ঢাকার সপ্তম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ কেশব রায় চৌধুরীর আদালতে মঙ্গলবার এ মামলার রায় হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ নতুন করে যুক্তিতর্ক শুনানির আবেদন করায় বিচারক তা মঞ্জুর করে ১৫ নভেম্বর রায়ের নতুন তারিখ রাখেন।
নব্বইয়ের দশকের ছাত্রদল নেতা গোলাম ফারুক অভি এ মামলার একমাত্র আসামি, যিনি পরে জাতীয় পার্টির টিকেটে সাংসদ হয়েছিলেন। একটি হত্যা মামলায় ১৭ বছরের সাজা মাথায় নিয়ে তিনি পালিয়ে কানাডায় অবস্থান করছেন।
এ আদালতের বেঞ্চ সহকারী আমিনুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বরেন, “আজ মামলাটির রায় ঘোষণার দিন ধার্য ছিল। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ থেকে মামলাটির রায় স্থগিত করে পুনরায় যুক্তিতর্কের আবেদন করা হয়। আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করেছে। আজই রাষ্ট্রপক্ষকে যুক্তিতর্ক শেষ করতে বলেছে।
“রাষ্ট্রপক্ষ বিকেলে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবে। আর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন না করলেও আগামি ১৫ নভেম্বর আদালত মামলার রায় ঘোষণা করবে।”
২০০২ সালের ১০ নভেম্বর বুড়িগঙ্গার চীন মৈত্রী সেতুর নিচ থেকে তখনকার জনপ্রিয় বিজ্ঞাপানশিল্পী তিন্নির লাশ উদ্ধার করা হয়। পরদিন অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন কেরানীগঞ্জ থানার তখনকার এএসআই মো. সফি উদ্দিন।
এ মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন ওই থানার এসআই মো. কাইয়ুম আলী সরদার। পরে মামলাটিকে ‘চাঞ্চল্যকর মামলা’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয় এবং ২০০২ সালের ২৪ নভেম্বর এর তদন্তভার পায় সিআইডি। তখন তদন্তের দায়িত্ব পান সিআইডির তৎকালীন পরিদর্শক ফজলুর রহমান।
সেখানে বলা হয়, সাবেক ছাত্রনেতা অভি ‘অনৈতিক সম্পর্ক’ চাপা দিতে তিন্নিকে খুন করেন এবং লাশ ওই সেতুর নিচে ফেলে রাখেন।
অভি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ায় তাকে ধরা সম্ভব হয়নি জানিয়ে অভিযোগপত্রে বলা হয়, ১৯৯২ সালে রমনা থানায় দায়ের করা একটি অস্ত্র মামলায় ১৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হয়েছিল অভির। ওই মামলার রায়ের পর হাই কোর্ট থেকে জামিন নিয়ে পালিয়ে কানাডা চলে যান তিনি।
অভিকে ধরার জন্য ২০০৭ সালে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি হয়েছিল, কিন্তু তাকে দেশে ফেরানো যায়নি।
এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় গোলাম ফারুক অভি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক অভি ‘অস্ত্রবাজ নেতা’ হিসেবে আলোচিত ছিলেন।
১৯৯০ সালের নভেম্বরে ডাক্তার মিলন নিহত হওয়ার পর আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখনই জানা যায়, স্বৈরাচার এরশাদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন অভি।
পরে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়ে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বরিশাল থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন। পরে তিনি আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন এবং ২০০১ সালের নির্বাচনে পরাজিত হন। তার পরের বছরই খুন হন তিন্নি।
আভিযোগপত্রে বলা হয়, অভি ওই হত্যাকাণ্ডের আগে স্বামী পিয়ালের সঙ্গে তিন্নির দাম্পত্য সম্পর্কের অবসান ঘটিয়ে তাকে ‘ফাঁদে ফেলে অনৈতিক সম্পর্ক’ গড়ে তোলেন। কিন্তু সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত অভি তাকে কখনোই স্ত্রীর মর্যাদা দেননি, বরং বিয়ের জন্য তিন্নি চাপ দিলে ‘পরিকল্পিতভাবে’ তাকে খুন করে গড়িতে করে লাশ চীন-মৈত্রী সেতুর নিচে ফেলে রাখেন।
২০১০ সালের ১৪ জুলাই পলাতক অভির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে এ মামলার বিচার শুরুর আদেশ দেন ঢাকার সপ্তম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ। পরের বছরগুলোতে অভিযোগপত্রভুক্ত ৪১ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৮ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।
নিয়ম অনুযায়ী অভির পক্ষে মামলা পরিচালনার জন্য রাষ্ট্রীয় খরচে একজন আইনজীবীও নিযুক্ত করা হয় বলে ওই আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মো. রুহুল আমিন জানান।