সিএনজিচালিত বাসে লাগাতে হবে স্টিকার

ভাড়া বাড়ানোর একদিন পর বৈঠক করে সিএনজিচালিত বাসগুলো আলাদা করে চিহ্নিত করার সিদ্ধান্ত বিআরটিএ নিলেও কত সংখ্যক বাস গ্যাসে চলছে, তা বের করতে পারেনি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Nov 2021, 06:18 PM
Updated : 9 Nov 2021, 06:25 PM

ডিজেলের দাম বাড়ানোর পর পরিবহন মালিকদের দাবির মুখে গত রোববার বাসের ভাড়া ২৭ শতাংশ বাড়ায় বিআরটিএ।

এক্ষেত্রে শুধু ডিজেলচালিত বাসের জন্য নতুন ভাড়া কার্যকর হবে বলে জানান বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার।

তবে ডিজেলচালিতের পাশাপাশি সিএনজিচালিত বাসও বাড়তি ভাড়া নিচ্ছে বলে অভিযোগের প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার বিআরটিএ কার্যালয়ে বাস মালিক-শ্রমিক নেতা এবং পুলিশ ও ঢাকা জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বৈঠকে দুই জ্বালানিতে চালিত বাসগুলো আলাদাভাবে চিহ্নিত করার সিদ্ধান্ত আসে।

নতুনযে ভাড়ার হার ঠিক হয়েছে, তার বেশি আদায়ের অভিযোগ আসায় বাড়তি ভাড়া আদায় বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সিদ্ধান্তও হয়েছে।

বৈঠকের পর বিআরটিএর চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সিএনজিচালিত বাসগুলো অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে, এমন অভিযোগ পেয়েছেন তারা। বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত থেকেও এর প্রমাণ পাওয়া গেছে।

“আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সিএনজিচালিত বাসে স্টিকার লাগিয়ে দেব। বিষয়টি নিয়ে আমরা মালিক সমিতিকে চিঠি দিয়ে দিয়েছি। পাশাপাশি আমরাও বিষয়টি মনিটর করব। আমাদের ম্যাজিস্ট্রেট, ঢাকার ডিসি অফিসের সব ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে থাকবে আগামী পরশুদিন (বৃহস্পতিবার) থেকে। আমাদের চেষ্টা থাকবে কেউ যেন এক টাকাও অতিরিক্ত ভাড়া নিতে না পারে।”

সভায় উপস্থিত একজন কর্মকর্তা বলেন, ভাড়া যেহেতু বেড়েছে কোথায় বেশি নিচ্ছে এবং কীভাবে এটা আদায় করা হচ্ছে, এর সঠিক তথ্য জানার পরে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে।

তিনি জানান, বুধবার পরিবহন মালিক ও শ্রমিকেরা একটি যৌথসভা আহ্বান করেছে। ওই সভায় তারাই ঠিক করবে বাড়তি ভাড়া আদায় বন্ধে তারা কী করবে।

সভায় উপস্থিত থাকা ঢাকা মহানগর পুলিশের (ট্রাফিক) গুলশান বিভাগের উপকমিশনার রবিউল ইসলাম বলেন, “সরকার কর্তৃক পুনর্নির্ধারিত বাস ভাড়া আদায় নিশ্চিত করা, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় রোধে একটি ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।”

সিএনজিচালিত বাস কত?

সিএনজিচালিত বাসের সংখ্যা কত- এ প্রশ্নে নূর মোহাম্মদ বলেন, এ সংক্রান্ত সঠিক তথ্য এখনও জানা যায়নি। তা জানার চেষ্টা করছে বিআরটিএ।

“অনেক বাস সিএনজি থেকে ডিজেলে কনভার্ট করে ফেলা হয়েছে। আমরা সিএনজিচালিত বাসের তথ্য সংগ্রহ করছি। এগুলো যাচাই-বাছাই শেষে সঠিক সংখ্যাটা বলা যাবে। হয়ত দুয়েকদিনের মধ্যে সঠিক সংখ্যাটা বের করা যাবে।”

পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেড় দশক আগে দেশে সিএনজিচালিত বাস আমদানি এবং পুরনো বাসগুলোকে রূপান্তরের হিড়িক পড়ে। তখন বেশিরভাগ বাস আমদানি করা হয় চীন থেকে। পাশাপাশি ভারতীয় টাটা, অশোক লেলেন্ড, আইসার ও স্বরাজ মাজদা কোম্পানির তৈরি সিএনজিচালিত বাস আসতে থাকে। তবে সিএনজিচালিত বাসের ইঞ্জিন দ্রুত অতিরিক্ত গরম হয়ে যাওয়ায় এসব বাস খুব লাভজনক হয়নি। পরে মালিকেরা বাস বিক্রি করে বা বাধ্য হয়ে ডিজেলে রূপান্তর করে ফেলেন। চীনা বাসগুলো এখন আর সড়কেই নেই।

