‘এভাবে পরীক্ষা দেওয়া যায়?’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সাত কলেজের ভর্তি পরীক্ষা সকাল ১০টায় শুরু হয়ে গেলেও পরীক্ষার্থী হাবীবা আক্তার ঢাকা কলেজে কেন্দ্রে পৌঁছালেন সোয়া ১০টার দিকে। ডিজেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে বাস বন্ধ থাকায় মিরপুর ১০ নম্বর সেকশন থেকে তাকে সাড়ে সাত কিলোমিটার পথ পেরিয়ে তাকে আসতে হয়েছে রিকশায় করে।

নিজস্ব প্রতিবেদকও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Nov 2021, 06:53 AM
Updated : 5 Nov 2021, 07:17 AM

হন্তদন্ত হয়ে পরীক্ষার হলে ঢোকার পথেই বললেন, “সকাল সাড়ে ৮টায় বাসা থেকে বের হয়েও যথাসময়ে পৌঁছাতে পারলাম না। দাঁড়িয়ে থেকে সিএনজি পেলাম না, রিকশায় এত দূর… হঠাৎ বাস বন্ধ করে এরকম হয়রানির মানে হয় না।"

ঢাকার সাতটি কলেজে শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত বাণিজ্য ইউনিটের এই ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে আবেদন করেছিলেন ২৩ হাজার ৭০০ জন। তাদের একটি বড় অংশকে পরীক্ষা দিতে এমন ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।

গাজীপুরের নুসরাত জাহানকে এই ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ কেন্দ্রে আসতে হয়েছে অটোরিকশা ভাড়া করে। 

চোখেমুখে ক্ষোভ নিয়ে বললেন, “অনেক টাকা খরচ করে আসতে হল। সবাই তো ঢাকায় থাকে না। তাদের যে কি ভোগান্তি হচ্ছে, বলে বোঝানো যাবে না। আমরা পরিচিত কয়েকজন পরীক্ষা দিতেই আসেনি।”

ফরিদুর রহমান নামের আরেক পরীক্ষার্থী জানালেন, আশুলিয়া থেকে মিরপুরে পৌঁছাতে কয়েক দফা গাড়ি বদলানোর পর কিছুটা পথ তাকে হাঁটতেও হয়েছে।

“এভাবে পরীক্ষা দেওয়া যায়? এমন সময় বাস বন্ধের কথা জানালো যে কিছুই করার ছিল না। আগে থেকে জানালে হয়তো কেন্দ্রের আশেপাশে কোথাও থাকার চেষ্টা করতাম।”

পরিবহন ধর্মঘটের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সাত কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে শুক্রবার ভোগান্তি পোহাতে হয় শিক্ষার্থীদের।

সরকার বুধবার মধ্যরাত থেকে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানোর পর বৃহস্পতিবার বিকালে ধর্মঘটে যাওয়ার ঘোষণা দেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। ফলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অনেকেই দুশ্চিন্তায় পড়েন।

তাদের অনেকেই ভেবেছিলেন, পরীক্ষা হয়ত পেছানো হবে। কিন্তু ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ ও সাত কলেজের সমন্বয়ক অধ্যাপক আই কে সেলিম বৃহস্পতিবার রাতে জানান, পরীক্ষা নির্ধারিত সময়েই হবে।

এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার সকালে রাস্তায় নেমেই সমস্যায় পড়তে হয় পরীক্ষার্থীদের। নগর পরিবহনের বাস এদিন রাস্তায় নামেনি। ছুটির দিনে অফিস বন্ধ থাকলেও কয়েকটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ পরীক্ষা থাকায় অনেককেই বের হতে হয়েছে। সকালে সড়কের মোড়ে মোড়ে ছিল তাদের ভিড়।  

বিআরটিসির কিছু বাস চলতে দেখা গেলেও ঠাসা ভিড়ে তাতে ওঠার উপায় ছিল না। এই সুযোগে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল, অটোরিকশা এবং রিকশার ভাড়া কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন চালকরা।

আজিমপুর থেকে মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ কেন্দ্রে ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা কাকলী আক্তারের বাবা বশির তালুকদার প্রশ্ন তুললেন সরকারের ভূমিকা নিয়েও।

“শুক্রবার অনেক পরীক্ষা থাকে। এদিন তো হুট করে ধর্মঘটটা না দিলে পারতো। ছেলেমেয়েদের এত এত টাকা খরচ করে এত কষ্ট করে পরীক্ষাটা দিতে হল। সরকার চাইলে তো এটা বন্ধ করতে পারতো।”

এ পরীক্ষার কেন্দ্র ছিল ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, সরকারি কবি নজরুল কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজে। সব জায়গাতেই ভোগান্তির চিত্র ছিল একইরকম।

মিরপুর ১ থেকে ছোট বোন মেহেরুন আক্তার স্বর্ণাকে নিয়ে সকালে ঢাকা কলেজ কেন্দ্রে আসেন মাহমুদুল হাসান।

তিনি বলেন, “ভোগান্তির কোনো শেষ নেই। অনেক্ষণ রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকে সিনএনজি দিয়ে আসতে পেরেছি। ৩০ টাকার ভাড়া ৩০০ টাকা দিতে হল।"

পরিবহন ধর্মঘটের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সাত কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে শুক্রবার ভোগান্তি পোহাতে হয় শিক্ষার্থীদের।

সাত কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে একদিন আগেই ঢাকায় এসেছিলেন কুমিল্লার রাহাতুল ইসলাম। মুগদায় এক আত্মীয়র বাসা থেকে সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে আসেন তিনি।

তিনি বলেন, “মুগদা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রিকশায় আসতে অনেক সময় লাগে। রাইড শেয়ারিংয়ের মোটরবাইকে করে এসেছি। মনে হচ্ছে কোনো জরুরি অবস্থায় পরীক্ষা দিতে এসেছি।"

গাজীপুরের আসিফ আকরামও একদিন আগে উত্তরায় ভাইয়ের বাসায় চলে এসেছিলেন ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে। কিন্তু উত্তরা থেকে ঢাকা কলেজ কেন্দ্রে পৌঁছাতেও তাকে ভুগতে হয়েছে অনেক।

আসিফ বলেন, “বাস তো নেই, অনেকক্ষণ চেষ্টা করে পেরে রাইড শেয়ারে আসতে হয়েছে। গাজীপুরে থাকলে তো পরীক্ষাই দিতে পারতাম না আজকে।"

বাস বন্ধ থাকায় ভোগান্তি হলেও তাতে পরীক্ষায় উপস্থিতিতে ‘তেমন প্রভাব পড়েনি’ বলে দাবি করলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান।

ঢাকা কলেজ কেন্দ্র ঘুরে দেখে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আমরা কয়েকটি কেন্দ্র পরিদর্শন করে পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা প্রশ্নের মান এবং আসন বিন্যাস নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে। স্বাস্থ্যবিধি মানতে দূরত্ব বজায় রেখে পরীক্ষার্থীদের আসন বিন্যাস করা হয়েছে। সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশও ভালো। এটিই আমরা ধরে রাখার চেষ্টা করছি।"