রেইনট্রিতে ধর্ষণের রায়ের অপেক্ষা: দুই সাক্ষীর অনুপস্থিতির আক্ষেপ রাষ্ট্রপক্ষের

ঢাকার বনানীর রেইনট্রি হোটেলে দুই তরুণীকে ধর্ষণের আলোচিত মামলায় বুধবার রায়ের দিন নির্ধারিত রয়েছে।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Oct 2021, 04:34 PM
Updated : 26 Oct 2021, 04:50 PM

গুরুত্বপূর্ণ দুই সাক্ষীর অনুপস্থিতিই রায়ের আগে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামি পক্ষের আইনজীবীদের কথায়।

এই কারণে আসামিদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি বলে দাবি করছেন তাদের আইনজীবীরা। তারা আশা করছেন, আসামিরা খালাস পাবেন।

আর দুই সাক্ষীকে হাজির করতে না পারায় আসামিদের শাস্তির বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর কণ্ঠে দৃঢ় আশাবাদ দেখা যায়নি।

এই মামলায় প্রধান আসামি আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদ। এছাড়াও আসামির তালিকায় রয়েছেন তার দুই বন্ধু এবং তার দেহরক্ষী ও গাড়িচালক।

ঢাকার ৭ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের বিচারক মোসা. কামরুন্নাহার চার বছর আগের এই মামলার রায় দেবেন।

গত ১২ অক্টোবর রায়ের দিন ঠিক ছিল। কিন্তু বিচারক ছুটিতে থাকায় রায় প্রস্তুত করা সম্ভব না হওয়ায় তা পিছিয়ে ২৭ অক্টোবর (বুধবার) নতুন তারিখ রাখা হয়েছিল।

আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত ছাড়া বাকি আসামিরা হলেন তার বন্ধু সাদমান সাকিফ ও নাঈম আশরাফ ওরফে এইচএম হালিম, সাফাতের দেহরক্ষী রহমত আলী ও গাড়িচালক বিল্লাল।

আসামিরা সবাই জামিনে ছিলেন। যুক্তিতর্ক শেষে গত ৩ অক্টোবর সব আসামিদের জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানো হয়।

তরুণীদের অভিযোগ অনুযায়ী, এই রেইনট্রি হোটেলেই ঘটে ধর্ষণের ঘটনা। ফাইল ছবি

২০১৭ সালের ২৮ মার্চ বনানীর রেইনট্রি হোটেলে সাফাতের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই দুই ছাত্রীকে ধর্ষণ করা হয় বলে মামলায় অভিযোগে বলা হয়েছে।

ঘটনার এক মাসের বেশি সময় পর ৬ মে বনানী থানায় মামলাটি করেন এক তরুণী। তার অভিযোগ, ওই হোটেলে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাকেসহ তার বন্ধুকে রাতভর আটকে রেখে সাফাত ও নাঈম ধর্ষণ করেন। অন্য তিনজন তাতে সহায়তা করেন।

মামলার কয়েকদিনের মধ্যে ১১ মে সিলেট থেকে সাফাতকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার সঙ্গে গ্রেপ্তার হন সাদমানও। অন্য আসামিদেরও এর মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়।

এই ঘটনায় তুমুল আলোচনার মধ্যে আপন জুয়েলার্সের বিভিন্ন শাখায় চলে শুল্ক গোয়েন্দাদের অভিযান। বেআইনি সোনা পাওয়ায় দিলদারের বিরুদ্ধে মামলাও হয়।

সাফাত আহমেদ গ্রেপ্তার হওয়ার পর আপন জুয়েলার্সে অভিযানে শুল্ক গোয়েন্দারা। ফাইল ছবি

ধর্ষণের মামলা হওয়ার পরের মাসেই ৭ জুন তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের (ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার) পরিদর্শক ইসমত আরা এমি আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

এক মাসে তদন্ত শেষের পর পরের মাসেই আদালতে অভিযোগ গঠন হয়। ওই বছরের ১৩ জুলাই অভিযোগ গঠনের পর ২২ জনের সাক্ষ্য নিয়ে বিচার শেষ হতে চার বছর লেগে গেল।

আলোচিত এ মামলায় শুনানির সময় গুরুত্বপূর্ণ দুই সাক্ষী আহমেদ শাহরিয়ার ও ফারিয়া মাহবুব পিয়াসার সাক্ষ্য দিতে না আসার বিষয়টি উঠে আসে।

মামলার বিবরণ অনুযায়ী, অভিযোগকারী তরুণীদের বন্ধু শাহরিয়ার ঘটনার দিন রেইনট্রি হোটেলে ছিলেন। তাকে মারধর করে বের করে দেওয়া হয়।

আর মামলা দায়েরের সময় এক তরুণীর সঙ্গে ছিলেন পিয়াসা, যিনি ছিলেন সাফাত আহমেদের সাবেক স্ত্রী।

সাফাতের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার কয়েক মাস আগেই পিয়াসার সঙ্গে তার বিচ্ছেদ হয়। এরপর ফারিয়া আর তার সাবেক শ্বশুর দিলদারের মধ্যে পাল্টাপাল্টি মামলাও হয়েছিল।

মডেল পিয়াসা সম্প্রতি মাদকের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে এখন কারাগারে রয়েছেন।

ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা সম্প্রতি গ্রেপ্তার হয়ে এখন কারাগারে রয়েছেন।

এ দুই সাক্ষীর না আসা প্রসঙ্গে আসামি নাঈম আশরাফের আইনজীবী খায়রুল ইসলাম লিটন যুক্তিতর্কে বলেছিলেন, “যদি ঘটনা সত্য হত, তাহলে তারা সাক্ষ্য দিতে আসতেন।

“আসামি সাফাত ও অন্যরা ব্যবসায়িক অসুস্থ প্রতিদ্বন্দ্বিতা অথবা সাফাতের সাবেক স্ত্রী পিয়াসার ষড়যন্ত্রের শিকার।”

ডাক্তারি পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত না পাওয়ার কথাও বলেন আসামি পক্ষের আইনজীবী। চিকিৎসকের সেই সনদ বিচারকের গোচরেও আনেন তিনি।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, সাক্ষ্য দিতে বারবার সমন পাঠানো হলেও শাহরিয়ার ও পিয়াসা আদালতে আসেননি।

যুক্তিতর্ক শুনানিতে বিচারকের প্রশ্নে বাদী ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বলেছিলেন, লকডাউনের আগে গত জানুয়ারিতে তিনবার সমন পাঠানো হয় পিয়াসা ও শাহরিয়ারকে। মোবাইল ফোনে এসএমএসও পাঠানো হয়। কিন্তু তারা সাক্ষ্য দিতে আসেনি।

ঢাকার আদালতে সাফাত আহমেদ (বাঁয়ে)। ফাইল ছবি

মামলাটি রাষ্ট্রপক্ষে পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট আফরোজা ফারহানা আহমেদ অরেঞ্জ, বাদীর নিজস্ব আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ।

অনেকটাই হতাশ আফরোজা ফারহানা বলছেন, “আমাদের দুজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী আদালতে এসে সাক্ষ্য দেননি। আর সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ প্রদর্শনী হিসাবে জমা দেওয়া যায়নি। তদুপরি চিকিৎসা প্রতিবেদনে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি।”

“কিন্তু উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত আছে, পারিপার্শ্বিক বিবেচনায় আদালত মনে করলে আসামিদের সাজা দিতে পারেন,” এখন এই আশায় আছেন তিনি।