সান্ত্বনা জানাতে নিহত নাঈমের বাড়িতে মেয়র তাপস

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ির চাপায় নিহত নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসানের বাড়ি গিয়ে স্বজনদের সান্ত্বনা দেওয়ার পাশাপাশি দায়ী চালকের বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Nov 2021, 05:31 PM
Updated : 24 Nov 2021, 05:34 PM

তিনি বলেছেন, “আমরা এরই মাঝে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকে ব্যবস্থা নেওয়া আরম্ভ করেছি। আমরা তদন্ত কমিটি করেছি।”

বুধবার দুপুরে গুলিস্তানে সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ির চাপায় নিহত হন দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র নাঈম (১৭)।

তিনি কামরাঙ্গীরচরের বাসিন্দা শাহ আলমের ছেলে। নীলক্ষেতের একটি বইয়ের দোকানের মালিক শাহ আলমের দুই ছেলের মধ্যে নাঈম ছোট।

নাঈমের মৃত্যুর পর তার সহপাঠিরা দুপুর থেকে বিকাল অবধি গুলিস্তানে সড়ক আটকে বিক্ষোভ দেখায়। পরে শিক্ষকরা বুঝিয়ে তাদের সরিয়ে নেন।

রাতে নাঈমের বাড়িতে যান মেয়র তাপস।

তিনি বলেন, “আসলে সন্তান হারা পিতা-মাতাকে তো সান্ত্বনা দেওয়া যায় না। আমার নিজেরও দুই সন্তান। নিজেই উপলব্ধি করি, এটা কী রকম বেদনাদায়ক- মর্মান্তিক ঘটনা। এই কষ্ট ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।”

দায়ী চালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়ার বিষয়ে মেয়র বলেন, “বিভাগীয় মামলা এবং প্রাতিষ্ঠানিক যে কার্যক্রম আছে, সেগুলোও আমরা নেব। যাতে করে সুষ্ঠুভাবে বিচার সম্পন্ন হয় এবং সর্বোচ্চ শাস্তি যেন হয়, সেটাই আমরা কামনা করি।”

সেখানে উপস্থিত থাকা স্থানীয় সংসদ সদস্য কামরুল ইসলাম নাঈমের পরিবারকে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

তিনি বলেন, “মেয়র সাহেব তো আছেন। মেয়র সাহেব খোঁজখবর নেবেন। আমরা সহযোগিতা করব। কাউন্সিলরকে দিয়ে যে কোনো সময়, যে কোনো ব্যাপারে খবর দেবেন, চলে আসব। মেয়র সাহেব আপনাদের ব্যাপারে যা করার, সবই করবেন।”

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে করপোরেশনের সচিব আকরামুজ্জামান, দক্ষিণ সিটির কাউন্সিলরদের মধ্যে সাধারণ আসনের ৫৫ নম্বর ওয়ার্ডের মো. নুরে আলম, ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডের মোহাম্মদ হোসেন, ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডের মো. সাইদুল ইসলাম এবং সংরক্ষিত আসনের শেফালী আক্তার উপস্থিত ছিলেন।

ময়লার ট্রাকের ধাক্কায় নিহত সহপাঠি নাঈম হাসানের মৃত্যুর বিচার দাবিতে বুধবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায় শিক্ষার্থীরা।

মূল চালকের পরিবর্তে গাড়ি চালাচ্ছিলেন অন্যজন

ঘটনার পরপরই সিটি করপোরেশনের ওই গাড়িচালক রাসেল খানকে আটক করা হয়। তবে তিনি সিটি করপোরেশনের নিয়োগপ্রাপ্ত গাড়িচালক নন বলে পল্টন থানার ওসি মো. সালাউদ্দিন জানিয়েছেন।

যে গাড়ি নাঈমকে চাপা দিয়েছে, সেই গাড়ির নির্ধারিত চালক মো. হারুন তার পরিচিত রাসেলকে দিয়ে ‘বদলি ডিউটি’ করাচ্ছিলেন।

ওসি সালাউদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাসেলের ডিএসসিসির কোনো নিয়োগপত্র নেই। সে হারুনের পরিচিত। হারুন তাকে তার পক্ষ হয়ে বদলী ডিউটি করিয়েছে।”

এই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় শুধু রাসেল আসামি হলেও হারুনও দায় এড়াতে পারে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, হারুনের গাফিলতি তদন্তেই বেরিয়ে আসবে।

পল্টন থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সেন্টু মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, রাসেল একটি ড্রাইভিং লাইসেন্সের ফটোকপি দিয়েছে। তার পরিবারকে মূল কপি আনতে বলা হয়েছে।

শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। কমিটিকে ঘটনা তদন্ত করে আগামী সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

ঢাকা সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, ডিএসসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর সিতওয়াত নাঈমকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। কমিটির আর দুই সদস্য হলেন পরিবহন শাখার মহাব্যবস্থাপক বিপুল চন্দ্র বিশ্বাস এবং যান্ত্রিক শাখার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আনিছুর রহমান।

নাছের বলেন, “কমিটি এই দুর্ঘটনা কিভাবে সংগঠিত হলো তা সবিস্তারে উত্থাপন ও দোষী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করবে। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এড়ানো যায়, সেজন্য সুপারিশ করবে।”