বুধবার বিকাল ৫টার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা সড়ক থেকে সরে যেতে শুরু করলে গুলিস্তানে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পর আবার যানবাহন চলাচল শুরু হয়।
শিক্ষকদের কথায় অবরোধ তুলে নেওয়ার আগে তারা নিহত সহপাঠী নাঈম হাসানের পরিবারের ভরণপোষণের দাবি জানান।
সড়ক থেকে চলে যাওয়ার আগে নটর ডেমের আন্দোলনকারী ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের একজন মুকিত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ফাদার আমাদের জানিয়েছেন, মেয়র আশ্বাস দিয়েছেন। তাই আজকের মত সড়ক ছেড়ে চলে গেলাম।“
ঢাকা মহানগর মতিঝিল জোনের পুলিশ পরিদর্শক (ট্রাফিক) মশিউর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীরা চলে যাওয়ার পর সড়ক দিয়ে যান চলাচল শুরু হয়েছে।
বুধবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে গুলিস্তান হল মার্কেটের সামনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লার ট্রাকের ধাক্কায় প্রাণ হারান ১৭ বছরের তরুণ নাঈম হাসান।
ময়লার ট্রাকের ধাক্কায় নিহত নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসানের বাবার এই আহাজারি বুধবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
তার মৃত্যুর খবর কলেজে পৌঁছলে শতাধিক শিক্ষার্থী গুলিস্তান এসে সড়ক অবরোধ করে।
শিক্ষার্থীরা দায়ি চালকের শাস্তির দাবি তোলেন। তারা স্লোগান দিচ্ছিলেন- ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘আমার ভাই কবরে-তুই কেন বাইরে’।
বিকাল ৫টার দিকে শিক্ষার্থীরা সড়ক ছাড়ার আগে নাঈমের পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব চান সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের কাছে।
এর আগে নটরডেম কলেজের ফাদার এন্থনি সুশান্ত গোমেজ, পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক ভিনসেন্ট তিতাস রোজারিও ও শহিদুল হাসান পাঠান ঘটনাস্থলে এসে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন।
পরে তারা আশ্বস্ত করে শিক্ষার্থীদের নিয়ে যান।
মুকিত নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, নাঈম বড় হয়ে তার পরিবারকে ভরণপোষণ করতো কিন্তু এভাবে তাকে হত্যা করা হল। নাঈমের কী দোষ ছিল। দোষ হল সড়কের।
গুলিস্তানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লার ট্রাকের ধাক্কায় নিহত নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসানের মৃত্যুর খবর বুধবার কলেজে পৌঁছলে শতাধিক শিক্ষার্থী গুলিস্তান এসে সড়ক অবরোধ করে।
গুলিস্তান হল মার্কেটের সামনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লার ট্রাকের ধাক্কায় গুরুতর আহত নাঈমকে যারা হাসপাতালে নিয়ে যান, তাদের একজন আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, হল মার্কেট মোড়ে বায়তুল মোকাররমগামী সিটি করপোরেশনের একটি ময়লার ট্রাক মোড় ঘুরেই নাঈমকে চাপা দেয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া জানান, কয়েকজন পথচারী ও নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থীরা নাঈমকে হাসপাতালে আনলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পল্টন থানার ওসি মো. সালাউদ্দিন বলেন, এ ঘটনায় সিটি করপোরেশনের ওই গাড়ি চালক রাসেল খানকে আটক করে গাড়িটি জব্দ করা হয়েছে।
নাঈমের মৃত্যুর খবর শুনে হাসপাতালে ছুটে আসেন তার বাবা শাহ আলম। কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “আমার থাইকা বিদায় নিয়া আইলো কলেজে যাইব, দুনিয়া থাইকাই চইলা গেল, সোনার টুকরা পোলা আমার।”
শাহ আলম নীলক্ষেতে বইয়ের ব্যবসা করেন। গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার কাজিরখিল গ্রামে।
ডিএসসিসির তদন্ত কমিটি
ময়লাবাহী গাড়ির ধাক্কায় নটর ডেম শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। কমিটিকে ঘটনা তদন্ত করে আগামী সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
দিনভর শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের পর সন্ধ্যায় ঢাকা সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, ডিএসসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর সিতওয়াত নাঈমকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। কমিটির আর দুই সদস্য হলেন পরিবহন শাখার মহাব্যবস্থাপক বিপুল চন্দ্র বিশ্বাস এবং যান্ত্রিক শাখার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আনিছুর রহমান।
নাছের বলেন, “কমিটি এই দুর্ঘটনা কিভাবে সংগঠিত হলো তা সবিস্তারে উত্থাপন ও দোষী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করবে। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এড়ানো যায়, সেজন্য সুপারিশ করবে।”