অবৈধ সম্পদ: পাপিয়া-সুমনের বিচার শুরু

অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান সুমনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছে আদালত।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Nov 2021, 11:05 AM
Updated : 22 Dec 2021, 10:34 AM

সোমবার ঢাকার ৩ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আলী হোসাইন আসামিদের অব্যাহতির আবেদন নাকচ করে অভিযোগ গঠন করেন। এ মামলায় আগামী ২২ ডিসেম্বর সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ রেখেছেন তিনি।

অস্ত্র আইনের মামলায় দণ্ড নিয়ে কারাগারে থাকা শামীমা নূর পাপিয়াকে মঙ্গলবার অবৈধ সম্পদ অর্জনের এই মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য কারাগার থেকে আদালতে আনা হয়।

এসময় তাকে এজলাস কক্ষের বেঞ্চে বসে বাদাম ও প্যাকট ছিঁড়ে চানাচুর খেতে দেখা যায়, যদিও হাজতী বা কয়েদীর সেখানে খাওয়ার অনুমতি নেই।

মুঠো ভর্তি বাদাম, চানাচুর খাওয়ার পর তাকে বোতল থেকে পানিও পান করতে দেখা যায়। এজলাস কক্ষে ছবি তোলা নিষিদ্ধ হওয়ায় সাংবাদিকরা এ ঘটনার কোনো ছবি তুলতে পারেননি।

সোয়া ৬ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গত বছর ৪ আগস্ট দুদকের উপপরিচালক শাহীন আরা মমতাজ এ মামলা দায়ের করেন।

তদন্ত শেষে চলতি বছরের মার্চ মাসে পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন এই দুদক কর্মকর্তা।

গত ৬ অক্টোবর ঢাকা মহানগর জেষ্ঠ্য বিশেষ জজ কে এম ইমরুল কায়েশ আসামিদের উপস্থিতিতে অভিযোগপত্র গ্রহণ করে বিচারের জন্য ৩ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে পাঠিয়ে দেন।

সেখানে পাপিয়া ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে পাঁচ কোটি ৮৪ লাখ ১৮ হাজার ৭১৮ টাকার অবৈধ সম্পদ নিজেদের দখলে রাখার অভিযোগ আনা হয়েছে।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০১৯ সালের ১২ অক্টোবর থেকে গত ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলের প্রেসিডেনসিয়াল স্যুট এবং চেয়ারম্যান স্যুটসহ ২৫টি কক্ষে অবস্থান করে খাবার, মদ, স্পা, লন্ড্রি, বারের খরচ বাবদ তিন কোটি ২৩ লাখ ২৪ হাজার ৭৬১ টাকার বিল নগদে পরিশোধ করেন পাপিয়া।

ওয়েস্টিন হোটেলে থাকার সময় তিনি প্রায় ৪০ লাখ টাকার কেনাকাটা করেছেন, যার কোনো বৈধ উৎস তিনি তদন্তের সময় দেখাতে পারেননি।

এছাড়া ২০১৫ সালের এপ্রিল থেকে ২০২০ সালের এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে মাসে ৫০ হাজার টাকা করে ৩০ লাখ টাকা বাসা ভাড়া দিয়েছেন। গাড়ির ব্যবসায় এক কোটি টাকা এবং নরসিংদীতে কেএমসি কার ওয়াশ সলিউশনে ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন।

বিভিন্ন ব্যাংকে পাপিয়া ও তার স্বামীর নামে ৩০ লাখ ৫২ হাজার ৯৫৮ টাকা জমা আছে উল্লেখ করে মামলায় বলা হয়, দুদকের অনুসন্ধানে এসব অর্থের বৈধ কোনো উৎস পাওয়া যায়নি।

রিমান্ডে পাওয়ার পর সোমবার বিকালে ঢাকা হাকিম আদালত থেকে নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়াকে নিয়ে যায় পুলিশ।

গত বছর ২২ ফেব্রুয়ারি পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমানকে ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে ঢাকা ও নরসিংদীতে পাপিয়ার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বিপুল সম্পদের খোঁজ পাওয়ার কথা জানায় র‌্যাব।

অভিযানে তাদের বাসা থেকে নগদ ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা এবং মফিজুর রহমান সুমনের নামে হোন্ডা সিভিএ ২০১২ মডেলের একটি গাড়ি জব্দ করা হয়, যার দাম ২২ লাখ টাকা।

সে সময় র‌্যাবের তরফ থেকে বলা হয়, পাপিয়া গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেল ভাড়া নিয়ে ‘অসামাজিক কার্যকলাপ’ চালিয়ে যে আয় করতেন, তা দিয়ে হোটেলে বিল দিতেন কোটি টাকার ওপরে।

সব মিলিয়ে তাদের নামে ছয় কোটি ২৪ লাখ ১৮ হাজার ৭১৮ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ রয়েছে উল্লেখ করে দুদকের মামলায় বলা হয়, এসব অর্থ তারা অপরাধজনক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আয় করেছেন।

গ্রেপ্তারের পর পাপিয়া ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে জাল নোটের একটি এবং অস্ত্র ও মাদক আইনে দুটি মামলা করে র‌্যাব। এছাড়া মুদ্রা পাচার প্রতিরোধ আইনে আরেকটি মামলা করে সিআইডি। পরে দুদকও অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধানে নামে।

পাপিয়ার আইনজীবী শাখাওয়াত উল্যাহ ভূঞা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, জাল টাকার মামলায় দুটি অভিযোগপত্র দেওয়ায় আলাদা দুটি মামলা হিসাবে বিচার শুরু হয়।সব মিলে মামলা দাঁড়িয়েছে ছয়টি।

এর মধ্যে অস্ত্র আইনের মামলায় গতবছর ১২ অক্টোবর এই দম্পতির ২০ বছরের কারাদণ্ডের রায় হয়। মাদক উদ্ধার ও জাল টাকার মামলায় ইতোমধ্যে তাদের বিচার শুরু হয়েছে।

আরও পড়ুন