সেই বিচারককে নিয়ে আপিল বিভাগের আরেক আদেশ

রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণের মামলায় এখতিয়ারবহির্ভূত পর্যবেক্ষণ দিয়ে বিচারিক ক্ষমতা হারানো মোছা. কামরুন্নাহার আরেকটি মামলায় সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করেছিলেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Nov 2021, 01:06 PM
Updated : 25 Nov 2021, 10:31 AM

সেই ঘটনায় দুই বছর আগে তাকে তলব করেছিল আপিল বিভাগ। তার ধারাবাহিকতায় সোমবার আদেশও হয়েছে। তবে সর্বোচ্চ আদালত কী আদেশ দিয়েছে, তা জানা যায়নি।

এই ট্রাইবুনালে এখন কামরুন্নাহার আর নেই।

ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এর বিচারক হিসেবে কামরুন্নাহার রেইনট্রি ধর্ষণের মামলায় সব আসামিকে খালাস দিয়ে গত বৃহস্পতিবার দেওয়া রায়ে যে পর্যবেক্ষণ দিয়েছিলেন, তা নিয়ে পড়েন সমালোচনায়।

ধর্ষণ প্রমাণে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ফরেনসিক পরীক্ষা করার বাধ্যবাধকতার যুক্তি দিয়ে ওই সময়ের পর মামলা না নিতে পর্যবেক্ষণ দেন তিনি।

সমালোচনার মুখে রোববার প্রধান বিচারপতি বিচারক কামরুন্নাহারের বিচারিক ক্ষমতা কেড়ে নেন। পরে তাকে আদালত থেকে সরিয়ে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।

এরপর সোমবার দুই বছর আগের একটি ধর্ষণ মামলার আসামিকে জামিন দেওয়া নিয়ে কামরুন্নাহারের তলবের আদেশের বিষয়টি আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় আসে।

সর্বোচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ থাকার পরও আসলাম শিকদার নামে এক আসামিকে গত বছরের ২ মার্চ জামিন দিয়েছিলেন বিচারক কামরুন্নাহার।

কোন এখতিয়ার বা ক্ষমতাবলে ওই আসামিকে জামিন দিয়েছিলেন, সে ব্যাখ্যা জানতে তখন তলব করা হয় কামরুন্নাহারকে।

গত বছর ১২ মার্চ প্রধান বিচারপতি নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ তাকে ওই বছরের ২ এপ্রিল আদালতে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দিয়েছিল।  

এরপর সোমবারই আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ‘রাষ্ট্র বনাম আসলাম শিকদার’ শিরোনামে মামলাটি আসে। তালিকার শুরুতেই ছিল এটি।

প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির ভার্চুয়াল আপিল বেঞ্চ শুনানি শুরু হলে অ্যাটর্নি জেনারেল রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনটি এই মুহূর্তে নেই বলে জানান।

তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, “আমাদের কাছে সব আছে।”

এরপর আদালত কিছু সময়ের জন্য বিরতিতে যায়। ফিরে এসে প্রধান বিচরাপতি বলেন, “আদেশ দেওয়া হয়েছে।”

কী আদেশ হয়েছে- অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন জানতে চাইলে প্রধান বিচারপতি বলেন, লিখিত আদেশে পাবেন।

আদেশের বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি জানি না, উনাদের (আপিল বেঞ্চের বিচারপতি) জিজ্ঞাসা করলাম, উনারা আমাদের কিছু বলেন নাই। আমি কোর্টকে জিজ্ঞাসা করলাম, উনি (প্রধান বিচারপতি) বললেন,না এটা এখন আপনারা জানবেন না। বললেন, অর্ডার পাসড, এখন বলব না।”

ধর্ষণের অভিযোগে বেসরকারি টেলিভিশন এটিএন বাংলার সাবেক কর্মকর্তা আসলাম শিকদারের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ঢাকার হাতিরঝিল থানায় মামলা করেন এক নারী।

ওদিনই তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

এ মামলায় ২০১৯ সালের ১৮ জুন হাই কোর্ট আসলাম শিকদারকে জামিন দিলে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত জামিন স্থগিত করে দেয়। পরে এই স্থগিতাদেশ বাড়ানোর জন্য আপিল বিভাগে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।

এদিকে চেম্বার আদালতে জামিন স্থগিত থাকার পরও আসামি আসলামকে জামিন দেন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক কামরুন্নাহার।

রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানির সময় নিম্ন আদালত থেকে আসলাম শিকদারের জামিন পাওয়ার বিষয়টি সর্বোচ্চ আদালতের নজরে এনেছিলেন তৎকালীন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

তখন আপিল বিভাগ বিশেষ বার্তা বাহকের মাধ্যমে নিম্ন আদালত থেকে মামলার নথি আনে। নথি আসার পর তা পর্যালোচনা করেন আপিল বিভাগের বিচারপতিরা। এরপর বিচারক কামরুন্নাহারকে তলবের আদেশ দেয় আপিল বিভাগ।

এদিকে গত বছরের ১৪ অক্টোবর বিচারিক আদালতের দেওয়া রায়ে আসলাম শিকদার খালাস পান। সে রায়ের বিরুদ্ধে হাই কোর্ট আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।

গত ২০ জানুয়ারি সে আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো.মোস্তাফিজুর রহমানের হাই কোর্ট বেঞ্চ মামলার নথি তলব করে। সেই সাথে আসলাম শিকদারকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়।

আরও পড়ুন