শীতের আগে বৃষ্টিতে ভিজে একাকার

বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের কারণে দু’দিন মেঘে ঢাকা ছিল আকাশ, আর রোববার রাত থেকে শুরু হল টানা বৃষ্টি।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Dec 2021, 08:53 AM
Updated : 6 Dec 2021, 08:54 AM

চট্টগ্রাম নগরবাসীকে বর্ষা শেষে তুলে রাখা ছাতা আর রেইন কোট নিয়ে তাই সোমবার নামতে হয়েছিল পথে। ঝুম বৃষ্টিতে শরীর-মাথা ঢেকে ছুটতে হয়েছে গন্তব্যে।

আবহাওয়া অফিস বলছে, এমন বৃষ্টি সোমবার দিনভরের পর মঙ্গলবারও চলতে পারে। কমবে রাতের তাপমাত্রা।

অগ্রহায়নের বৃষ্টি ভোগান্তির কারণ হয়েছে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের। সকালে পদার্থবিদ্যা দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষায় অংশ নিতে বৃষ্টি মাথায় করে ছুটেছেন পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। পরীক্ষা শেষেও ছিল বৃষ্টির দাপট।

সাইফুল আলম নামের এক পরীক্ষার্থী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বৃষ্টির কারণে রাস্তায় গাড়ি পেতে বেশি সময় লেগেছে। দিনের বেলাতেও পরীক্ষার হলে বাতি জ্বেলে পরীক্ষা দিতে হয়েছে।”

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ নাথ বলছেন, দুয়েকটি কেন্দ্রে আলোর স্বল্পতা থাকলেও কেন্দ্রগুলো নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় তা মিটিয়েছে। পরীক্ষা গ্রহণে কোনো সমস্যা হয়নি।

পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শেষ ২৪ ঘণ্টায় ৩৪ দশমিক এক মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

শনি ও রোববার চট্টগ্রামের আকাশে মাঝে মধ্যে সূর্য উঁকি দিলেও তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। রোববার দিনে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিও হয় কয়েকবার। রাত দেড়টার পর থেকে বৃষ্টি শুরু হয়। রাত বাড়ার সঙ্গে বাড়তে থাকে বৃষ্টির বেগও।

সোমবার সকাল ৬টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত ছয় ঘণ্টায় ২৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসে।

অসময়ের এ বৃষ্টিতে নগরীতে ভাসমান ও স্বল্প আয়ের মানুষেরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। কিছু কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতাও সৃষ্টি হয়েছে।

নগরীর মোমিন রোডে রিকশাভ্যানে প্রতিদিন সবজি বিক্রি করেন আবুল কালাম। তিনি বলেন, “আজকে কাস্টমার কম। বৃষ্টির মইধ্যে কোথাও দাঁড়াইতেও পারতেছি না। বেচাবিক্রি নাই।”

এদিকে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় জমিতে আমন ধান কাটার মওসুম চলছে। পাশাপাশি যেসব জমিতে ধান কাটা শেষ সেখানে রবি শস্য লাগানোর কাজ চলছে। বৃষ্টি তাতেও বাগড়া দিয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক মো. আখতারুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এবার জেলায় এক লাখ ৮০ হাজার ৫০০ একর জমিতে আমনের চাষ হয়েছে। এরমধ্যে ৭০ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়ে গেছে। যে ৩০ শতাংশ বাকি তার বেশিরভাগই দক্ষিণ চট্টগ্রামে।

“উত্তর চট্টগ্রামে প্রায় সব ধানই উঠে গেছে। এই বৃষ্টিতে অল্প কিছু ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বীজ রাখার সমস্যা হবে। খড়েরও কিছু ক্ষতি হবে। সবাইকে বলেছি, ধান যেন দ্রুত কেটে ফেলে। কিন্তু শ্রমিক স্বল্পতা এবং এ অঞ্চলে আমন ধান জমিতে একটু শুকিয়ে কাটার প্রবণতার কারণে কিছু ধান কাটা বাকি রয়ে গেছে।”

আখতারুজ্জামান বলেন, “রবি শস্য যা ইতোমধ্যে লাগানো হয়েছে এই বৃষ্টিতে সেগুলোর উপকার হবে। যা লাগানো বাকি আছে তা লাগাতে কিছুটা বিলম্ব হয়ে যাবে। কারণ বৃষ্টিতে জমি ভিজে গেছে। তবে মাটি সিক্ত থাকায় লাগানোর পর দ্রুত বাড়বে।”

আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাষ বার্তায় বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় জোয়াদ উপকূলে আসার আগের শক্তি হারিয়ে লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিম ও সংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগরে সুষ্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়ে সোমবার সকাল ছয়টায় উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূলীয় এলাকায় অবস্থান করছে।

একারণে চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরণের বৃষ্টি অথবা বজ্রপাতসহ বৃষ্টি হতে পারে।

উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়া অব্যাহত থাকায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরগুলোকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।