এক ধর্মের শিশু অন্য ধর্মও জানবে? মন্ত্রী বললেন আশার কথা

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, শিক্ষার্থীরা যখন ধর্মশিক্ষা পড়বে, অন্য ধর্মের কথাও তাদের জানা দরকার, যাতে জানাবোঝার ঘাটতি থেকে নেতিবাচক ধারণা তার মধ্যে তৈরি না হয়।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Dec 2021, 11:13 AM
Updated : 6 Dec 2021, 02:32 PM

আর সরকার যখন স্কুল-কলেজের শিক্ষাক্রমে বড় ধরনের পরিবর্তন আনছে, তখন এ বিষয়টিও পাঠ্যক্রমে থাকবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করছেন।

শিক্ষাক্রমের পরিবর্তন নিয়ে সোমবার বিকালে তৌফিক ইমরোজ খালিদী লাইভে অতিথি হয়ে এসেছিলেন দীপু মনি।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী তার কাছে জানতে চান, “চতুর্থ থেকে অষ্টম এই পাঁচ বছরে আপনারা ধর্মশিক্ষা, ভালো থাকা, শিল্প এবং সংস্কৃতি পাঠ্যক্রমে যুক্ত করছেন। যিনি ইসলাম ধর্মাবলম্বী, তিনি ইসলাম ধর্ম পড়বেন, যারা খ্রিস্টান ধর্মের, তারা খ্রিস্টান ধর্ম নিয়ে পড়বেন। যারা হিন্দু ধর্মের তারা তার ধর্ম নিয়ে পড়বেন। তাইতো?

জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “একটা হল, ধর্মের যে মূল জায়গাটা। সেটা হলো ধর্মের বোধ ও নৈতিকতাবোধ। আমরা কিন্তু জোর দিতে চাচ্ছি সেই নৈতিকতাবোধের জায়গাটাতে। সকল ধর্ম কিন্তু সেই ভালো কথা বলছে। সেই জায়গাটিতে এবং যার যার ধর্ম পালনের যে জায়গাটুকু আছে, সেটাও হয়তো, ধর্মীয় শিক্ষার কিছুটাতো থাকবে। মূল জায়গাটা হলো নৈতিকতা।”

তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলেন, “ধর্ম নৈতিকতা শেখায়। সেটা বলা যেতে পারে ধর্মের প্রধান বা প্রথম বৈশিষ্ট্য। বা প্রধান ইতিবাচক দিক। কিন্তু পরমতসহিষ্ণুতা যেটা আপনারা সমাজে প্রমোট করতে চান, সেটার জন্যে আপনার কী মনে হয় না, সবারই কম বেশি অন্য ধর্ম সম্পর্কে জানা উচিত? সেটা কী করবেন আপনারা?

জবাবে শিক্ষামন্ত্রীর বলেন, “অবশ্যই। আমিতো চাই… আমিতো আশা করছি সেটা করা হবে। প্রত্যেকটি ছাত্র-ছাত্রীকে অন্য ধর্ম সম্পর্কেও জানতে হবে। একটা হচ্ছে, নিজের ধর্ম চর্চা, সেটা একটা জায়গা। আরেকটা হচ্ছে, ধর্মীয় শিক্ষা।

“কোন ধর্ম কী বলছে, এ কথাটা যদি আমরা না শিখে বড় হই তাহলে কিন্তু আমাদের ওই যে এক ধর্মের আরেক ধর্ম… আমরা কখন একজনের সঙ্গে আরেকজনের সম্পর্কে নেতিবাচক দিক চলে আসে… কখনো কখনো সহিংসতাও চলে আসে। সেটা হচ্ছে না জানার কারণে, না বোঝার কারণে।

সেজন্য ‘জানা-বোঝার জায়গা’ তৈরির ওপর গুরুত্ব দিয়ে মন্ত্রী বলেন, “আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের স্পেস তৈরি করা, সেটাতো খুব দরকার। আমরা যেন বাচ্চাদের না শেখাই যে ও ভিন্ন ধর্মের, তার মানে হচ্ছে- ও ভিন্ন। তা যেন না হয়। ধর্মটা পুরো ব্যক্তির একটা অংশ।”

আলোচনার এক পর্যায়ে তৌফিক ইমরোজ খালিদী প্রশ্ন করেন: “যতটা ইতোমধ্যে হয়ে গেছে আমাদের সমাজে, বিভিন্ন রকম বিভাজন তৈরি হয়েছে। ধর্ম নিয়ে বিভাজন তৈরি হয়েছে। ঘৃণা ছড়ান হয়েছে। এগুলোকে রোলব্যাক করতে, মুছে ফেলতে, এই বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে এই মানুষগুলোর মানসিক পরিবর্তন করতে, অনেক কাজ করতে হবে। প্রস্তুত আপনারা?”

দীপু মনি বলেন, “নিশ্চয় করতে হবে। আমরা মনে করি আমরা এই প্রস্তুতিটা নিয়েই আমরা নেমেছি। করতে হবে।”

তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলেন, “সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গেলে দেখা যায় কী পরিমাণ লোক ওই ধরনের মানসিকতা ধারণ করেন। কতটা অশ্লীল গালিগালাজ করেন, কারণে-অকারণে। শুধু আরেক ব্যক্তি ভিন্ন ধর্মের হওয়ার কারণে। রাজনৈতিকভাবে ভিন্নমতের হওয়ার কারণে।”

দীপু মনি বলেন, “নিশ্চয়। এবং সেটার শিকার আমরা সকলেই কোনো না কোনভাবে হয়েছি, হই। কিন্তু সেটা মনে করে কী আমি থেমে থাকব?

২০২৫ সাল থেকে পুরোপুরি নতুন শিক্ষাক্রমে পড়বে শিক্ষার্থীরা। ২০২৩ সাল থেকে এটি ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করার আগে আসছে জানুয়ারিতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ২০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিবর্তিত শিক্ষাক্রমের পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হবে।

তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষা না রাখা, এসএসসির আগে কোনো পাবলিক পরীক্ষা না নেওয়া, নবম-দশম শ্রেণিতে বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগের বিভাজন তুলে দেওয়াসহ একগুচ্ছ পরিবর্তনের কথা বলা হচ্ছে সেখানে।

এছাড়া পরীক্ষার চাপ কমাতে বছর শেষে সামষ্টিক মূল্যায়নের আগে শিক্ষাবর্ষ জুড়ে চলবে শিখনফল মূল্যায়ন।

শিক্ষাব্যবস্থাকে আরও কার্যকর ও বাস্তবভিত্তিক করতে এই পরিবর্তনগুলো প্রত্যাশিত ছিল বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে বড় এই পরিবর্তনের জন্য দেশের শিক্ষাব্যবস্থা কতটা প্রস্তুত, তা নিয়ে তাদের সংশয় আছে।

সরকার অবশ্য একে পরীক্ষা, বিষয়বস্তু ও পাঠ্যপুস্তকের চাপ কমিয়ে শিক্ষার্থীদের মুখস্ত নির্ভরতা থেকে বের করে অভিজ্ঞতা ও কার্যক্রমভিত্তিক শেখার মাধ্যমে পাঠচক্রকে ‘আনন্দময় করার উদ্যোগ’ বলছে।