‘ছয় মাসে’ বালু নদী দখল ও দুষণমুক্তের পরিকল্পনা

ছয় মাসের মধ্যে ঢাকার উত্তর-পূর্বাঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত বালু নদীকে সম্পূর্ণ দখল ও দুষণমুক্ত করার পরিকল্পনা নিয়েছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Oct 2021, 04:10 PM
Updated : 28 Oct 2021, 04:24 PM

বৃহস্পতিবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিকে এবিষয়ে হালনাগাদ জানানো হয়।

কমিশন জানিয়েছে, এর মধ্যে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের কাজ শুরু হয়েছে। অবৈধ দখলে থাকা নদীগুলোর মধ্যে সম্পূর্ণ দখল ও দুষণমুক্ত করে নাব্যতা ফিরিয়ে আনার মডেল হিসেবে বালু নদীকে বেছে নেওয়া হয়েছে। 

এ কাজে নদী কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য কামরুন নাহার আহমেদকে প্রধান করে গত ১০ অক্টোবর ২১ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। 

কমিটিতে নৌ পরিবহন, পানি সম্পদ, স্থানীয় সরকার ও ভূমি  মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর, রাজউক, বিআইডব্লিউটিএ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন ও নৌ পুলিশের প্রতিনিধ এবং ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি। নদী কমিশনের উপ পরিচালক (পরিবীক্ষণ, ঢাকা বিভাগ) এই কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন।

দূষণ ও দখলের কবলে বালু নদী মরতে বসেছে। বর্ষায় নদী শীতলক্ষ্যা ও তুরাগের পানি বহন করলেও শীত মৌসুমে নদীর পানিতে টান পড়ে। দুই তীরে গড়ে ওঠা কলকারখানা ও মানুষের বর্জ্যে নদীটি দূষণের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।

নদী রক্ষা কমিশনের গঠিত কমিটি মডেল হিসেবে বালু নদীকে আগামী ছয় মাসের মধ্যে সম্পূর্ণভাবে দখল ও দুষণমুক্ত করবে।

নদী কমিশনের ওই কমিটির সভাপতি কামরুন নাহার আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছি। কিছু প্রতিবেদন আমাদের হাতে এসেছে। গত ২৭ অক্টোবর আমরা বৈঠক করেছি। অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিইউটিএ) এটা নিয়ে আগেই কাজ করছে।”

কমিটির শিগগিরই বালু নদী এলাকা সরেজমিনের পরিদর্শনে যাবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, “আমরা এই নদী দখলমুক্ত করতে মডেল হিসেবে নিয়েছে। এটা আমরা বাস্তবায়ন করবই। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই আপানারা দখলমুক্ত দেখতে পাবেন।”

সংসদীয় কমিটির নথি থেকে জানা গেছে, গত বছর ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ সংক্রান্ত একটি সুপারিশ এসেছিল। 

কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম ওই বৈঠকে এ বিষয়ে প্রস্তাব করেছিলেন। পরে বৈঠকে তা কমিটির সুপারিশ আকারে আনা হয়।

ওই সুপারিশে বলা হয়, আগামী ৪-৬ মাসের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে দখল হয়ে যাওয়া নদীর মধ্যে হতে অন্তত একটি নদীর অবৈধ স্থাপনা সম্পূর্ণরূপে উচ্ছেদ ও দখলমুক্ত করে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে এনে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপনের করতে হবে।

বর্তমানে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতায় বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদী দখলমুক্ত, পিলার স্থাপন এবং ওয়াকওয়ে নির্মাণে একটি প্রকল্প চলমান আছে। এছাড়া ঢাকার চারপাশের নদী ও চট্টগ্রামের কর্ণফুলী দখলমুক্ত করতে ২০ বছরমেয়াদী একটি মহাপরিকল্পনা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের ২০১৯ সালের প্রতিবেদনে নদীর দখল ও দূষণের চিত্র ফুটে উঠেছে।

ঢাকা বিভাগে নদী দখলদারের সংখ্যা আট হাজার ৮৯০ জন; উচ্ছেদ করা হয় নদীর জমিতে থাকা এক হাজার ৪৫২ জনের পাঁচ হাজার ৯৩৫টি স্থাপনা।

ঢাকা জেলায় বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতালক্ষ্যা,  ইছামতি, বালু, বংশী, গাজীখালী, কালীগঙ্গাসহ মোট ১১টি নদী ও ২০১টি খালের উল্লেখ রয়েছে প্রতিবেদনে।