মঙ্গলবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ‘বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট সামিট’ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।
সাত দিনের এ সম্মেলনে দেশের সম্ভাবনাময় নয়টি খাতকে দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীদের সামনে অগ্রাধিকার দিয়ে তুলে ধরার সিদ্ধান্তকে ‘অত্যন্ত সময়োপযোগী’ হিসেবে বর্ণনা করেন প্রধানমন্ত্রী।
খাতগুলো হলো- অবকাঠামো, তথ্য প্রযুক্তি, ফিনটেক (আর্থিক প্রযুক্তি), চামড়া, ওষুধ, স্বয়ংক্রিয় ও ক্ষুদ্র প্রকৌশল, কৃষিপণ্য ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, পাট-বস্ত্র শিল্প, অতিচাহিদাসম্পন্ন ভোগ্যপণ্য ও ক্ষুদ্র ব্যবসা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “নতুন নতুন পণ্য আরও কী আমরা উৎপাদন করতে পারি এবং আমরা রপ্তানি করতে পারি সেটাও গবেষণা করে বের করতে হবে।
“সেদিকে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে এবং কোন কোন দেশে কী কী পণ্যের চাহিদা রয়েছে সেটা অনুধাবন করে সেই পণ্য আমরা বাংলাদেশে উৎপাদন করতে পারি কি না সেটা আমাদেরকে বিবেচনা করতে হবে।”
ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং বেসরকারি খাতের সবাইকে এ বিষয়ে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, “আমাদের রপ্তানি পণ্যের সংখ্য আরও বাড়ানো প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।
“বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরনের চাহিদা থাকে; আর বাংলাদেশ এমন একটা দেশ.. আমরা ইচ্ছা করলে পারি। সব কিছুই করতে পারি। এই আত্মবিশ্বাস আমার আছে, যেটা জাতির পিতা বলে গেছেন।”
‘বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট সামিট’ এর মাধ্যমে বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের নতুন দুয়ার উন্মোচন হবে, রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে এবং কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ আকর্ষণে বাংলাদেশ সক্ষম হবে বলে শেখ হাসিনা আশা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি এই সম্মেলনের মাধ্যমে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য দেশি বিদেশি শিল্প উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীগণ বাংলাদেশে এই সব খাতের সম্ভাবনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।”
“আমাদের পোর্ট- চট্টগ্রাম পোর্টকে উন্নত করছি, মোংলা পোর্ট এবং আমরা নতুন একটা পোর্ট আবার তৈরি করছি- পায়রা পোর্ট। এটাও গভীর বন্দর হিসেবেই ভবিষ্যতে গড়ে উঠবে। তাছাড়া মহেশখালীতেও ব্যাপক উন্নতি হচ্ছে, অর্থাৎ কক্সবাজারে, সেটাও বলতে গেলে সমুদ্র বন্দর হিসেবে তৈরি হচ্ছে। সেভাবে আমরা বিভিন্নভাবে সুযোগ সৃষ্টি করছি।”
বাংলাদেশের ভৌগলিক সুবিধার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যারা বিনিয়োগ করতে আসবেন, তারা শুধু বাংলাদেশ পাবেন না, আমি বলব দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতেও তাদের একটা সুযোগ থাকবে- ওই বাজারগুলো ধরার এবং রপ্তানি করার।
“আমি বলি যে… প্রাচ্য ও প্রাশ্চাত্যের একটা যোগাযোগের ব্রিজ হিসেবে বাংলাদেশ গড়ে উঠবে ভবিষ্যতে; যেটা আমাদের দেশে ব্যবসা বাণিজ্যের আরো প্রসার ঘটতে সহায়তা করবে।”
বেসরকারি খাত যেন আরো আকর্ষণীয় হয় এবং বৈদেশিক বিনিয়োগ যাতে আরো বেশি পাওয় যায়, সেজন্য সরকারের চেষ্টার কথা অনুষ্ঠানে বলেন শেখ হাসিনা।
সারাদেশে ১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে এ পর্যন্ত ২১০ জন বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে ২৭.০৭ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে। এর মধ্যে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ১.৬০ বিলিয়ন ডলার।
মীরসরাই, সোনাগাজী ও সীতাকুণ্ড উপজেলায় প্রায় ৩৪ হাজার একর জমিতে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর’ গড়ে তোলার উদ্যোগেরও কথাও প্রধানমন্ত্রী বলেন।
তিনি বলেন, পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ- পিপিপির আওতায় সরকার ৭৯টি প্রকল্পের বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিয়েছে। তার ফলে ৩৫ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ হচ্ছে। পিপিপির আওতায় একটি প্রকল্প ইতোমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে, আরো ছয়টি প্রকল্প নির্মাণাধীন।
বাণিজ্য কূটনীতিতে জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি বলব, কূটনীতির ক্ষেত্রে ইকোনোমিক ডিপ্লোমেসিটাই বেশি কাজ করে। সেদিকে আমরা বিশেষ দৃষ্টি দিচ্ছি এবং আমাদের প্রত্যেকটা দূতাবাসে এভাবেই নির্দেশনা দেওয়া আছে- শিল্প, ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার যাতে ঘটে।”
আওয়ামী লীগের গত ১৩ বছরের শাসনে প্রতিটি খাতে ‘কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি’ হয়েছে মন্তব্য শেখ হাসিনা বলেন, “আর্থ সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের রোল মডেল। বাংলাদেশ এসডিজি প্রগ্রেস অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে।”
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র মন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ, এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন, ঢাকা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রাহমানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।