মহামারীকালের প্রথম এইচএসসিতে বসেছে ১৪ লাখ শিক্ষার্থী

করোনাভাইরাসের মহামারীর কারণে গতবছর পরীক্ষাই নেওয়া যায়নি; এবছর দ্বাদশ শ্রেণি পার করা প্রায় ১৪ লাখ শিক্ষার্থী মুখে মাস্ক পরে উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় বসল নির্ধারিত সময়ের আট মাস পর।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Dec 2021, 04:06 AM
Updated : 2 Dec 2021, 05:21 AM

বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় বিজ্ঞান বিভাগের পদার্থবিজ্ঞান প্রথম পত্রের পরীক্ষার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা।

এবার যারা এ পরীক্ষায় বসেছে, মহামারীর কারণে তাদের সশরীরে ক্লাস করার সুযোগ কমই হয়েছে। নতুন বাস্তবতায় এবারের পরীক্ষা হচ্ছে নতুন নিয়মে।   

আগের মত ১২টি বিষয়ের পরীক্ষা এবার শিক্ষার্থীদের দিতে হবে না। সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে গ্রুপভিত্তিক তিনটি নৈর্বচনিক বিষয়ে ছয়টি পত্রের পরীক্ষা দিতে হবে তাদের। তিন ঘণ্টার বদলে পরীক্ষায় সময় থাকবে দেড় ঘণ্টা।

বাংলা, ইংরেজির মত আবশ্যিক বিষয়গুলোতে এবার পরীক্ষা না নিয়ে আগের পাবলিক পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হবে।

মহামারীর কারণে এবার পরীক্ষাকেন্দ্রে স্বাস্থ্যবিধির কড়াকড়িও রয়েছে। কেবল প্রবেশপত্র দেখালেই হয়নি, তাপমাত্রা মাপার পরীক্ষা পেরিয়ে সবাইকে কেন্দ্রে ঢুকতে হয়েছে। কেন্দ্রের ফটকেই রাখা হয়েছে হাত জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা। আছে আইসোলেশন রুমও।

কেন্দ্র এলাকায় অভিভাবকদের বাড়তি চাপ নিয়ন্ত্রণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পরীক্ষা চলাকালে পরীক্ষার্থী ও কেন্দ্রের কর্মী ছাড়া অন্য কাউকে পরীক্ষা কেন্দ্রের ২০০ গজের ভেতরে প্রবেশ করতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ।

গত বছর করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর আগেই এসএসসি পরীক্ষা শেষ হয়। এরপর ১ এপ্রিল থেকে এইচএসসি পরীক্ষা শুরুর কথা থাকলেও মহামারীর কারণে ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শেষ পর্যন্ত এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি।

জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলের গড় করে শিক্ষার্থীদের এইচএসসির মূল্যায়ন ফল প্রকাশ করা হয় এ বছর জানুয়ারিতে।

বছরের মাঝামাঝি সময়ে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির কারণে এবারের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত সংক্রমণ কমে আসায় গত ১৪ নভেম্বর শুরু হয় এসএসসি পরীক্ষা।

>> ৯ হাজার ১৮৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১৩ লাখ ৯৯ হাজার ৬৯০ জন শিক্ষার্থী এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। পরীক্ষা হচ্ছে ২ হাজার ৬২১টি কেন্দ্রে।

>> নয়টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসিতে পরীক্ষার্থী এবার ১১ লাখ ৩৮ হাজার ১৭ জন। ১ লাখ ১৩ হাজার ১৪৪ জন মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে আলিম এবং ১ লাখ ৪৮ হাজার ৫০৩ জন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে বিএম ও ভোকেশনাল পরীক্ষায় বসছে।

>> নয়টি সাধারণ শিক্ষাবোর্ড থেকে ২ লাখ ৫৪ হাজার ৮৩০ জন বিজ্ঞান বিভাগ থেকে, ৬ লাখ ৫৬ হাজার ১৩২ জন মানবিক বিভাগ থেকে এবং ২ লাখ ২৭ হাজার ৫৫ জন বাণিজ্য বিভাগ থেকে পরীক্ষা দিচ্ছে।

>> ২০২০ সালের তুলনায় এ বছর এসএসসিতে পরীক্ষার্থী বেড়েছে ৩৩ হাজার ৯০১ জন বা ২ দশমিক ৪৮ শতাংশ।

>> এ বছর দেশের বাইরে ৮টি কেন্দ্রে (জেদ্দা, রিয়াদ, ত্রিপলী, দোহা, আবুধাবী, দুবাই, বাহরাইন ও ওমানের সাহাম) ৪০৬ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষা দেবে।

বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষার্থীদের ১৫ মিনিটে ২৫টির এমসিকিউ প্রশ্নের মধ্যে ১২টির উত্তর দিতে হবে। আর সোয়া ১ ঘণ্টায় তত্ত্বীয় পরীক্ষায় আটটি প্রশ্নের মধ্যে দুটির উত্তর দিতে হবে।

