গাজীপুরের মেয়র জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল

জমি সংক্রান্ত এক মামলায় আদালতের আদেশ অমান্য করায় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলমসহ চার জনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করেছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Nov 2021, 09:51 AM
Updated : 24 Nov 2021, 09:51 AM

২০১৮ সালের ৮ অক্টোবর এবং চলতি বছরের ২১ জুন হাই কোর্টের অন্তর্বর্তী নিষেধাজ্ঞা অমান্য করায় কেন তাদের বিরুদ্ধে অদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হবে না, এক সপ্তাহের মধ্যে তার জবাব দিতে বলা হয়েছে।

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে মন্তব্যের জেরে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত জাহাঙ্গীর ছাড়া বাকি তিনজন হলেন- জয়দেবপুরের পাইনশাল গ্রামের আলফাজ, পশ্চিম ডগরী গ্রামের হারুনুর রশিদ ওরফে ঠাণ্ডু ও বি কে বাড়ী গ্রামের ফজলুল হক।

বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের হাই কোর্ট বেঞ্চ বুধবার এ আদেশ দেয়।

আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জোনরেল অমিত দশ গুপ্ত।

আবুল কালাম আজাদ পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিশেষ বার্তা বাহকের মাধ্যমে আদালতের আদেশটি পাঠাতে বলা হয়েছে।”

১৯৮৮ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময় গাজীপুরের জয়দেবপুরের বিকেবাড়ী মৌজায় ১৬.৬৬ এক জমি কিনে সেখানে আবাদ করে আসছিলেন ঢাকার গুলশানের বাসিন্দা আশরফ উদ্দিন আহমেদ।

কিন্তু ১৯৯৭ সালের ১৪ জানুয়ারি মির্জাপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস আশরফ উদ্দিন আহমেদের ওই জমির নামজারি বাতিল করে নোটিস দেয়। তাতে বলা হয় আশরাফ উদ্দিন আহমেদের ভোগদখল কর জমি খাস, অর্পিত ও বন বিভাগের ভূমির অন্তর্ভূক্ত। যে কারণে নামজারি বাতিল করে এ জমি মূল খতিয়ানভুক্ত করা হয়েছে।

পরে ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পন আইনের ১০ ধারা অনুযয়ী গেজেটের মাধ্যমে এ জমি তফসিলভুক্ত করা হয়।

এর বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে মামলা করেন আশরাফ উদ্দিন আহমেদ। ২০১৬ সালের ১৭ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল এ জমি অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পন আইনের তফসিলভুক্তি থেকে অবমুক্ত করে আশরফ উদ্দিন আহমেদের কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দেয়।

ট্রাইব্যুনালের এ আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করলে ২০১৭ সালের ১২ অক্টোবর সে আপিল খারিজ করে দেয় সম্পত্তি প্রত্যার্পন ট্রাইব্যুনাল। আদালতের ওই আদেশের পর নামজারি সংশোধন করার আবেদন করেন আশরাফ উদ্দিন আহমেদ।

কিন্তু তা না করায় স্থানী ভূমি অফিসের নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে রিট করেন জমির মালিক আশরাফ উদ্দিন আহমেদ।

হাই কোর্ট ২০১৮ সালের ৮ অক্টোবর রুলসহ আদেশ দেয়। ওই জমিতে বিবাদীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে পরবর্তী তিন মাস আশরাফ উদ্দিন আহমেদের শান্তপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিত করতে বলা হয় আদেশে।

পরে অন্তর্বর্তী ওই আদেশের মেয়াদ বাড়ানো হয়। সর্বশেষ সম্পূরক আবেদনের প্রেক্ষিতে চলতি বছররের ২১ জুন ফের রুলসহ আদেশ দেয় হাই কোর্ট।

সে অদেশেও উচ্চ আদালত আশরফ উদ্দিন আহমেদের শান্তিপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিত করার নির্দেশ দেয়।

কিন্তু আশরফ উদ্দিনের অভিযোগ, উচ্চ আদালতের আদেশ উপেক্ষা করে জাহাঙ্গীর আলমের নির্দেশে আলফাজ, হারুনুর রশিদ ওরফে ঠাণ্ডু ও ফজলুল হক গত ১৯ জুন ওই কৃষি খামারে জোর করে ঢুকে খামারের ব্যবস্থাপককে ‘হুমকি’ দেয় এবং ধান কাটতে ‘বাধা দেয়’।

এ বিষয়ে গত ১ জুলাই জয়দেবপুর থানায় সাধারণ ডায়রি (জিডি) করার পর ১৮ আগস্ট মামলা করেন জমির মালিক আশরাফ উদ্দিন আহমেদ।

মামলার তদন্ত শেষে ২৩ অগাস্ট আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। প্রতিবেদনে অপরাধের প্রমাণ পাওয়ার কথা বলা হয়।

অভিযোগ আমলে নিয়ে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আসামিদের বিরুদ্ধে সমন জারি করে ১২ সেপ্টেম্বর পরবর্তী শুনানির তারিখ রাখেন। এরপরও মেয়র জাহাঙ্গীর আলমসহ আসামিরা হুমকি দিয়ে আসছিলেন বলে  আশরাফ উদ্দিন আহমেদের অভিযোগ।

এই প্রেক্ষাপটে তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন করেন তিনি।