শুক্রবার সকালে কাজে যাওয়ার জন্য রাস্তায় বেরিয়ে বিপাকে পড়া মিরপুরের একটি শপিং মলের বিক্রয়কর্মী তরিকুল ইসলাম বললেন, “এভাবে হুটহাট বাস বন্ধ করে দেওয়া তো ঠিক না। সমস্যা হলে তারা আলোচনা করে সমাধান করুক, আমাদের জিম্মি করছে কেন?”
বাস বন্ধ থাকায় তরিকুলকে বহুগুণ বেশি ভাড়া দিয়ে রিকশায় করে কর্মস্থলে যেতে হয়েছে, সেটি তার ক্ষোভের একটি কারণ। কিন্তু পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা তাদের দাবি আদায় করতে যেভাবে হুট করে মানুষকে বিপদে ফেলে দিলেন, সেটা নিয়েই তার মূল আপত্তি।
ডিজেলের দাম বাড়ায় যানবাহনের ভাড়ার পাশাপাশি নিত্যপণ্যের দামও যে বাড়বে, সেটা তরিকুলও জানেন এবং বিষয়টি নিয়ে তিনি নিজেও উদ্বিগ্ন। কিন্তু পরিবহন সমিতিগুলো কেন মানুষকে ‘শাস্তি’ দিচ্ছে, তা তার বোধগম্য নয়।
শুক্রবার সরকারি ছুটির দিন হলেও জরুরি প্রয়োজনে অনেকেই ঘরের বাইরে বেরিয়ে ভোগান্তির শিকার হয়েছে। যাদের অন্য জেলায় যাওয়ার প্রয়োজন ছিল, তাদের ফিরে যেতে হয়েছে বাস টার্মিনাল থেকে। এই সুযোগে ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন রিকশা, অটোরিকশা আর ভাড়ার মোটরসাইকেল চালকরা।
মিরপুরের কালশী মোড়ে গাড়ির অপেক্ষায় থাকা শিবলী আহমেদ বললেন, “পুরবী থেকে রিকশা নিয়ে এখানে এলাম। মগবাজারে যেতে মোটরসাইকেলে অনেক টাকা ভাড়া চাইছে। ভাবছি কয়েকজন মিলে অটোরিকশায় যদি যাওয়া যায়।”
মিরপুর ১১ নম্বরের বাসিন্দা সজীব জানালেন, পারিবারিক কাজে তাবে মাটিকাটার ইসিবি চত্বরে যেতে হবে। রিকশা ভাড়া বেশি চাইছে বলে হেঁটেই রওনা হয়েছেন।
সরকারি ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষা দিতে বাড্ডায় যেতে বকশিবাজারে যানবাহনের অপেক্ষায় ছিলেন মারুফ হোসেন। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বললেন, প্রায় এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও কোনো বাহনে উঠতে পারেননি।
নূর মোহাম্মদ নামের এক অটোরিকশা চালক বললেন, এমনিতে ছুটির দিন যাত্রী পাওয়া যায় কম। তবে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত পাঁচটা ‘খ্যাপ’ পেয়েছেন। সবগুলোই বাসস্ট্যান্ড বা লঞ্চঘাটে।
দূরপাল্লার বেশিরভাগ যানবাহন বন্ধ থাকলেও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ডেমরা এলাকায় কিছু বাস-ট্রাক চলতে দেখা গেছে। তবে বাসে বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।
ডেমরার স্টাফ কোয়ার্টার মোড়ে আয়নাল হোসেন নামে একজন বললেন, হোমনা থেকে অটোরিকশা আর রিকশায় ভেঙে ভেঙে এসেছেন, যাবেন মিরপুর। সেজন্য একটি পিকআপে উঠেছেন।
নগরীর রামপুরা, মালিবাগ, মৌচাক এলাকাতেও ব্যক্তিগত গাড়ি, অটোরিকশা ও রিকশা ছাড়া কোনো গণপরিবহন চলতে দেখা যায়নি। বাধ্য হয়ে অনেক পায়ে হেঁটেই গন্তব্যে রওনা হয়েছেন। রামপুরার হাজীপাড়ার বাসিন্দা কামরুল ইসলাম তেমনই একজন।
রামপুরা থেকে সদরঘাটগামী শেখ আফজাল হোসেন বাস না পেয়ে রিকশা নিলেও ডিজেলের দাম এক ধাক্কায় এত বৃদ্ধি এবং ধর্মঘট ডেকে মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলার বিষয়টি মানতে পারছেন না।
শুক্রবার অফিস-আদালত বন্ধ থাকলেও সাত কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে ২০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীকে রাস্তায় বের হতে হয়েছে সকালেই। এছাড়া দিনের বিভিন্ন সময়ে অন্তত দুই ডজন সরকারি দপ্তরের নিয়োগ পরীক্ষা রয়েছে। ফলে চাকরিপ্রত্যাশীদেরও যানবাহন সঙ্কটে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের বিষয়টি আমরা বুঝি। তাদের প্রতি আমাদের সিমপ্যাথি আছে। কিন্তু পরিবহন মালিকদের তো আর উপায় নাই।”
আরও পড়ুন