এভাবেই ঘটনার বর্ণনা দিলেন ভবনের সামনে ভ্যানে নিয়ে বসা ডাব বিক্রেতা মো. সেলিম।
ঢাকার গুলশানের ১০৩ নম্বর সড়কের ভবন দক্ষিণায়নের সামনেই বসেন সেলিম, যে ভবনে বুধবার সকালে বিস্ফোরণের পর আগুন লেগে শিশুসহ সাতজন আহত হন।
গুলশান ২ নম্বর সেকশনে পিংক সিটির ঠিক পেছনে এবং গুলশান ইয়ুথ ক্লাবের উত্তর পাশে এই ভবনের দ্বিতীয় তলার ফ্ল্যাটে আগুন লাগে।
সেলিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এসিটা ছিটকে এসে রাস্তায় একটি চলন্ত রিকশার উপর পড়ে। রিকশাচালক এবং দুই যাত্রী গুরুতর আহত হয়। লোকজন তাদের ধরাধরি করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।”
ছিটকে আসা এসি, গ্রিল দুটি গাড়িতেও এসে পড়লে সেগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
গুলশান পিংক সিটি মার্কেটের একটি কাপড়ের দোকানের কর্মচারী সজিব আহমেদ আগুনের খবর পেয়েই ছুটে এসেছিলেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভবনের দক্ষিণ দিকের রাস্তায় রিকশাচালকসহ কয়েকজন রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল। দোতালায় দাউদাউ করে আগুন জ্বলছিল। তখনও ফায়ার ব্রিগেড অসেনি। ভেতর থেকে ঘনঘন ‘ফট’ ‘ফট’ শব্দ আসছিল। মনে হচ্ছিল, ভেতরে আগুনের তাপে কোনো কিছুর বিস্ফোরণ ঘটছে। চিৎকার আর হুড়োহুড়ি করে ভবনের ভেতর থেকে লোকজন বেরিয়ে আসছিল। সে এক ভয়াবহ দৃশ্য!”
দোতলার ওই ফ্ল্যাটটির মালিক ন্যাশনাল ব্যাংকের কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম। অগ্নিকাণ্ডে তার স্ত্রী, দুই বছর বয়সী শিশু, গৃহকর্মী দগ্ধ হয়েছে। তাদেরকে শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। রফিকুলও আহত হয়েছেন।
রফিকুলের স্ত্রী মালিহা আনহা উর্মির (৩২) দেহের ৭০ শতাংশের মতো পুড়েছে। তার শিশুপুত্র মসরুর মোহা. রাফিন (২) এবং গৃহকর্মী মনির (৩৫) দেহের ৩০ শতাংশ দগ্ধ।
এ বছরের প্রথম দিকে রফিকুল পুরনো এই ফ্ল্যাটটি কিনে প্রায় দুই মাস ইনটেরিয়রের কাজ শেষ করে এ মাসের শুরুতেই উঠেছিলেন।
বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী মো. মাহবুব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, “স্যার পরিবার নিয়ে উঠার এক মাসও হয়নি।”
এই ফ্ল্যাটে চারটি কক্ষ। তার বাইরে রয়েছে বসার ঘর, খাবার ঘর। আগুনে একটি কক্ষ ছাড়া সব কক্ষ পুড়ে গেছে। যে কক্ষটি পোড়েনি, সেটির দরজা আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
রফিকুলের শ্বশুর এস এম মহিউদ্দীন বুলবুল হাসপাতালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঘটনার সময় আমার মেয়ে উর্মি ফ্ল্যাটের দোতলায় তার বেডরুমে ছিল। তার কোলেই ছিল রাফিন। সেই রুমেই ছিল গৃহকর্মী মনি। হঠাৎ বিস্ফোরণের তারা তিনজনই দগ্ধ হয়।”
উর্মির স্বামী রফিকুল বাসায় থাকলেও অন্য একটি কক্ষে ছিলেন বলে জানান বুলবুল। তারা ধানমণ্ডিতে থাকেন। মেয়ের দুর্ঘটনার খবর পেয়ে যান হাসপাতালে।
ছয়তলা ওই বাড়ির মালিক সমিতির কর্মকর্তা মোস্তফা জামাল আগুনের বিষযে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
ফায়ার সার্ভিসের উপ সহকারী পরিচালক সাইফুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে দোতলার ফ্ল্যাটের দক্ষিণ দিকের কক্ষের এসি থেকে এই বিস্ফোরণ ও আগুনের সূত্রপাত। তবে তদন্তের পরই কারণ জানা যাবে।
তিনি বলেন, “আগুন লাগার খবর পেয়েই আমরা সেখানে যাই, কিন্তু ফ্ল্যাটের ভেতর কাউকে পাইনি। আমরা যাওয়ার আগেই স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করে নিয়ে যায়।”
গুলশান থানার ওসি আবুল হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম বলেন, আহত কয়েকজনকে স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।