রোববার মিরপুরের দারুস সালাম সড়কে বাঙলা কলেজের সামনে ওই যুবকরা টাকা না দিয়ে পণ্য নিতে চেয়েছিল বলে টিসিবির এক ডিলার অভিযোগ করেছেন।
ঢাকায় এদিন ৮৪টি ট্রাক টিসিবির পণ্য নিয়ে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়েছিল। তার মধ্যে ডিলার মমতাজ এন্টারপ্রাইজের মোহাম্মদ কাঞ্চনের ট্রাক সকালে দাঁড়িয়েছিল বাঙলা কলেজের সামনে।
কাঞ্চন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সকালে তিনি ট্রাক নিয়ে দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ৪/৫ জনের একটি দল তার কাছে প্যাকেটভর্তি পণ্য চায়।
“ওরা আইসা বলে- ‘প্যাকেট দিবি, নইলে এখানে গাড়ি দাঁড়াতে দেব না’। ওরা একটা প্যাকেট চাইছিল।”
পরে টিসিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে ওই যুবকদের সরানো হয়।
টিসিবির জনসংযোগ বিভাগের কর্মকর্তা হুমায়ুন আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জিজ্ঞাসায় বাঙলা কলেজের সামনে টিসিবির ট্রাক ‘বাধাপ্রাপ্ত’ হওয়ার ঘটনাটি স্বীকার করেন।
তবে কারা বাধা দিয়েছিল, তাদের নাম তিনি বলতে পারেননি।
বাধা দিয়েছিল কারা- জানতে চাইলে ডিলার কাঞ্চন বলেন, “ওরা বাঙলা কলেজের ছাত্রলীগের নেতা পরিচয় দিছে, কিন্তু নাম বলে নাই।”
বাঙলা কলেজে ছাত্রলীগের কমিটি বর্তমানে নেই। ফলে এ বিষয়ে সংগঠনটির কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
দারুস সালাম থানার ওসি তোফায়েল আহমেদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তাদের কাছে কেউ এ সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ করেনি। ফলে তিনি বিষয়টি জানেনও না।
এক সপ্তাহ পর টিসিবির ট্রাক
এক সপ্তাহ বিরতি দিয়ে ঢাকাসহ সারাদেশে আবার শুরু হয়েছে রাষ্ট্রীয় বিপণন সংস্থা টিসিবির ভর্তুকি মূল্যে মাসব্যাপী পণ্য বিপণন।
রোববার ঢাকায় ৮৪টিসহ সারাদেশে মোট ৩৯২টি ট্রাক রাস্তায় নেমেছিল। আর নিত্যপণ্যের বাজার দরের ঊর্ধ্বগতিতে বৃষ্টির মধ্যেও এই ট্রাকগুলো ঘিরে ছিল ভিড়।
দুপুরে ঢাকার আগারগাঁও মোড়ে টিসিবির ট্রাক ঘিরে ক্রেতাদের l দীর্ঘ সারি দেখা যায়। এতে নিম্ন আয়ের মানুষের পাশাপাশি অপেক্ষাকৃত স্বচ্ছল অনেককে দেখা গেছে। অনেকেই ব্যক্তিগত মোটরসাইকেল রাস্তার পাশে দাঁড় করিয়ে রেখে পণ্য কেনার লাইনে ছিলেন।
মনির হোসেন নামের একজনকে দেখা গেল ১০ মিনিট লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনে রিকশায় চড়ে বাড়ি ফিরতে।
টিসিবির ট্রাক থেকে এক ক্রেতা ৫৫ টাকা কেজি দরে সর্বোচ্চ ২ কেজি চিনি, ৬০ টাকা কেজি দরে ২ কেজি মসুর ডাল, ১১০ টাকা লিটার দরে দুই লিটার সয়াবিন তেল, ৩০ টাকা কেজি দরে ২ কেজি থেকে সর্বোচ্চ ৫ কেজি পেঁয়াজ কিনতে পারছেন।
যেখানে বাজারে এখন প্রতি কেজি মসুর ডাল ১০০ টাকা থেকে ১২০ টাকা, চিনি প্রতি কেজি ৮০ টাকা, সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৬০ টাকা, পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৫৫ টাকা।
সেই হিসাবে টিসিবির এসব পণ্য মিলিয়ে এক প্যাকেট কিনলে একজন ক্রেতার কমপক্ষে আড়াইশ টাকা সাশ্রয় হয়।
মনিরসহ অধিকাংশ ক্রেতাকেই দেখা গেছে সর্বোচ্চ পরিমাণ পণ্য কিনতে।
এতক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনে অর্থ সাশ্রয়ের পর রিকশা ভাড়া করে বাড়ি ফিরলে খরচ পোষাবে তো?
প্রশ্ন করা হলে ক্রেতা মনির মুচকি হেসে বলেন, “পোষাবে, পোষাবে। আমার বাসা ভাঙা ব্রিজের ওই পারে। আসা-যাওয়া ১০০ টাকা রিকশা ভাড়া।”
আগারগাঁও ন্যাশনাল নিউরোসায়েন্স ইনস্টিটিউটের সামনের সড়কে টিসিবির ওই ট্রাকটি থেকে আরও অনেক ক্রেতাকে দেখা গেল পণ্য কিনে রিকশায় চড়ে বাসায় ফিরতে।
টিসিবির ট্রাককে ঘিরে ছিল অনেক ক্রেতার মোটরসাইকেলের জটলা। সকালে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় অনেককেই মাথায় ছাড়া ধরে লাইনে দাঁড়াতে হয়েছিল।
বিক্রেতা দেলোয়ার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এক সপ্তাহ পর পণ্য নিয়ে আসলাম। এক ঘণ্টার মধ্যে ট্রাক খালি হয়ে যাওয়ার অবস্থা। আজ মনে হচ্ছে দুই ঘণ্টার মধ্যে বাড়ি ফিরতে পারব।”
ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিনে সারাদেশে প্রায় ৪০০ ট্রাক নেমেছে জানিয়ে টিসিবির জনসংযোগ বিভাগের কর্মকর্তা হুমায়ুন বলেন, ~কাল-পরশুর মধ্যে সাড়ে ৪০০ ট্রাক টিসিবির পণ্য নিয়ে রাস্তায় নামবে।“