সরকারি-বেসরকারি অফিস খোলা থাকায় রাস্তায় নেমে হন্যে হয়ে গাড়ি খুঁজতে দেখা গেছে কর্মজীবিদের। রাস্তার মোড়ে মোড়ে ভিড় করে গাড়ি থামানোর চেষ্টাও করেছেন অনেকে।
সুযোগ বুঝে অটোরিকশা, মোটরসাইকেল ও রিকশা চালকরা বাড়তি ভাড়া আদায় করে যাচ্ছে। বাধ্য হয়েই হেঁটে কর্মস্থলে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছেন অনেকে।
রাজধানীর আদাবরে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে কিছু না পেয়ে ক্ষুব্ধ শরিফুর রহমান নামে একজন বললেন, “আজ তিনদিন ধরে অরাজক অবস্থা চলছে। কেউ কি দেখার আছে? সরকারের লোকজন বক্তৃতা দিচ্ছে। বাস মালিকরা ভাড়া বাড়ানোর পাঁয়তারায় আছে। ভাড়া বাড়বে। জনগণের পকেট থেকে টাকা যাবে। আমরা জিম্মি এদের কাছে।”
শরিফ বনানীতে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। শনিবার তার অফিস যেতে দেরি হয়েছে। রোববারও সময়মত পৌঁছাতে পারবেন না বলে উদ্বিগ্ন।
নাবিস্কো যাওয়ার জন্য মিরপুরের কালশী মোড়ে এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে দাঁড়িয়েও গাড়ি পাচ্ছিলেন না সাবরিনা ইসলাম।
তিনি বলেন, “সিএনজি যেগুলো আসছে, বেশিরভাগেই যাত্রী আছে। যেগুলো খালি, তারা নাবিস্কো যেতে চায় না, বলছে ওই দিকে রাস্তায় জ্যাম। মোটরসাইকেলও পাচ্ছি না। প্রাইভেট কারগুলোও যাচ্ছে অন্য রুটে। জানি না আজকে অফিসে যেতে পারব কিনা।”
মিরপুর ইসিবি চত্বর থেকে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে একটি অটোরিকশায় উঠতে পেরেছেন শিকদার আলম।
তিনি বলেন, “একটা গাড়ি বা সিএনজি আসলে সব মানুষ ঝাঁপায় পড়ে। এরা জনপ্রতি ভাড়া নিচ্ছে বেশি। ৫০ টাকা করে এয়ারপোর্ট যেতাম, সেটা নিচ্ছে ১০০ টাকা। চারজন যাবে, প্রত্যেকের কাছ থেকে ১০০ টাকা করে নেবে।”
এ বিষয়ে ওই অটোরিকশার চালকের ভাষ্য, “আমাদেরও সংসার চালানো লাগে। আমি তো একেকজনের কাছ থেকে ৪০০ টাকা নিচ্ছি না। নিচ্ছি ১০০ টাকা। এতে তো ওনাদের লাভই।”
সকালে শ্যামলীতে একটি প্রাইভেটকার ঘিরে ধরেন অন্তত ১০ জন যাত্রী। তাদের কয়েকজন মহাখালীগামী ওই গাড়িতে ওঠার সুযোগ পান।
বাদ পড়াদের একজন কেফায়েত উল্লাহ অনেকটা বিরক্তি নিয়ে বলেন, “কেন যাচ্ছি, কোথায় যাচ্ছি এইসব আর বলতে ভালো লাগে না। কারো কথায় কোন নিউজে এই ভোগান্তি কমবে না। উনারা যখন চাইবেন তখনই ধর্মঘট বন্ধ হবে।”
সকাল মোহাম্মদপুর, আদাবর এলাকার রাস্তা ব্যক্তিগত গাড়ি আর রিকশার দখলে দেখা গেল। বিভিন্ন জায়গড়ায় রিকশা চালকদের সঙ্গে যাত্রীদের বচসাও হয়েছে।
উত্তরা থেকে সচিবালয়ে আসা খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মচারী আব্দুর রহমান জানালেন, চারজন মিলে ‘শেয়ারে’ অটোরিকশায় করে অফিসে এসেছেন, জনপ্রতি দিতে হয়েছে ২০০ টাকা করে।
আজিমপুর থেকে সচিবালয়ে আসা সিদ্দিকুর রহমান জানালেন ৬০ টাকার দূরত্বে তাকে ১০০ টাকা রিকশাভাড়া দিতে হয়েছে।
কাঁটাসুরের বাসিন্দা তাসনিম ইসলাম মতিঝিলে একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করেন। মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রতিদিন যাতায়াত করেন তিনি। গত দুদিন অফিসে যেতে হয়নি, কিন্তু রোববার পড়েছেন বিপাকে।
“একটা বাসও নেই। সিএনজির ড্রাইভারদের সঙ্গেতো কথাই বলা যায় না। একজন যেতে চেয়েছিল, ভাড়া চেয়েছে ৫০০ টাকা। এত টাকায় যাওয়া যায়?”