আদেশ প্রতিপালনে মঙ্গলবার পর্যন্ত সময় দিয়ে আদালত বলেছে, “আমরা কিন্তু এসব টলারেট করবে না।”
তিনটি রিট আবেদন নিয়ে মঙ্গলবারের শুনানিতে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চ থেকে এ হুঁশিয়ারি আসে।
আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির ও মো. আনোয়ারুল ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
ই-কমার্স খাত থেকে অর্থপাচারের অভিযোগের বিষয়ে কী পদক্ষেপ নিয়েছে বা আদৌ কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কিনা, তা বাংলাদেশ ফাইনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) জানতে চেয়েছিল হাই কোর্ট।
সেই সঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ই-কর্মাস খাত থেকে কর আদায়ের নীতি কী, আদৌ কোনো নীতি আছে কিনা বা এ বিষয়ে এনবিআরের পরিকল্পনা।
আর ই-কমার্স খাতের স্বার্থে যে ১৬ সদস্যের কারিগরি কমিটি করেছে সরকার, তার কার্যপরিধি জানতে চাওয়া হয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে।
ই–কমার্স খাতের ভোক্তাদের অধিকার ও স্বার্থ সুরক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা ও নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করে তিনটি রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ২৮ সেপ্টেম্বর এ আদেশ দেয় হাই কোর্ট।
গত ৮ নভেম্বর শুনানির তারিখ রেখে লিখিত প্রতিবেদন হলফনামা করে আদালতকে দিতে বলা হয়েছিল।
মঙ্গলবার তিনটি রিটই শুনানির জন্য সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের কার্যতালিকায় ওঠে। তখন বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক এম. ইনায়েতুর রহিম রাষ্ট্রপক্ষের কাছে প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চান।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার তখন বলেন, আদালতের আদেশের বিষয়ে নোটিস জারি হয়েছে। কিন্তু কোনো প্রতিবেদন সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে আসেনি।
একথা শুনে উষ্মা প্রকাশ করে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক এম. ইনায়েতুর রহিম বলেন, “নোটিস জারির পর রেসপন্স করবে না সরকার পক্ষ, এটা কোনো কথা হলো! আপনি সবার সাথে যোগাযোগ করেন।”
সরকারের আইন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ‘ইমেইল পাঠিয়ে দায়িত্ব শেষ’ করায় অসন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “এটা নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের সাথে কথা বলেন। আমরা কিন্তু এসব টলারেট করবে না।”
“এনবিআরের থেকে বেশি দরকার হচ্ছে বণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কমপ্লায়েন্স।”
বিচারক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে বলেন, “আজকে মেইল করবেন আপনার অফিস থেকে। মঙ্গলবার রাখা হল।”
পরে আইনজীবী শিশির মনির বিডিনিউজটোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাষ্ট্রপক্ষ প্রথমে বলেছে, নোটিস (কোর্টের আদেশ) জারি হয়নি। পরে আমরা দেখালাম বিবাদীদের কাছে নোটিস জারি হয়েছে। কিন্তু তারা কোনো জবাব দেয়নি। যে কারণে আদালত ডিএজি সাহেবকে বলেছেন, সিরিয়াস হতে, অ্যাটর্নি জেনারেল সাহেবকে বিষয়টি জানাতে। আদালত বলেছেন, তারা বিষয়টা টলারেট করবেন না।”
ই-কমার্স খাতের আলোচিত ও বিতর্কিত কোম্পানি ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল ও চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে গত ১৬ সেপ্টেম্বর গুলশান থানার প্রতারণার মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়।
তাদের বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে গ্রাহকদের পণ্য না দেওয়া এবং সরবরাহকারীদের কাছ থেকে পণ্য নিয়ে দাম পরিশোধ না করার ব্যাপক অভিযাগ উঠেছে।
ইভ্যালিসহ ই-কমার্স খাতের আরও অনেক কোম্পানির বিরুদ্ধে এধরনের ১৭ হাজার অভিযোগ জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ পরিষদে জমা পড়েছে।
এ নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও ভুক্তভোগী গ্রাহকদের পক্ষ থেকে সেপ্টেম্বরে তিনটি রিট আবেদন করা হয়।
এদিকে ই-কমার্স সংক্রান্ত সব কার্যক্রম, ই-কমার্সের মাধ্যমে ব্যবসা করা, লেনদেনজনিত ভোক্তা বা বিক্রেতা অসন্তোষ ও প্রযুক্তিগত সমস্যা নিরসনে গত ২৭ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক মো. হাফিজুর রহমানকে আহ্বায়ক করে ১৬ সদস্যের কারিগরি কমিটি গঠিণ করা হয়।
তিন রিট আবেদন
অনলাইন বাণিজ্যের ক্ষেত্রে গ্রাহকদের স্বার্থ ও অধিকার রক্ষায় জাতীয় ডিজিটাল কমার্স নীতি অনুযায়ী একটি স্বাধীন ই-কমার্স নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠার নির্দেশনা চেয়ে গত ২০ সেপ্টেম্বর একটি আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. আনোয়ারুল ইসলাম।
ইভ্যালি, আলিশা মার্ট, ই–অরেঞ্জ, ধামাকা, দারাজ, কিউকম, আলাদিনের প্রদীপ ও দালাল প্লাসের মত পরিচিত ই-কমার্স প্লাটফর্ম থেকে পণ্য কিনে লাখ লাখ গ্রাহকের আর্থিক ক্ষতি নির্ণয়ে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত একজন বিচারকের নেতৃত্বে এক সদস্যবিশিষ্ট অনুসন্ধান কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে দ্বিতীয় রিট আবেদন করা হয়।
ইভ্যালি ও ই-অরেঞ্জের দুজন গ্রাহকের পক্ষে গত ২২ সেপ্টেম্বর রিটটি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব।
ই-কমার্স গ্রাহকদের অধিকার ও স্বার্থ সুরক্ষায় সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব তৈরির জন্য অর্থনীতিবিদ, তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, ব্যবসায়ী ও অন্য অংশীজনদের নিয়ে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে ২৩ সেপ্টেম্বর তৃতীয় আবেদনটি করা হয়।
ই-কমার্স খাতের ৩৩ ভুক্তোভোগী গ্রাহকের পক্ষে আবেদনটি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। আবেদনকারী এসব গ্রাহকরা ১৬ কোটি টাকা পরিশোধের পরও পণ্য বা অর্থ ফেরত কিছুই পাননি। এই কারণে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয় রিট আবেদনটিতে।