শনিবার ঢাকার মহানগর হাকিম মাহমুদা আক্তার তার খাস কামরায় প্রশ্নফাঁসের মূলহোতা আহছানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি টেকনিশিয়ান মুক্তারুজ্জামান রয়েল ও জনতা ব্যাংকের গুলশান শাখার অফিসার শামসুল হক শ্যামলের জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তমূলক জবানবন্দি রেকর্ডের পর বিচারক তাদেরসহ বাকি আসামিদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন বলে জানান আদালতে বাড্ডা থানার সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা পুলিশের উপপরিদর্শক রনপ কুমার ভক্ত।
এদিন রিমান্ড শেষে চার জন জবানবন্দি দেওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত দুই জন স্বীকারোক্তি দিতে অস্বীকৃতি জানান।
কারাগারে যাওয়া বাকি আসামিরা হলেন- জনতা ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার এমদাদুল হক খোকন ও সোহেল রানা, পূবালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান মিলন ও ঢাকা কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল জাবেদ জাহিদ।
এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের তেজগাঁও জোনাল টিমের পরিদর্শক লিয়াকত আলী বাড্ডা থানায় দায়ের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় রিমান্ড শেষে ছয় আসামিকে আদালতে হাজির করেন।
এদের মধ্যে চারজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হওয়ায় তা রেকর্ড করার আবেদন করেছিলেন তদন্ত কর্মকর্তা। পরে দুই আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হননি।
এর আগে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে ডিবির হাতে গ্রেপ্তার মুক্তারুজ্জামান রয়েল, শামসুল হক শ্যামল ও মোস্তাফিজুর রহমান মিলনকে গত ১০ নভেম্বর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দিনের পুলিশ হেফাজত মঞ্জুর করে আদালত।
ওইদিন রূপালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার জানে আলম মিলন ও চাকরিপ্রার্থী রাইসুল ইসলাম স্বপনের রিমান্ড নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হয়।
পরদিন এমদাদুল হক খোকন, সোহেল রানা ও আব্দুল্লাহ আল জাবেদ জাহিদের একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদিলত।
গত বুধবার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার সরকারি পাঁচটি ব্যাংকের অফিসার (ক্যাশ) পদে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে ছয় জনকে গ্রেপ্তার করার কথা জানান।
ঢাকায় গত ৬ নভেম্বর বিকালে বিভিন্ন কেন্দ্রে এমসিকিউ পদ্ধতিতে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকার সিলেকশন কমিটির মাধ্যমে প্রশ্নপত্র তৈরি ও পরীক্ষা সম্পাদনের দায়িত্বে ছিল আহছানউল্লা ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজি।
হাফিজ আক্তার জানান, পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হবে এমন তথ্যের ভিত্তিতে ডিবির টিমের সদস্যরা ছদ্মবেশে পরীক্ষার্থী সেজে ৬ নভেম্বর সকাল সাতটার দিকে প্রশ্নপত্রসহ উত্তর পাওয়ার জন্য চক্রের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
অগ্রিম টাকা পরিশোধের পর প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্র ফাঁস চক্রের অন্যতম হোতা রাইসুল ইসলাম স্বপন ডিবির ছদ্মবেশী পরীক্ষার্থীকে নিয়ে যান। এরপর পরীক্ষার উত্তরপত্রসহ স্বপনকে হাতেনাতে আটক করা হয় বলে তিনি জানিয়েছিলেন।
এরপর পরীক্ষায় আসা প্রশ্নের সঙ্গে সকালে পাওয়া প্রশ্ন ও উত্তর হুবহু মিলে গেলে স্বপনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রথমে রূপালী ব্যাংকের সাভার শাখার শ্রীনগর থেকে জানে আলম মিলনকে এবং পর্যায়ক্রমে অন্যদের গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রশ্নফাঁসের এ খবরের পর বাংলাদেশ ব্যাংক ক্যাশ অফিসার নেওয়ার এ পরীক্ষা বাতিল করেছে।
এছাড়া আহ্ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনায় সরকারি ব্যাংকের কর্মী নিয়োগে দুই দিনের লিখিত পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়।
শনিবার ও ২০ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় ওই দুটি পরীক্ষা বাতিল করার কথা বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম জানান।
আরও পড়ুন