রাস্তায় বাস নেই, ভোগান্তিতে মানুষ

তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘটে ঢাকার রাজপথ থেকে উধাও হয়ে গেছে বাস।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Nov 2021, 04:06 AM
Updated : 5 Nov 2021, 05:59 AM

শুক্রবার ছুটির দিনেও বিভিন্ন প্রয়োজনে রাস্তায় নেমে যাত্রীরা পড়ছেন চরম ভোগান্তিতে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সাত কলেজের ভর্তি পরীক্ষা এবং দুই ডজন সরকারি প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ পরীক্ষার জন্য বাসা থেকে বেরিয়ে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কেন্দ্রে পৌঁছাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে পরীক্ষার্থীদের।

এই সুযোগে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল, অটোরিকশা এবং রিকশার ভাড়া দ্বিগুণ বেড়ে গেছে।

শুক্রবার সকালে রাজধানীর শ্যামোলী স্কয়ারে বহু মানুষকে যানবাহনের আশায় অপেক্ষা করতে দেখা যায়।

বাধ্য হয়েই কেউ কেউ বাড়তি ভাড়া দিয়ে অটোরিকশা বা মোটর সাইকেলে চড়ে রওনা হচ্ছিলেন গন্তব্যের পথে।

সাত কলেজের ভর্তি পরীক্ষার্থী সানজিদা জানান, সকালে আদাবর থেকে নিউ মার্কেট যাওয়ার জন্য শ্যামলীতে বাস না পেয়ে তিনি বিপাকে পড়ে যান। অনেক্ষণ অপেক্ষা করেও কোনো গাড়ি ধরতে পারেননি। 

ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, সরকারি কবি নজরুল কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজে সকাল ১০টা থেকে ১১টা বাণিজ্য ইউনিটের  ভর্তি পরীক্ষা হওয়ার কথা। মোট ২৩ হাজার ৭০০ জন শিক্ষার্থী এই ইউনিটের পরীক্ষায় অংশ নিতে আবেদন করেছেন। 

সকাল ৯ টার দিকে আগারগাঁও থেকে শ্যামলী হয়ে বিআরটিসির একটি গাবতলীগামী বাস শ্যামলী শিশুমেলার সামনে দাঁড়ায়। যাত্রীতে ঠাসা ওই গাড়িতে আরো জনাবিশেক মানুষ ঠেলাঠেলি করে ওঠার চেষ্টা করে।

শ্যামলী থেকে সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে যাওয়ার জন্য রিকশা ভাড়া চাওয়া হচ্ছে ১২০ টাকা থেকে দেড়শ টাকা। মোটরসাইকেলও চাওয়া হচ্ছে একই ভাড়া।

সেখানে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের কনস্টেবল সুরুজ্জামান বলেন, “আজ সিএনজি, মোটরসাইকেলওলাদের পোয়াবারো। যে যেমন পারছে তেমন ভাড়া চাচ্ছে। যাত্রীরাও বাধ্য হয়ে উঠছে।”

রহিমা আক্তার নামে এক তরুণী জানালেন, সকাল সাড়ে ১০টায় কাকরাইলের উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলে ডিপিডিসির নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেবেন তিনি। কিন্তু বাস না পেয়ে বাধ্য হয়ে মোটরসাইকেলে যাচ্ছেন।

শাহিন আলম নামে আরেক তরুণকে দেখা গেল ভাড়ায় মোটরসাইকেলে উঠছেন। সকাল ১০টার ধানমণ্ডির করিমুন্নেছা কলেজে তার পরীক্ষায় বসার কথা।

সরকার বুধবার মধ্যরাত থেকে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানোর পর বৃহস্পতিবার ধর্মঘটে যাওয়ার ঘোষণা আসে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের পক্ষ থেকে।

বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন এবং বাংলাদেশ ট্রাক-কভার্ড ভ্যান ড্রাইভার ইউনিয়নের পক্ষ থেকে বলা হয়, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার অথবা ভাড়া বাড়ানো না হলে শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে সারাদেশে বাস এবং পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকবে।

বিআরটিএর চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বৃহস্পতিবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, ভাড়া বাড়াতে মালিকদের কাছ থেকে আবেদন পেয়েছেন তারা। সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে রোববার বৈঠক ডাকা হয়েছে।

তার আগে বাস চলাচল ‘স্বাভাবিক থাকবে’ বলে তিনি আশা প্রকাশ করলেও বাস্তবে তা হয়নি। রোববার বৈঠকের আগে যদি কোনো সুরাহা না হয়, আর ঘোষণা অনুযায়ী বাস ও পণ্যবাহী পরিবহন যদি বন্ধ থাকে, যাত্রী ভোগান্তির পাশাপাশি সরবরাহ সঙ্কটে নিত্যপণ্যের বাজারেও তার প্রভাব পড়বে।