হাটহাজারীর তিন ভাই হত্যার চূড়ান্ত রায়ে ৮ আসামির যাবজ্জীবন

দেড় যুগ আগে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে তিন সহোদরকে হত্যার ঘটনায় হাই কোর্টে খালাস পাওয়া ২১ আাসামির মধ্যে আটজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Oct 2021, 03:38 PM
Updated : 26 Oct 2021, 03:38 PM

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারকের ভার্চুয়ল আপিল বেঞ্চে মঙ্গলবার এ রায় হয়। 

যাবজ্জীবন দণ্ড পাওয়া আসামিরা হলেন, মো. মোবারক, মো. ওসমান, মঈনুদ্দিন, মো. ইমাম উদ্দিন, লোকমান, আবুল কলাম চৌধুরী, আবু রাশেদ ও করাতী জামাল।  

হাই কোর্টের খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল শুনানি করে এ রায় দিল আপিল বিভাগ।

রাষ্ট্রপক্ষে আপিল শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ। আসামিদের পক্ষে শুনানি করেন, আইনজীবী এ কে এম ফায়েজ, এ কে এম ফজলুল হক খান ফরিদ, রুহুল কুদ্দুস কাজল, আশরাফ উজ জামান খান ও শিরিন আফরোজ। 

আইনজীবী এ কে এম ফায়েজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, চট্টগ্রামের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল এ মামলায় পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং আটজনকে যাবজ্জীবন দিয়েছিল। হাই কোর্ট সব আসামিকে খালাস দেয়।

“হাই কোর্টের ওই রায় পরিবর্তন করে আপিল বিভাগ আট জনকে যাবজ্জীবন দিয়েছে। এই আট জনের মধ্যে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া পাঁচজন ছাড়াও অছেন যাবজ্জীবন দণ্ড পাওয়া তিনজন।”

মামলার বিবরণে জানা যায়, চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম চৌধুরী ইট ভাটার জন্য আবুল কাশেম, আবুল বশর ও বাদশা আলম নামের তিন সহোদরের কাছে জমি চাইলে তারা অস্বীকৃতি জানান।

এর জের ধরে ২০০৩ সালের ২৬ মে ইউনিয়নের চারিয়া গ্রামের আবদুল হালিমের চায়ের দোকানে আবুল কাশেমকে গুলি করা হয়। গুলিতে কাশেম লুটিয়ে পরলে আসামিরা তাকে কিরিচ দিয়ে কুপিয়ে ফেলে রেখে যায়।

এদিকে গুলির শব্দ শুনে আবুল বশর ও বাদশা আলম ওই চায়ের দোকানের দিকে যাওয়ার সময় আসামিদের মুখোমুখী হন। তখন আসামিরা তাদের কুপিয়ে হত্যা করে ফাঁকা গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে চলে যায়।

নিহত তিন সহোদরের আরেক ভাই মফজল মাস্টার হাটহাজারী থানায় ১৮ জনের নামে মামলা দায়ের করেন। 

তদন্ত শেষে ২২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। তারা হলেন- ওসমান, মঈনুদ্দিন ওরফে মহিউদ্দিন, মো. মোবারক, ইমাম উদ্দিন ওরফে মুজিব, লোকমান, আবুল কালাম চৌধুরী, শাহজাহান, জামাল ওরফে ক্যারাটি জামাল, বখতিয়ার, বেলাল, শাহা আলম, আবু রাশেদ, দৌলত, আবদুল জব্বার, আলী আকবর ওরফে সেলিম, আবুল হায়াত, আবুল কাশেম, সেকান্দার, আবুল হেসেন, ফজলুল করিম, নাসির ও নুরুল আলম ওরফে ফেদাইয়া।

তাদের মধ্যে নুরুল আলম বিচার শুরুর আগেই মারা যান। আদালত বাকি ২১ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে।

বিচার শেষে চট্টগ্রামের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম হাসান ইমাম ২০০৪ সলের ১৮ ডিসেম্বর রায় দেয়।

রায়ে আসামি মো. মোবারক, মো. ওসমান, মঈনুদ্দিন, মো. ইমাম উদ্দিন, লোকমানকে মৃত্যুদণ্ড দেয় বিচারিক আদালত।

আর আবুল কলাম চৌধুরী, শাহজাহান, বখতিয়ার, বেলাল, শাহ আলম, আবু রাশেদ, ক্যারাটি জামাল ও দৌলতকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।

মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স হাই কোর্টে পাঠানো হয়। আসামিরাও বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে।

ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানির পর বিচারপতি শরিফ উদ্দিন চকলাদার ও বিচারপতি মো. এমাদুল হক আজাদের হাই কোর্ট বেঞ্চ ২০০৮ সালের ২০ অক্টোবর রায় দেয়, সেখানে সব আসামিকে খালাস দেওয়া হয়।

ওই রায়ের বিরুদ্ধে পরে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। সেসব আপিলের শুনানির পর হাই কোর্টের রায় পরিরবর্তন করে রায় দিল সর্বোচ্চ আদালত।

দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া পাঁচ আসামিকে আপিল বিভাগ যাবজ্জীবন দিয়েছে। আর যাবজ্জীবন দণ্ড পাওয়া আসামিদের মধ্যে বখতিয়ার ও বেলালকে খালাস দিয়ে আপিল বিভাগ আবুল কলাম চৌধুরী, আবু রাশেদ ও ক্যারাটি জামালকে যাবজ্জীবন দিয়েছে।