ঢাকায় সিএনজিচালিত বাস বন্ধ হল কেন, প্রশ্ন যাত্রীদের

বাস ধর্মঘটের কারণে ঢাকার সড়কে জনভোগান্তি গড়িয়েছে দ্বিতীয় দিনে। ডিজেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে বাস বন্ধ হলেও সিএনজিচালিত বাস কেন ধর্মঘটে গেল, সেই প্রশ্ন তুলেছেন অনেক যাত্রী। 

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Nov 2021, 06:47 AM
Updated : 7 Nov 2021, 02:59 AM

বেসরকারি অফিসের কর্মীদের শনিবার অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করে অফিস ধরতে হয়েছে। পরীক্ষার্থীদেরও পড়তে হয়েছে দুর্ভোগে।

ডিজেলের দাম বাড়ার প্রতিবাদে শুক্রবার থেকে এই ধর্মঘট ডেকেছে বাস-ট্রাক মালিক সমিতির নেতারা।

পরিবহন ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে রোববার বিআরটিএ সভা ডেকেছে। সেই পর্যন্ত বাস-ট্রাক না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মালিকরা।

সরকার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়েছে। কিন্তু এই দফায় অন্য কোনো জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়নি।

ঢাকার বেসরকারি কোম্পানিগুলোর অনেক বাস সিএনজিতে চললেও সেগুলোও সড়কে দেখা যাচ্ছে না।

মহাখালীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন আব্দুর রহমান। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখান থেকে আলিফ পরিবহন ছাড়ে। প্রতিদিনি তাতেই যাতায়াত করি। কিন্তু সিএনজিচালিত এই বাসও বন্ধ।

“সিএনজির দাম তো বাড়ায়নি। আমাদের জিম্মি করে ভাড়া বেশি নিতেই এই ধর্মঘট। সরকারও কিছু করছে না।”

অফিসগামী কিংবা জরুরি প্রয়োজনে যারা বেরিয়েছেন, তাদের মোটরসাইকেল, অটোরিকশা কিংবা রিকশায় বাড়তি ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে হচ্ছে, গুণতে হচ্ছে বেশি ভাড়া। অনেকে হেঁটেও পথ ধরেন।

রহমান সকাল সাড়ে ৮টায় মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদ এলাকা থেকে চেষ্টা করছিলেন অটোরিকশা অথবা মোটর সাইকেলে ওঠার জন্য। কিন্তু ভাড়া বেশি হওয়ার জন্য হাঁটা শুরু করেন।

তিনি বলেন, “মোটর সাইকেল কম। অ্যাপে কাউকে পাচ্ছি না। ভাড়ায় যারা যেতে চাইছে তারা অনেক টাকা চাইছেন। এই যে আমার বেশি টাকা খরচ হচ্ছে, এটা কি সরকার দেবে, না কি আমার অফিস?”

সরকারি সংস্থা বিআরটিসির বাস রাস্তায় চলাচল করলেও তাতে প্রচুর ভিড়। উঠতে পারা যেন যুদ্ধ জয়।

মোহম্মদপুর শিয়া জাপান-বাংলাদেশ গার্ডেন সিটির সামনে অপেক্ষারত মাহমুদুর রহমানের সঙ্গে কথা হয় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।

আলিফ পরিবহনের নিয়মিত যাত্রী মাহমুদ বলেন, “আমি এখান থেকে প্রতিদিন বাসে করে গুলশান-১ যাই। বাসা থেকে অফিস যেতে প্রতিদিন রিকশাভাড়াসহ ৫০-৬০ টাকার মতো খরচ পড়ে।

“আজ বাস নেই। সিএনজি চারশো টাকা চাইছে। মোটারসাইকেল আড়াইশোর নিচে যেতে চাইছে না। একজনকে অ্যাপে পেয়েছি। কিন্তু আসার পর বলছে অ্যাপ থেকে বেশি ভাড়া দিতে হবে। বাধ্য হয়ে উবার কার ডেকেছি। তাও ৩৫০ টাকা ভাড়া দেখাচ্ছে। উপায় নেই। অফিসে দেরি হলে আবার বেতন কাটবে। এসবতো কেউ দেখে না।”

তিনিও প্রশ্ন করেন, “ডিজেলের দাম বাড়াল, গ্যাসচালিত গাড়ি বন্ধ হল কেন? জবাব নেই। কী অপরাধ আমাদের যে বাড়তি খরচ করে অফিস করতে হবে।”

শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন অফিসগামীরা না থাকলেও বেশ কয়েকটি নিয়োগ পরীক্ষা থাকায় পরীক্ষার্থীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়।

শনিবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সাত কলেজের বিজ্ঞান ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। বাস না থাকায় সকাল ১০টার ভেতর পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছাতে বেগ পেতে হচ্ছে পরীক্ষার্থীদের।

সরকারি তিতুমীর কলেজে পরীক্ষা দিতে আসা এক পরীক্ষার্থীর অভিভাবক তাজুল ইসলাম মেয়েকে নিয়ে আসেন মোহাম্মদপুর থেকে। ছুটির দিন হলেও বাসা থেকে বেরিয়েছিলেন সাড়ে ৭টায়।

তাজুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অত সকালে বেরিয়েছি যাতে পরিবহন ঠিকমত পাই। কিন্তু সিএনজি ভাড়া চাইছে ৩৫০ টাকা। অনেক সিএনজি ড্রাইভার যেতেও চাইছেন না। মানুষের ভোগান্তি দেখলে এরা বসে বসে মজা নেয়। ভাড়ার মোটরসাইকেলেও তো যেতে পারছি না।”

সাত কলেজের ভর্তিচ্ছু অন্তর নারায়ণগঞ্জ থেকে পরীক্ষা দিতে ঢাকায় এসেছেন। তার পরীক্ষা কেন্দ্র ইডেন মহিলা কলেজ।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সকাল বেলা ট্রেনে কমলাপুর এসেছি। কোনো ঝামেলা হয়নি। এখন আবার ফিরবো। কিন্তু সহজে যেতে পারব কি না, জানি না। কত ভাড়া গুণতে হয় কে জানে?”

গুলিস্তান মোড়ে বিআরটিসি বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন এক নারী। নারায়ণগঞ্জ যাবেন তিনি, কিন্তু ভিড়ের মধ্যে বাসে উঠতে পারবেন কি না, সেই আশঙ্কা নিয়েই দাঁড়িয়েছিলেন তিনি।

মোহাম্মদপুর, এলিফ্যান্ট রোড, পল্টন, গুলিস্তানসহ বিভিন্ন রাস্তায় বিআরটিসির বাস ছাড়া আর কোনো বাস ছিল না। সড়কে রিকশা, সিএনজি, ব্যক্তিগত গাড়িরই জট বেশি।