সোমবার রাতে ঢাকার গাবতলীর শাহনাজ রিফুয়েলিং স্টেশনে কথা হয় ক্যাশিয়ার মো. সুমনের সঙ্গে। তিনি বলেন, পাঁচ-ছয় বছর আগে রাতের বেলায় তাদের স্টেশনে সিএনজিচালিত বাসগুলো লাইন দিয়ে গ্যাস নিত। নিউ ভিশন, দেশ বাংলা, একুশে, স্বকল্প, বৈশাখী ইত্যাদি নানা পরিবহনের বাস গ্যাসে চলত। তবে এখন এই কোম্পানিগুলোর কোনটি উঠে গেছে। আর যারা আছে, তারা এখন ডিজেলে গাড়ি চালায়।

মাজার রোডের ট্রেড কনসোর্টিয়াম সিএনজি স্টেশনের কর্মী মো. দুলাল বলেন, “এখন আর বাসগুলো সিএনজিতে চলে না। মানিকগঞ্জ রুটের শুকতারা, এসবি লিংক, জনসেবা ইত্যাদি পরিবহনে কিছু পুরনো বেডফোর্ড ও টাটা ৯০৯ মডেলের বাস চলে। সেগুলো সিএনজিতে রূপান্তর করা হয়েছিল অনেক আগে। মালিক এখনও সেভাবেই চালাচ্ছে। এর বাইরে ৭ ও ৮ নম্বর রুটের কিছু বাস সিএনজিতে চলে।”

সোমবার রাতে ইন্ট্রাকো ফিলিং স্টেশনে গ্যাস নিচ্ছিল ৮ নম্বর (গাবতলী-যাত্রাবাড়ী) রুটের একটি বাস। সেই বাসের চালক মো. মোবিনের দাবি, তারা ভাড়া বাড়াননি। ডিজেলচালিত বাসগুলো গাবতলী থেকে যাত্রাবাড়ীর ভাড়া ৬০ টাকা করে নিলেও তারা নিচ্ছেন আগের মতো ৪০ টাকা করেই।

এই বাসচালক জানান, সিএনজিচালিত বাসে জ্বালানি খরচ ডিজেলের চেয়ে কম। দেড় হাজার টাকার গ্যাসে তিনি দিনে গড়ে ছয় বার গাবতলী থেকে যাত্রাবাড়ী যাতায়াত করতে পারেন। দাম বাড়ার আগে এই দূরত্বে ডিজেলচালিত বাসের জ্বালানি খরচ হত প্রায় ১৮০০ টাকা। ডিজেলের দাম বাড়ায় খরচ এখন আরও বেড়েছে।

তবে সিএনজিচালিত গ্যাসের গাড়ির মেরামত খরচ অনেক বেশি বলে জানান তিনি।

একই পাম্পে দাঁড়ানো বৈশাখী পরিবহনের একটি বাসের মালিক শামসুজ্জোহা এসেছিলেন দিনের হিসেব নিতে।

তিনি বলেন, “সিএনজিচালিত গাড়িগুলোর রক্ষণাবেক্ষণে খুবই সমস্যার। এগুলো দ্রুত চলতেও পারে না, ইঞ্জিন ওভারহিট হয়, সময়মতো সব জায়গায় গ্যাসও পাওয়া যায় না।”

এসব কারণে গ্যাসচালিত গাড়িগুলো ডিজেলে ফিরে গেছে বলে জানান তিনি।

মঙ্গলবার সকালে নরসিংদীর সাহেপ্রতাপ এলাকার কয়েকটি সিএনজি ফিলিং স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, সব স্টেশন থেকে বিভিন্ন রুটের বাস গ্যাস ভরে নিচ্ছে।

ভূইয়া ফিলিং স্টেশন থেকে নরসিংদী থেকে গুলিস্তান রুটের মেঘালয় লাক্সারি পরিবহনের কয়েকটি বাস গ্যাস ভরে বলে জানান এই ফিলিং স্টেশনের ক্যাশিয়ার মনির হোসেন।

গ্যাসচালিত গাড়ির সংখ্যা কেমন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “গ্যাসের গাড়ি নাই বললেই তো হয় না। একদিনে তো আর সব বাস ডিজেলের করে ফেলা সম্ভব না। আমাদের স্টেশন থেকেই অনেক পরিবহনের বাস সিএনজি নিয়ে যায়।”

পাশের আরেকটি ফিলিং স্টেশনের ক্যাশিয়ার মো. আশিক বলেন, পিপিএল পরিবহনের বেশিরভাগ বাস তাদের ফিলিং স্টেশন থেকে গ্যাস নেয়।

ডিজেলচালিতের পাশাপাশি গ্যাসচালিত বাসের ভাড়াও যে বেড়েছে, তার প্রমাণ মিলল সেখানে গ্যাস নিতে আসা পিপিএল পরিবহনের একটি বাসের সহকারী লোকমান হোসেনের কথায়।

তিনি বলেন, নরসিংদী থেকে মহাখালী পর্যন্ত বাসের ভাড়া ১০ টাকা বাড়িয়েছেন তারা। আগে এই রুটের ভাড়া ছিল ১১০ টাকা। এখন ১২০ টাকা।

“আমাদের অনেক গাড়ি ডিজেলেও চলে। কিন্তু দুই রকম গাড়ির ভাড়াই ১০ টাকা করে বাড়ছে।”