মন্দিরের নিরাপত্তা: ঢাকায় নজরদারি বাড়াতে পুলিশ কমিশনারের নির্দেশ

রাজধানীর কোনো মন্দির বা মণ্ডপে যাতে হামলার ঘটনা না ঘটে, সেজন্য আরও বেশি ‘নজরদারি’ ও ‘গোয়েন্দা তৎপরতা’ বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Oct 2021, 06:41 AM
Updated : 25 Oct 2021, 06:41 AM

রোববার পুলিশ সদরদপ্তরে মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা নিয়ে আলোচনায় তিনি এই নির্দেশনা দেন।

পুলিশ কমিশনার বলেন, “ঢাকা মহানগর যেহেতু দেশের রাজধানী, তাই এখানে যেন এ ধরনের কোনো ঘটনা না ঘটে সেজন্য আমাদেরকে আরও বেশি তৎপর থাকতে হবে, চোখ-কান খোলা রাখতে হবে, গোয়েন্দা নজরদারি বাড়াতে হবে।”

ইতোমধ্যে ঢাকার বড় বড় পূজামণ্ডপ ও উপাসনালয়ে পুলিশের উপস্থিতি এবং নজরদারি বাড়ানো হয়েছে জানিয়ে সোশাল মিডিয়ায় নজরদারি বাড়াতে পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিটকে নির্দেশনা দেন তিনি।

শফিকুল ইসলাম বলেন, “দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের প্রতিবাদে শুধু সনাতন ধর্মাবলম্বী নয়, সকল সম্প্রদায়ের লোকজন অংশগ্রহণ করছে।”

এ ধরনের প্রতিবাদ সমাবেশে যোগ দিয়ে পুলিশের জোনাল ডিসিরাও তাতের পাশে দাঁড়িয়ে একাত্মতা ঘোষণা করবেন বলে জানান তিনি।

দুর্গাপূজার মধ্যে গত ১৩ অক্টোবর কুমিল্লা শহরের নানুয়া দীঘির পাড়ে একটি মন্দিরে ‘কোরআন অবমাননার’ কথিত অভিযোগ তুলে কয়েকটি মন্দিরে হামলা-ভাঙচুর চালানো হয়।

এরপর চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ফেনী ও রংপুরসহ কয়েকটি জেলায় হিন্দুদের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও উপাসনালয়ে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণহানিও হয়।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক কিশোর রঞ্জন মণ্ডল সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কুমিল্লার ঘটনার পর ঢাকায় তিনটি ‘অপ্রীতিকর ঘটনা’ ঘটেছে।

“ঢাকেশ্বরী মন্দিরে হামলার চেষ্টা হয়েছিল। পুলিশ তৎপর ছিল এবং কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে। গুলিস্তান ও বনানীতে ঢিল ছোড়া হয়েছিল, এতে কয়েকজন সামান্য আহত হয়েছেন।”

কিশোর রঞ্জন মণ্ডল বলেন,“কুমিল্লায় হামলার সময় পুলিশ ছিল। কিন্তু পুলিশ নিশ্চুপ ছিল। হেফাজতেরএ তবড় বিক্ষোভ সমাবেশ ও অবস্থান সামাল দিয়েছিল পুলিশ। তাহলে সারাদেশে কীভাবে এত হামলার ঘটনা ঘটেছে।”

‘সংখ্যালঘু’ নির্যাতন প্রতিরোধে আইন থাকলে এ ধরনের ঘটনা ঘটত না মন্তব্য করে তিনি সরকারের কাছে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান।

ঢাকায় আগের তুলনায় মণ্ডপগুলোতে পুলিশের উপস্থিতি ও টহল বেড়েছে জানিয়ে তিনি সারাদেশের পূজামণ্ডপগুলোতে নিরাপত্তা জোরদারের আহ্বান জানান।

পুলিশ টাকা নিলে কঠোর ব্যবস্থা

ঢাকা মহানগর পুলিশ সদরদপ্তরের মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় মামলা এবং সাধারণ ডায়েরিসহ বিভিন্ন কাজে পুলিশের বিরুদ্ধে টাকা নেওয়ার অভিযোগ নিয়েও আলোচনা হয়।

পুলিশ কমিশনার হুঁশিয়ারি করে বলেন, “থানায় কেউ জিডি বা পুলিশি সহায়তা নিতে এলে পুলিশের কেউ টাকা দাবি করলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

ঢাকা মহানগর পুলিশের কোনো সদস্যের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পেলেও ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন তিনি।

“আমরা সকলে একটি টিম, একটি পরিবার। কেউ ভাল কাজ করলে সবাই প্রশংসিত হবে, আর কেউ খারাপ কাজ করলে সকলে আমাদেরকে ভর্ৎসনা করবে। আমাদের জানমাল বাজি রেখে এ শহরের সম্মানিত নগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে,” বলেন পুলিশ  কমিশনার।

আরও পড়ুন