন্তু এমনিতেই…” 

সামগ্রিক পরিবর্তন

নতুন শিক্ষাক্রমে একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির পরে দুটো পাবলিক পরীক্ষা হবে। বর্তমান সময়ের মত হলে এক বছরের মধ্যে একাদশে সিলেবাস শেষ করতে পারা নিয়ে আশঙ্কায় আছেন শিক্ষক-অভিভাবকরা।

সেইন্ট যোসেফ স্কুলের শিক্ষক মোহাম্মদ হুমায়ূন কবীর অনুষ্ঠানে বলেন, “একাদশ শ্রেণির পরে যখনই পাবলিক পরীক্ষা নিতে যাবে, আমি একজন শিক্ষক হিসাবে মনে করি, এই জায়গায় কোনোভাবেই পরিপূর্ণভাবে কলেজের পক্ষে সিলেবাসটা শেষ করা সম্ভব হবে না।”

তার বক্তব্যের দিকে ইঙ্গিত করে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, “এখনও আমার কারিগরিতে কিন্তু একাদশ শ্রেণি শেষ করে একটা পাবলিক পরীক্ষা হয়। দ্বাদশ শ্রেণি শেষ করে আরেকটি পাবলিক পরীক্ষা হয়।

”যখন যে নিয়ম হবে, যখন যে সিস্টেম হবে সেই সিস্টেমের মধ্যেই চলবে। কাজেই একাদশ শ্রেণির সিলেবাসতো একাদশ শ্রেণির মধ্যে শেষ করা যায় তেমন সিলেবাসই হবে। শেষ করতে না পারার কারণটা উঠছে কেন?”

এখন যেমন নবম শ্রেণিতে ওঠার পর শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান, মানবিক আর বাণিজ্য বিভাগে ভাগ হয়ে যায়, সামনে তা হবে উচ্চ মাধ্যমিকে গিয়ে।

এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রীর যুক্তি, শিক্ষার্থীরা আগে থেকে সবগুলো বিষয় পড়ে আসবে। এরপর দশমের পরে একাদশে যাবে।

“যে বিষয়গুলো ছাত্র-ছাত্রীরা পড়ে এসেছে এবং সে জানে যে, আমি এই বিষয়টা পছন্দ করছি, আমি এটা অতো বেশি পছন্দ করছি না। তখন তার জন্য বেছে নেওয়া সহজ হবে।”

দীপু মনি বলেন, “যে পরিবর্তনটা আসছে, সেটা কিন্তু একটা সামগ্রিক পরিবর্তন। আমরা ইতোমধ্যে শুরু করেছি, ক্লাসে যে রোল নম্বর, এখন কিন্তু সেটাও উঠে যাচ্ছে।

“কেউ হয়ত চাইলেন, তার সন্তান ক্লাসে সবচেয়ে ভাল করবেন। ক্ষমতার এটা চর্চা। এখন সেটাও উঠে যাচ্ছে। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর একটি ইউনিক কোড থাকবে। যাতে ক্লাসে যে প্রথম হচ্ছে, সেই প্রথম বেঞ্চে বসছেন, বাকিদের দিকে শিক্ষক নজর দিচ্ছেন না, এটা যেন না হয়। একই সঙ্গে আমরা ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে সবচাইতে মেধাবী শিক্ষার্থীদের ভর্তি করাচ্ছি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। সেটা যাতে না হয়, সেজন্য আমরা লটারির মাধ্যমে ভর্তি করছি।”

নটরডেম কলেজের অধ্যক্ষ হেমন্ত পিউস রোজারিও বড় বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্লাসরুমে শিক্ষার্থীর সংখ্যা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন অনুষ্ঠানে।

তিনি বলেন, “আমাদের দেশে সীমাবদ্ধতা আছে, বিশেষ করে বড় বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে, ক্লাসের সাইজ অনেক বড়, একজন শিক্ষকের পক্ষে একশর উপরে শিক্ষার্থীকে মূল্যায়ন করা সহজ হবে না। আরেকটা বিষয় আছে, এটার উপরে যদি তার মেধা যাচাই করা হয়, তাহলে আমাদের শিক্ষকদের জন্য অনেক প্রশিক্ষণের দরকার।”

এ প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “উনি যে ক্লাস সাইজ নিয়ে কথা বললেন, সেটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সেটার সাথে শিক্ষার মানেরও সম্পর্ক রয়েছে। যদিও আজকাল ভিন্ন রকমের স্কুল অব থটও রয়েছে। কিন্তু যেসব দেশে শিক্ষার মান অত্যন্ত উন্নত, সেখানে যে তিনটি বিষয় ধরা হয়, সেটির একটি হচ্ছে ক্লাস সাইজ। পরীক্ষার চাপ কম এবং যেখানে শিক্ষকের মর্যাদা রয়েছে।”

অনুষ্ঠানে তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলেন, “ক্লাসে শিক্ষক ও ছাত্রের যোগাযোগটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিছু স্কুলে আমি দেখেছি, প্রতিটা ছাত্রের সবকিছু শিক্ষকরা জানেন, চেনেন। সে অনুযায়ী তাদের পড়ান।”

শিক্ষামন্ত্রী এসময় বলেন, “আমাদের ক্লাসগুলোতে যখন ৫০/৬০ জন করে ছিল, তখন শিক্ষকরা জানতেন। কোথায় বেশি শিক্ষার্থী আছে? সেই প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশেষ করে যেই প্রতিষ্ঠানে প্রতিযোগিতা করে প্রায় জোর করে কখনও কখনও অনৈতিক পদ্ধতির মাধ্যমে ভর্তি করায়।”

কোচিং সেন্টার বন্ধ হবে?

তৌফিক ইমরোজ খালিদী অনুষ্ঠানে জানতে চান, প্রাইভেট টিউশন নিয়ে যে সমস্যা ও অভিযোগ আছে, তার সমাধান কীভাবে করা হবে।

জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “যেটাকে আমরা কোচিং বাণিজ্য বলছি… বাণিজ্য কথাটা খারাপ না, কোচিং কথাটাও খারাপ না। কোচিং বাণিজ্য যখন হয়ে যায়…।”

তার কথার সূত্রে তৌফিক ইমরোজ খালিদী জানতে চান, ক্লাসে না পড়িয়ে বাইরে কোচিং বন্ধ করা হবে কি না।

শিক্ষামন্ত্রী উত্তর দেন, “আমরাতো সেটা বন্ধ করবার চেষ্টা করছি। এবং নতুন করে শিক্ষা আইন করবার পথে আছি আমরা, সেই শিক্ষা আইন এলে এটা হয়ত অনেকটা দূরীভূত হবে।

”তারপরও কিন্তু বহু দিনকার জমে থাকা অনেক ধরনের সমস্যা, সব সমস্যাকে আপনি একটা জিনিস দিয়ে, একটি উপায় দিয়ে বন্ধ করতে পারবেন না।”

অন্যদের মধ্যে সাবেক শিক্ষা সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, ইউনিভার্সিটি অব নিউ অরলিয়েন্সের এমিরেটাস অধ্যাপক মোস্তফা সারওয়ার, ইউনিসেফ বাংলাদেশের ইকবাল হোসেন, এডুকেশন স্পেশালিস্ট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমান অনুষ্ঠানে ভিডিও বক্তব্য দেন।