মানবিক ও ব্যবসায় শাখার পরীক্ষার্থীদের ১৫ মিনিটে ৩০টি এমসিকিউ প্রশ্নের মধ্যে ১৫টির উত্তর দিতে হবে। তত্ত্বীয় পরীক্ষায় ১১টি প্রশ্নের মধ্যে ৩টির উত্তর দিতে হবে সোয়া ১ ঘণ্টার মধ্যে।

এইচএসসি পরীক্ষার জন্য ২৫ নভেম্বর থেকে ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত কোচিং সেন্টার বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। যদিও সেগুলোর বেশিরভাগই খোলা থাকতে দেখা যায়।

মানতে হবে যেসব নিয়ম

পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানে পরীক্ষার্থী ও দায়িত্বশীলদের কিছু নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

>> পরীক্ষা শুরুর কমপক্ষে ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করে আসন গ্রহণ করতে হবে।

>> ‘অনিবার্য কারণে’ কোনো পরীক্ষার্থীকে এর পরেও হলে প্রবেশ করতে দিলে তাদের নাম, রোল নম্বর, প্রবেশের সময়, বিলম্ব হওয়ার কারণ একটি রেজিস্ট্রারে উল্লেখ করে ওই দিনই শিক্ষা বোর্ডে প্রতিবেদন পাঠাতে হবে।

>> দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, সেরিব্রাল পালসিজনিত প্রতিবন্ধী এবং যাদের হাত নেই এমন প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থী শ্ৰুতি লেখক সঙ্গে নিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে। এ ধরনের পরীক্ষার্থী এবং শ্রবণ প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীরা অতিরিক্ত ১০ মিনিট সময় পাবে।

>> প্রতিবন্ধী (অটিস্টিক, ডাউন সিনড্রোম, সেরিব্রাল পালসি) পরীক্ষার্থীরা অতিরিক্ত ২০ মিনিট সময় পাবে। শিক্ষক/অভিভাবক/সাহায্যকারীর বিশেষ সহায়তায় তাদের পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ থাকবে।

>> কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছাড়া অন্য কেউ মোবাইল ফোন বা ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। শুধু কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছবি তোলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধাহীন একটি সাধারণ মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন।

>> ট্রেজারি থেকে প্রশ্নপত্র গ্রহণ ও পরিবহন কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা, শিক্ষক, কর্মচারীরা কোনো ফোন ব্যবহার করতে পারবেন না ও প্রশ্নপত্র বহনের কাজে কালো কাচযুক্ত মাইক্রোবাস বা এ ধরণের কোন যানবাহন ব্যবহার করা যাবে না।

>> প্রত্যেক কেন্দ্রের জন্য একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিতে হবে। ট্রেজারি থেকে কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রশ্নপত্র গ্রহণ করে পুলিশ পাহারায় কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতি ছাড়া প্রশ্ন বের করা যাবে না বা বহন করা যাবে না।

>> ট্রেজারি থেকে নির্দিষ্ট তারিখের পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সকল সেট কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে।

>> ট্রেজারি থেকে প্রশ্নপত্র কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়ার জন্য নির্ধারিত কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে; প্রশ্নের সেট কোড পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিটি আগে জানানো হবে। সে অনুযায়ী নির্ধারিত সেট কোডে পরীক্ষা নিতে হবে।

>> কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও পুলিশ কর্মকর্তার উপস্থিতি ও স্বাক্ষরে বিধি অনুযায়ী প্রশ্নপত্রের প্যাকেট খুলতে হবে।

>> পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউ কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবে না।

>> অনিবার্য কারণে কোনো পরীক্ষা দেরিতে শুরু করতে হলে যত মিনিট পরে পরীক্ষা শুরু হবে পরীক্ষার্থীদের সে সময় থেকে যথারীতি প্রশ্নপত্রে উল্লেখিত নির্ধারিত সময় দিতে হবে।

>> করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।

>> একজনের বেশি অভিভাবক পরীক্ষার্থীর সঙ্গে কেন্দ্রে আসতে পারবে না।

>> পরীক্ষার্থী উত্তরপত্রের ওএমআর ফরমে তার রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর, বিষয় কোড ইত্যাদি যথাযথভাবে লিখে বৃত্ত ভরাট করবে। কোন অবস্থাতেই উত্তরপত্র ভাঁজ করা যাবে না।

>> প্রত্যেক পরীক্ষার্থী কেবল রেজিস্ট্রেশন ও প্রবেশপত্রে উল্লেখিত বিষয়ের পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে। কোন অবস্থাতেই ভিন্ন বিষয়ের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে না।

>> পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষায় সাধারণ সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেটর ব্যবহার করতে পারবে। প্রোগ্রামিং ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা যাবে না।

>> সৃজনশীল বা রচনামূলক (তত্ত্বীয়) ও বহুনির্বাচনী পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীর উপস্থিতির জন্য একই উপস্থিতিপত্র ব্যবহার করতে হবে।