পান্থপথে মৃত্যু: উত্তর সিটির সেই ময়লার গাড়ি চালাচ্ছিলেন একজন ‘মেকানিক’

রাজধানীর পান্থপথে দুদিন আগে গার্মেন্টস এক্সেসরিজ ব্যবসায়ী আহসান কবীর খানকে চাপা দেওয়া উত্তর সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়িটি চালাচ্ছিলেন একজন ‘মেকানিক’।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Nov 2021, 08:38 AM
Updated : 27 Nov 2021, 01:34 PM

মো. হানিফ নামের ওই ব্যক্তিকে শুক্রবার রাতে চাঁদপুর থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে শনিবার কারওয়ান বাজারে সংবাদ সম্মলনে আসেন র‌্যাবের আইন ও গনমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, হানিফ আদৌ সিটি করপোরেশনের কর্মচারী ছিলেন না। 'ম্যানেজ' করে তিনি সিটি করপোরেশনের গাড়ি চালাতেন, তার আয় হত ‘চুরি করা তেল বিক্রি করে’।

বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটার দিকে পান্থপথে বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সের সামনে ময়লার গাড়ির ধাক্কায় নিহত হন মোটরসাইকেল আরোহী আহসান কবীর খান। ঘটনার পর চালক ময়লা ভর্তি গাড়িটি ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। ওই ঘটনায় কলাবাগান থানায় একটি মামলা হয়।

এর আগে বুধবার গুলিস্তানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ির চাপায় নিহত হন নটর ডেম কলেজের ছাত্র নাঈম হাসান। ওই ঘটনায় রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মধ্যেই বৃহস্পতিবারের ঘটনা ঘটে।

উত্তর সিটি করপোরেশনের এই ময়লার গাড়ির চাপায় নিহত হন আহসান কবীর খান

র‌্যাব কর্মকর্তা মঈন বলেন, “হানিফ সহকারী মেকানিক ছিল, এই সুবাদে তার সাথে ডিএনসিসির দুই একজনের পরিচয়। সেই সূত্রে সে ওই ময়লাবাহী ট্রাক চালানোর সুযোগ পায়।”

হানিফের একটি ‘ড্রাইভারস লাইসেন্স’ থাকলেও সেটা হালকা বাহন চালানোর জন্য, ভারী গাড়ি চালানোর অনুমতি তার ছিল না বলে জানান মঈন।

তিনি বলেন, হানিফ প্রতিদিন অন্তত চারবার ময়লা সংগ্রহ করতেন। ঘটনার দিন তার তৃতীয় দফা ময়লা নিয়ে গাবতলী গিয়ে সেই ময়লা ফেলে আসার কথা ছিল। এর মধ্যে পান্থপথের ঘটনা ঘটে এবং হানিফ এবং তার ১০ বছর বয়সী এক সহকারী গাড়ি ফেলে পালিয়ে যান।

“হানিফ পালিয়ে গাবতলীতে তার পূর্ব পরিচিত একজনের কাছে যায়। সেখান থেকে সে চাঁদপুরে নানাবাড়িতে গিয়ে আত্মগোপন করে।”

উত্তর সিটি করপোরেশনের ওয়ার্কশপের মূল মেকানিকের সহকারী হিসাবে ৬-৭ বছর কাজ করলেও হানিফ ‘নিয়োগপ্রাপ্ত ছিল না’ বলে জানান র‌্যাব কর্মকর্তা মঈন।

তিনি বলেন, “গত তিন বছর ধরে সে সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন গ্যাসের গাড়ি চালত। আর এক বছর ধরে এই ময়লা গাড়ি চালাত। যেখানে সে প্রতিদিন ২০ থেকে ২২ লিটার তেল ‘সেইভ’ করে পরে বিক্রি করত। এটা দিয়েই তার পরিবার চলত।”

গাড়িটি সিটি করপোরেশনের কোন চালকের নামে বরাদ্দ ছিল জানতে চাইলে মঈন তার নাম প্রকাশ না করে বলেন, “মূল চালককে শনাক্ত করা হয়েছে। তবে হানিফ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন গাড়ি চালিয়েছে। তারাই তাকে এই ময়লার গাড়ি চালাতে দিয়েছে।”

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে কলাবাগান থানার এসআই গোলাম রাব্বানী দুর্ঘটনার দিনে বলেছিলেন, আহসান একটি মোটরসাইকেলে আরেকজনের পেছনে বসে ছিলেন।

“ময়লার গাড়ির ধাক্কায় মোটরসাইকেলটি পড়ে গেলে তিনি এক দিকে, চালক অন্য দিকে ছিটকে পড়ে। ময়লার ট্রাকের একটি চাকা তার মাথার উপর দিয়ে চলে যায়। তার মাথায় হেলমেট থাকা সত্ত্বেও চ্যাপ্টা হয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি।”

আহসান ঝালকাঠির সদর উপজেলার শিরজু গ্রামের আব্দুল মান্নান খানের ছেলে। মগবাজারে পরিবার নিয়ে থাকতেন তিনি। স্ত্রীর নাম নাদিরা পারভিন রেখা। তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।

এক সময় প্রথম আলোতে পেস্টিং বিভাগে কাজ করলেও কয়েক বছর আগে তিনি চাকরি ছেড়ে গার্মেন্টস এক্সেসরিজের ব্যবসা শুরু করেছিলেন।

এ ঘটনায় প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমোডর এস এম শরিফ-উল ইসলামকে আহ্বায়ক ও মহাব্যবস্থাপক (পরিবহন) মিজানুর রহমানকে সদস্য সচিব করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে উত্তর সিটি করপোরেশন। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।