রাজধানীর গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনা ও যানজট নিরসনে ‘বাস রুট র্যাশনালাইজেশনের’ পরীক্ষামূলক যাত্রা শুরুর কথা ছিল আগামী ১ ডিসেম্বর।
কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে কাচপুর পর্যন্ত প্রায় ২১ কিমি দৈর্ঘ্যের রুটে ‘ঢাকা নগর পরিবহন’ নামে একটি নতুন কোম্পানি গঠন করে ১২০টি নতুন বাস নামানোর কথাও জানানো হয়েছিল।
কিন্তু রোববার রুট র্যাশনালাইজেশনের ১৯তম সভার পর দুই মেয়র বলেন, বাস মালিকরা বাস দেওয়ার কথা বলেও দেয়নি। এমনকি তারা কথার বরখেলাপ করেছে। বাস মালিকদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের কারণে ১ ডিসেম্বর থেকে ঘাটারচর-কাচপুর রুটে নগর পরিবহনের বাস চালু করা যাচ্ছে না।
তবে অসহযোগিতার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বাংলাদেশে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেছেন, ভুল বোঝাবোঝি হয়েছে মাত্র।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নগর ভবনে সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে মেয়র তাপস নগরবাসীর কাছে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, “দীর্ঘদিনের গণপরিবহনের যে বিশৃঙ্খলা যাতে অনেক অংশীজন রয়েছে। সকলকে মিলে দলীয়ভাবে শৃঙ্খলার আওতায় আনা অত্যন্ত দুরূহ কাজ।
“বিভিন্ন অহযোগিতার কারণে আমরা ১ ডিসেম্বর যে সেবা চালু করতে চেয়েছিলাম, তা হোঁচট খেয়েছি। কিন্তু তাতে আমরা পিছপা হইনি। তবে আমরা অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে এ কাজ হাতে নিয়েছি। আমরা সংকল্পবদ্ধ যে এটাকে আমরা বাস্তবায়ন করবই করব। ১ ডিসেম্বর না করা গেলেও আগামী ডিসেম্বর মাসেই তা চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
কী কারণে ১ ডিসেম্বর চালু করা যাচ্ছে না- জানতে চাইলে মেয়র আতিক বলেন, “আগামী গত মিটিংয়ে বলা হয়েছিল, ৪২০টি রুট পারমিট দিলেই ১২০টি নতুন গাড়ি তারা নামাবেন। এমন কমিটমেন্ট তারা গত মিটিংয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু আমরা ৪২০টি রুটে পারমিশন দিতে চাইনি। তারপর দক্ষিণের মেয়র মহোদয়ের কাছে তারা অনুরোধ করলেন।
“কিন্তু শর্ত ছিল এটাই। সেই শর্তের আমরা চুক্তিতে সই করেছিলাম। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় আমরা দেখলাম, যে কথা উনারা দিয়েছিলেন তা থেকে আমরা নতুন কোনো বাস পাইনি। মাত্র ৬টি বাস পেয়েছি। সুতরাং আমরা দেখেছি যে যেখানে কথার বড়খেলাপ হচ্ছে। এটাই আসল কারণ।”
উত্তরের মেয়র বলেন, “আমাদের ইচ্ছার কোন ত্রুটি ছিল না। আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করেছিলাম যে পহেলা ডিসেম্বরকে বাস্তবায়ন রাখার জন্য। আমরা এটা পারিনি। বাস মালিকরা যারা আছেন তারা আমাদের যেভাবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তারা কিন্তু তা রাখতে পারেননি।
“যার ফলে আমরা বাধ্য হয়েছি, এ রুটে বিআরটিসির সহযোগিতায় আগামী ২৬ ডিসেম্বর ১০০টি বাস ঘাটারচর থেকে কাচপুরের সাইনবোর্ড পর্যন্ত চলার জন্য। বিআরটিসি নিশ্চয়তা দিয়েছি তারা বাস দেবে। এ ছাড়া আগামী ১২ ডিসেম্বরের মধ্যে যদি কেউ এ নতুন রুটে যদি কেউ আবেদন করে তাদের সেই সুযোগ দেওয়া হবে। আমরা এখন উম্মুক্ত করে দিয়েছি, আমাদের কিছুটা কঠোর হতে হয়েছে।”
তিনি বলেন, “বিভিন্ন রুটে গাড়ি চলাচলে কোনো নিয়ম মানা হচ্ছে না। আজকের মিটিংয়ে আরও সিদ্ধান্ত হয়েছে, ১টি নির্দিষ্ট রুট ছাড়া অন্য রুটে কেউ বাস চালাতে পারবে না। অর্থাৎ যার রুট যেটা সেটায় চালাতে হবে। রুট পারমিটবিহীন গাড়ি চলতে দেওয়া হবে না।
“১ ডিসেম্বর থেকে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন,বিআরটিএ,ডিএমপিসহ আমরা অভিযানে নামব। রুট পারমিট ছাড়া ঢাকায় কোনো বাস চলতে পারবে না। এবং যারা এক রুটে পারমিট নিয়ে অন্য রুটে গাড়ি চালাচ্ছে, তাদেরও ধরা হবে।”
রুট পারমিট ছাড়া চলা নিষিদ্ধ ও নতুন রুট পারমিট না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার বাস রুট ফ্রাঞ্চাইজি কমিটির আছে কি না- জানতে চাইলে মেয়র তাপস বলেন, “গণ পরিবহনকে শৃঙ্খলায় আনার জন্য যে কমিটি গঠন করা হয়েছে, সে কমিটির পূর্ণাঙ্গ কার্যপরিধির আওতায় আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মূল কথা হলো ঢাকার গণপরিবহন ব্যবস্থাকে শৃঙ্খলায় আনা।”
দুই সিটি কর্পোরেশনের এই সেবা বাসরুট ফ্রাঞ্চাইজিং থেকে সরে গেল কি না- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমরা এটাকে আর একটু সংস্কার করেছি। যেটার জন্য সরকারি সংস্থা বিআরটিসি এগিয়ে এসেছে। তারা ৩০টা বাস দিয়ে আমাদের সহযোগিতা করার জন্য। সেই সঙ্গে আমরা এটাকে উন্মুক্ত করে দিচ্ছি। আমরা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ১২ ডিসেম্বরের মধ্যে আমরা উদ্যোক্তা এবং অন্যান্য বিনিয়োগকারীদের থেকে আমরা আবেদন নেব। সে আবেদনের প্রেক্ষিতে আমরা এ রুটে (ঘাটারচর-কাচপুর) ১০০টি আমরা নির্ধারণ করবো, নতুন আসবে দিবো সেখানে।
“আমাদের ফ্রাঞ্চাইজির যে শর্তগুলো ছিল- বাস সবুজ হবে, নাম হবে নগর পরিবহন, প্রশিক্ষিত গাড়িচালক থাকবে, যে কোনো বাস অন্য বাসের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে ধাক্কা দেবে না। আমাদের যে মূল লক্ষ্য ফ্রাঞ্চাইজি সেটা থেকে আমরা কোনোভাবেই পিছপা হইনি, সরে আসিনি। ফ্রাঞ্চাইজিংয়ের নমুনা হিসেবে পাইলটিং হিসেবে হিসেবে যাত্রাপথটা শুরু করছি এবং আমরা গ্রিন ক্লাস্টারের বাকি কাজগুলোও আমরা শুরু করে দিয়েছি।”