আইডিআরএ চেয়ারম্যান মোশারফকে নিয়ে কী পদক্ষেপ, জানতে চেয়েছে হাই কোর্ট

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান এম মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে পুঁজিবাজারে কোটি কোটি টাকা লেনদেন, দুর্নীতি, অর্থপাচারের অভিযোগের ভিত্তিতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা জানতে চেয়েছে হাই কোর্ট। 

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Nov 2021, 06:59 PM
Updated : 9 Nov 2021, 06:59 PM
দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) আগামী এক মাসের মধ্যে তা জানাতে বলা হয়েছে।

এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানির পর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাই কোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার রুলসহ এ আদেশ দেয়।

মোশাররফ হোসেনের মালিকানাধীন দুটি কোম্পানির প্রভিডেন্ট ও গ্র্যাচুইটি ফান্ড গঠন করে আইন-বিধিবহির্ভূতভাবে পুঁজিবাজারে কোটি কোটি টাকা লেনদেন, দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের অভিযোগ তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।

সেই সঙ্গে মোশারফ হোসেনের স্ত্রী জান্নাতুল মাওয়ার বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগে মামলার নির্দেশ দেওয়া হবে না, রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক বিভাগের সচিব, দুদক, এনবিআর’র চেয়ারম্যান, বিএফআইইউ’র নির্বাহী পরিচালক ও শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী রোকন উদ্দিন মাহমুদ ও মোস্তাফিজুর রহমান খান ও সুমাইয়া ইফরিত বিনতে আহমেদ।

মোশাররফ হোসেন ২০১৮ সালের এপ্রিলে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) সদস্য হিসেবে নিয়োগ পান এবং ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন।

কিন্তু তার আগেই তিনি ২০১৭ সালের ৯ মে যৌথমূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর থেকে ‘লাভস এন্ড লাইভ অর্গানিক লিমিটেড’ নামে একটি কোম্পানির নিবন্ধন নেন বলে রিট আবেদনে বলা হয়। এই কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তিনি নিজে এবং পরিচালক তার স্ত্রী জান্নাতুল মাওয়া।

এরপর ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি ‘গুলশান ভ্যালি এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড’ নামে আরেকটি কোম্পানির নিবন্ধন নেন মোশারফ।

এই কোম্পানি দুটির নামে দুটি করে মোট চারটি এমপ্লয়িজ গ্র্যাচুইটি ও প্রভিডেন্ট ফান্ড গঠন করেন।

আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার মক্কেল (রিট আবেদনকারী) বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পারেন, মোশাররফ হোসেন ওই চারটি ফান্ডের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান হিসেবে আছেন; যা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আইন, ২০২১০ এর ৭ ধারার পরিপন্থি।”

জনস্বার্থে রিট আবেদনটি করেন আবু সালেহ মোহাম্মদ আমিন মেহেদী; তিনি পুঁজিবাজারের একজন বিনিয়োগকারী।

মোস্তাফিজুর বলেন, “মোশাররফ হোসেনের ব্যক্তিগত আয়কর নথিতে নিজেকে ওই দুটি কোম্পানির পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক উল্লেখ করলেও কোম্পানি দুটি কোনো ব্যবসা শুরু করেনি বলেও উল্লেখ করেন। অথচ কোম্পানি দুটির নামে চারটি ফান্ড গঠন করে পুঁজিবাজারে ৪ কোটি টাকার উপরে বিনিয়োগ করেছেন।”

রিট আবেদনকারীর এ আইনজীবীর প্রশ্ন, কোম্পানি দুটি যদি ব্যবসা শুরু করে না থাকে তবে ফান্ডের নামে এত টাকা কীভাবে বিনিয়োগ করেছেন মোশাররফ হোসেন?

ট্রাস্ট আইন অনুযায়ী কোনো ফান্ড থেকে পুঁজিবাজারে সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ বিনিয়োগ করা যায় জানিয়ে মোস্তাফিজুর রহমান খান বলেন, “তিনি বিনিয়োগ করেছেন ৪ কোটি টাকার উপরে। তাহলে এ বিনিয়োগের বিপরীতে মূল ফান্ডের পরিমাণ কমপক্ষে ১২ কোটি টাকা। তাই যদি হয় কোম্পানি দুটির কর্মকর্তা-কর্মচারীর বাৎসরিক বেতন কমপক্ষে ১২০ কোটি টাকা; সে অনুযায়ী কোম্পানি দুটির বাৎসরিক টার্নওভার হওয়া উচিত ৬শ থেকে ১২শ কোটি টাকা।”