বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে সিন্ডিকেট সভায় আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক রহমত উল্লাহকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের এ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়।
শিক্ষক লুৎফুল কবিরের পক্ষ থেকে একজন প্রতিনিধি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট থেকে আরেক জন শিক্ষক ট্রাইব্যুনালের বাকি দুটি সদস্য পদে আসবেন।
সভা শেষে সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ হুমায়ন কবির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পিএইচডি থিসিসে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ তদন্তে গঠিত কমিটি আজ সিন্ডিকেট সভায় তাদের রিপোর্ট উপস্থাপন করেছে। সেখানে চৌর্যবৃত্তির প্রমাণ পাওয়ার কথা বলা হয়েছে।
“অল্প সময়ে তিনি ‘অস্বাভাবিক প্রক্রিয়ায়’ পিএইচডি করেছেন বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। থিসিস জমা দেওয়ার পর তিনি সেটা তিনবার পরিববর্তন করেছেন। সেখানে প্রথমবার জমা দেওয়া থিসিসের ৫৫ শতাংশ, দ্বিতীয়টাতে ৪৩ শতাংশ এবং আরেকটাতে ৪২ শতাংশ সিমিলারিটি পাওয়া গেছে।
“এ সমস্ত কারণে তার বিরুদ্ধ নৈতিক স্খলনের অভিযোগ এনেছে তদন্ত কমিটি। শাস্তির বিষয়ে সুপারিশ করতে সভায় একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে।"
২০১৪ সালে ‘টিউবারকিউলোসিস অ্যান্ড এইচআইভি কো-রিলেশন অ্যান্ড কো-ইনফেকশন ইন বাংলাদেশ: অ্যান এক্সপ্লোরেশন অব দেয়ার ইমপ্যাক্টস অন পাবলিক হেলথ’ শিরোনামে ওই থিসিসের কাজ শুরু করেন আবুল কালাম লুৎফুল কবীর।
তার ওই থিসিসের তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন ওষুধপ্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আবু সারা শামসুর রউফ, সহতত্ত্বাবধায়ক ছিলেন বিভাগের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক অধ্যাপক আ ব ম ফারুক।
সিন্ডিকেটের একাধিক সদস্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, সাধারণত পিএইচডি শেষ করতে তিন থেকে চার বছর সময় লাগে। কিন্তু লুৎফুল কবীর এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে কাজ শেষ করে ২০১৫ সালে সহ-তত্ত্বাবধায়ক অধ্যাপক আ ব ম ফারুকের স্বাক্ষর ছাড়াই ডিগ্রির জন্য তা জমা দেন।
থিসিসে সহ-তত্ত্বাবধায়কের স্বাক্ষর না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবন থেকে তা ফিরিয়ে দেওয়া হয়। পরে সহ-তত্ত্বাবধায়ক অধ্যাপক ফারুকের স্বাক্ষর নিয়ে থিসিসটি জমা দেওয়া হলে ২০১৫ সালেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটে তা অনুমোদিত হয়।
পরে জোনাস নিলসন নামে সুইডেনের গোথেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানকে একটি চিঠি দেন। সেখানে তার গবেষণা থেকে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ আনা হয় লুৎফুল কবিরের বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে ২০২০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ( শিক্ষা) অধ্যাপক এএসএম মাকসুদ কামালকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটি অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে ‘চৌর্যবৃত্তির প্রমাণ’ পাওয়ার কথা জানিয়ে সিন্ডিকেট সভায় প্রতিবেদন দেয়।