সদরঘাটে এসে তারা দেখেন, লঞ্চ নেই

পরিবহন ধর্মঘটে বাস নেই, অটোরিকশায় ৮০০ টাকা ভাড়া দিয়ে টঙ্গীর আবদুল্লাহপুর থেকে ঢাকার সদরঘাটে এসে ভাবছিলেন, কষ্টের বুঝি অবসান হল। কিন্তু হল উল্টোটা, দেখলেন কোনো লঞ্চই নেই। 

কামাল তালুকদার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Nov 2021, 01:20 PM
Updated : 6 Nov 2021, 01:21 PM

চোখের চিকিৎসা করিয়ে অশীতিপর বাবা শেখ হাবিবুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে ঝালকাঠি যাবেন ষাট বছরের বৃদ্ধ শেখ আবদুল বারেক। কিন্তু শনিবার বিকালে সদরঘাটে পৌঁছে আক্ষরিক অর্থেই চোখে ধোঁয়াশা দেখছিলেন।

টার্মিনালে থাকা বারেক বললেন, “আমরা খুব গরিব। আবদুল্লাহপুরে যে আত্মীয়ের বাসায় ছিলাম, সে রাস্তার পাড়ে চা বিক্রি করে। আমাদেরকে দুই হাজার টাকা দিয়েছিল অনেক কষ্ট করে। এই শহরে আমাদের আর কেউ নেই। এখন আবদুল্লাহপুর ফিরে যাওয়াও সম্ভব না।”

পিরোজপুরের হুলার হাটের দক্ষিণ রানীপুরের মাতাপাড়া থেকে চার দিন আগে বাবা-ছেলে ঢাকা এসেছিলেন চোখের চিকিসা করাতে। তা করিয়েছেনও।

“চক্ষে ভালো দেখতেছি, কিন্তু এখন তো সব কিছুই ধোঁয়াশা,” বলেন বারেক।

লঞ্চ চলাচল বন্ধ দেখে অশীতিপর বাবা শেখ হাবিবুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে বিপদে পড়েন ঝালকাঠিগামী শেখ আবদুল বারেক।

ডিজেলের দাম বাড়ানোর পর শুক্রবার বাস-ট্রাক ধর্মঘট শুরু হলেও লঞ্চ চলছিল। ফলে সড়কে নানা দুর্ভোগ মেনে নিয়েও লঞ্চে উঠতে পারছিলেন দক্ষিণাঞ্চলগামীরা।

শনিবার সকাল থেকেও সদরঘাট থেকে ৩০টি লঞ্চ ছেড়ে গিয়েছিল বিভিন্ন গন্তব্যে। কিন্তু বিকালে বন্ধ হয়ে যায় লঞ্চ চলাচল।

বিআইডব্লিউটিএর পরিবহন পরিদর্শক মো. হুমায়ূন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সকাল থেকে ৩০টি লঞ্চ সদরঘাট থেকে ছেড়ে যায়। আরও ৩৫টি লঞ্চ পন্টুনে ছিল। কিন্তু বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে লঞ্চগুলো পন্টুন থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়।

জানতে চাইলে রিয়াদ-৪ লঞ্চের মালিক মামুনুর রশিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভাড়া না বাড়ালে লঞ্চ চালানো সম্ভব নয়। তাই সব মালিক লঞ্চ না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”

তবে এটা লঞ্চ মালিক সমিতির ‘সিদ্ধান্ত নয়’ বলে সমিতির পরিচালক মামুন জানান। এ বিষয়ে সমিতির শীর্ষনেতাদের বক্তব্য তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি। 

লঞ্চ ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর সঙ্গে শনিবার বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। তবে সেই বৈঠক হয়নি বলে জানান মামুন।

ভোলার লালমোহন থেকে বৃহস্পতিবার সাত ব্যাংকে নিয়োগের পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন অপু। পুরান ঢাকার এক বন্ধুর বাসায় ছিলেন। বাড়ি ফিরতে শনিবার বিকালে সদরঘাটে এসে দেখেন লঞ্চ চলছে না।

অপুর মতো শত শত মানুষ পন্টুনের বিআইডব্লিউটিএ অফিসে এসে জানতে চাচ্ছিল- ‘লঞ্চ কখন থেকে চলবে?’, ‘কাল চলবে কি না?’।

হাজেরা নামে মধ্য বয়সী এক নারী অসুস্থ ননদকে দেখতে ঝালকাঠিতে যাওয়ার জন্য এসেছিলেন। তার প্রশ্ন বলেন, বাস বন্ধ থাকায় লঞ্চে তো যাত্রী বেশি, মালিকদের  তো লোকসান হওয়ার কথা না।

লঞ্চশূন্য সদরঘাটে শনিবার বিকালে যাত্রীদের অপেক্ষা।

 

তবে সুন্দরবন গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক আবুল কালাম ঝন্টু বলছেন, সরকার ডিজেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে দেওয়ায় তাদের পক্ষে লঞ্চ চালিয়ে যাওয়া সম্ভবপর নয়।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঢাকা থেকে বরিশাল সুন্দরবন-১০ লঞ্চটি যেতে আসতে ৮ হাজার লিটার ডিজেল লাগে। ১৫ টাকা বেশি হওয়ায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা বেশি লাগছে। আমার কোম্পানির চারটি লঞ্চ চলে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন লোকসানের মাত্রা।”

লঞ্চ মালিক সমিতি ভাড়া শতভাগ বা দ্বিগুণ করার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কাছে।

তাদের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বর্তমান ভাড়ার উপর ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ১.৭০ টাকার স্থলে ৩.৪০ টাকা এবং ১০০ কিলোমিটারের ঊর্ধ্বে ১.৪০ টাকার স্থলে ২.৮০ টাকা নির্ধারণ করতে হবে।

বাসের ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে রোববার বিআরটিএ বৈঠক ডেকেছে। সেই বৈঠকের আগ পর্যন্ত ধর্মঘট না তোলার কথা জানিয়েছে বাস মালিকরা।

ট্রাক মালিক ও শ্রমিক নেতারা শনিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বলেছেন, দাবি না মানলে তারাও ধর্মঘট তুলবে না।