প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ কপিরাইট আইন ২০২১ অনুমোদন দেওয়া হয় বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
পরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব সাংবাদিকদের জানান, ২০০২ সালের কপিরাইট আইনে কিছু সংশোধন আনা হয়েছে। প্রস্তাবিত আইনে অজ্ঞাতনামা বা ছদ্মনামের স্বত্ত্বাধিকারী, ডেটাবেইজ, নৈতিক অধিকার, পাবলিক ডোমেইন, লোকজ্ঞান ও লোকসংস্কৃতির মতো শব্দের সংজ্ঞা নতুন করে যোগ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, “কপিরাইটে প্রথম প্রকাশ হওয়ার পর ৬০ বছর পর্যন্ত এটা কপিরাইট থাকবে। এক্ষেত্রে স্বত্ত্বাধিকারী যদি মারাও যান তাহলে প্রথম দিন থেকে ৬০ বছর পর্যন্ত স্বত্ত্বাধিকার পাবেন।
“অবৈধ সম্প্রচার বন্ধে কপিরাইট রেজিস্টারকে অবহিতকরণের পক্ষে অবৈধ সম্প্রচার বন্ধের ব্যবস্থা করবেন। লোকজ্ঞান ও লোকসংস্কৃতি রক্ষার জন্য এ সংক্রান্ত একটি অধ্যায় এখানে ঢোকানো হয়েছে যেটা আগে ছিল না। একই সাথে শাস্তি ও জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে ৮০, ৯৩ ও ৯৪ ধারাতে।”
প্রস্তাবিত আইনে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের পড়ার উপযোগী করে বই প্রকাশের সুযোগ রাখা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “এর ফলে বঞ্চিত সমাজের অনেকেই এই কপিরাইটের আওতায় আসবে। চলচ্চিত্র সঙ্গীত জগতের অডিও ভিডিও কপি সুরক্ষার জন্য আর্কাইভে সংরক্ষণের কন্ডিশন দেওয়া হয়েছে।”
আইন লঙ্ঘনে শাস্তির কি ব্যবস্থা বা ধরন কি হবে এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “শাস্তির জন্য তিনটি ধারা রয়েছে। এখানে অনেকগুলো বিষয়ে শাস্তি আছে। প্রতিটা বিষয়ের জন্য আলাদা আলাদা শাস্তির বর্ণনা করা হয়েছে।”
শাস্তির উদাহারণ দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কপিরাইট বিদ্যমান রয়েছে এমন কোনো কর্মের অধিকার লঙ্ঘনকারীর অনুলিপি তৈরি করেন তাহলে অনূর্ধ্ব ২ লাখ টাকা অথবা ২ বছরের কারাদণ্ড।
“কম্পিউটার বা ডিজিটাল বা অন্য কোনো মাধ্যমে যন্ত্র বা কোনো কম্পিউটার ব্যবহার করে আইন লঙ্ঘন করে তাহলে ২৫ হাজার টাকা ৩ মাসের কারাদণ্ড। আবার কোনো ব্যক্তি গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠান যদি এমন কিছু করে অনূর্ধ্ব ৩ বছরের কারাদণ্ড বা ৫ লাখ টাকা জরিমানা। এ রকম অনেকগুলো বিষয়ে প্রায় ১৫ থেকে ১৬ টা শাস্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।”
“এ আইনে অনেক কিছু নতুন বিষয় আছে যেমন ডিজিটাল বা আর্কাইভস তো আগে চিন্তার মধ্যে ছিল না। এরকম অনেক কিছু নতুন আছে।”
বৈঠকে ‘ঔষধ আইন, ২০২১’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়নি জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “এই আইনটাকে একটু রিভিউ করতে বলা হয়েছে। রিভিউ করে আবার মন্ত্রিসভায় নিয়ে আসতে বলা হয়েছে।”
বৈঠকে রাসায়নিক সার প্যাকেজিংয়ের ক্ষেত্রে ওভেন পলিপ্রপিলিনের ব্যাগের পরিবর্তে পলিথিন লাইনারসহ মানসম্পন্ন পাটের ব্যাগ ব্যবহারের ক্ষেত্রে পার্থক্যজনিত ভর্তুকি প্রদান সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়েছে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
“২০১৭ সালে একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া ছিল রাসায়নিক সার প্যাকেজিংয়ের ক্ষেত্রে ওভেন পলিপ্রপিলিনের ব্যাগের পরিবর্তে পলিথিন লাইনারসহ মানসম্পন্ন পাটের ব্যাগ ব্যবহার করতে হবে। সে ক্ষেত্রে বিজিএমসিকে সরকার একটা ভর্তুকি দেবে। এটা ২০১৭ সালের সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু এখন যেহেতু বিজেএমসির ইন্ডাস্ট্রিগুলো ডিজাইনবেস্ট করে দেওয়া হয়েছে প্লাস কৃষি ও শিল্প মন্ত্রণালয়, সাইন্স ও টেকনোলজি এবং পাট মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য বিশেষজ্ঞদের সাথে আলোচনা করে জানান এটা ঠিক না।”
“পলিথিন লাইনারসহ মানসম্পন্ন পাটের ব্যাগ স্বাস্থ্যের জন্য সেইভ না। এখানে সার ব্যবহার করলে সারের কমে যাবে। এর ফলে শস্যের ওপর নেগেটিভ প্রভাব পড়বে। এজন্য এ ব্যাগ আনা যাবে না। সুতরাং কেবিনেট এটা বাতিল করেছে।”