রোহিঙ্গাদের ফেরানোর উদ্যোগ নিন: জাতিসংঘকে মোজাম্মেল হক

বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের সম্মান, নিরাপত্তা ও অধিকার দিয়ে মিয়ানমারে তাদের মাতৃভূমিতে ফেরত পাঠানোর জন্য ‘যথাযথ উদ্যোগ’ নিতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Oct 2021, 01:22 PM
Updated : 24 Oct 2021, 01:22 PM

৭৬তম জাতিসংঘ দিবস উপলক্ষে রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় তিনি এ আহ্বান জানান।

মন্ত্রী বলেন, “মিয়ানমারে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি অত্যাচার, নিপিড়ন, ধর্ষণ ও গণহত্যা চালানো হয়েছে, এগুলো আপনারা জানেন। তারা দেশ থেকে বিতাড়িত হয়েছে, জীবন বাঁচানোর জন্য তার এই দেশে এসেছে। তাদেরকে বাংলাদেশ আশ্রয় দিয়েছে।”

জাতিসংঘের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, “আমরা দাবি করতে চাই, চিরদিন তো কেউ শরণার্থীদের লালন-পালন করতে পারে না। তাই তাদেরকে সসম্মানে, পূর্ণ নিরাপত্তা এবং নাগরিক অধিকার দিয়ে তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে যেন ফেরত পাঠানো হয়।”

রোহিঙ্গাদের একটি অংশকে ভাসানচরে স্থানান্তরের উদ্যোগে জাতিসংঘ যুক্ত হলেও সেটাই বাংলাদেশের মূল প্রতাশা নয় বলে মন্তব্য করেন মোজাম্মেল হক।  

তিনি বলেন, “সেজন্য আমরা অভিনন্দন জানাই, কিন্তু এটা আমাদের বড় কাম্য নয়। আমাদের দাবি, সসম্মানে তাদেরকে মাতৃভূমিতে ফেরত দেওয়ার জন্য জাতিসংঘ যাতে ব্যবস্থা করে, তাদের মধ্যস্থতায় যাতে অসহায় রোহিঙ্গা মানুষরা প্রিয় মাতৃভূমিতে ফেরত যেতে পারে।”

একাত্তরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাংলাদেশে যে হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে, সে কথা স্মরণ করে ২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবসের স্বীকৃতি দিতেও জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী।

তিনি বলেন, “স্বীকৃতির জন্য আমাদের সরকার কূটনৈতিকভাবে বিভিন্ন দেশের সাথে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা আশা করব, জাতিসংঘ আমাদের এই দাবি মেনে নিয়ে বাংলাদেশে যে গণহত্যা হয়েছিল, সে বিষয়টি বিবেচনা করে ২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য আমরা জাতিসংঘের প্রতি অনুরোধ রাখছি।”

এর পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, “পৃথিবীর মধ্যে যত জঘন্য হত্যা হয়েছে, মাত্র নয় মাসের মধ্যে ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা আগে কখনও হয়নি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বেশি লোক মারা গেছে, কিন্তু এত অল্প সময়ে এত বেশি লোক কোথাও মারা যায়নি।”

বাংলাদেশ পোয়েটস ক্লাবের আয়োজনে এ সভায় সংগঠনটির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী সভাপতিত্ব করেন।

মান বজায় রেখে ‘বীর নিবাস’ নির্মাণে মন্ত্রীর নির্দেশনা

এদিকে নগরীর তোপখানা রোডে আরেকটি অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার 'বীর নিবাস' নির্মাণে যথাযথ মান বজায় রাখতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক।

অস্বচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন (বীর নিবাস) নির্মাণ প্রকল্পের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে তিনি কথা বলেন।

মন্ত্রী বলেন, মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০ হাজার  'বীর নিবাস' নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে।

একটি প্রকল্পের আওতায় প্রথমে ১৪ হাজার ‘বীর নিবাস’ অনুমোদন পেলেও প্রধানমন্ত্রী পরে ৩০ হাজার ‘বীর নিবাস’ নির্মাণের অনুমোদন দেন।

প্রতিটি ‘বীর নিবাস’ নির্মাণে ব্যয় হবে ১৩ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। ৪ হাজার ১২৩ কোটি টাকার এই প্রকল্প ২০২৩ সালের অক্টোবরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, “প্রকল্প বাস্তবায়ন সহজ করতে উপজেলাভিত্তিক বাস্তবায়ন কমিটির মাধ্যমে বীর নিবাস নির্মাণ করা হচ্ছে। এ কমিটিতে কর্মকর্তাদের পাশাপাশি বাড়ি বরাদ্দপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরও রাখা হয়েছে। যাতে তিনি তার বাড়ির কাজ বুঝে নিতে পারেন।”

প্রকল্প বাস্তবায়ন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, “বাড়ি নির্মাণের সময় আপনারা সেই স্থানের ছবি এবং ভিডিও ধারণ করবেন। বাড়ি বরাদ্দপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা বা তার পরিবারের সদস্যের উপস্থিত নিশ্চিত করবেন।”

জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের মহাপরিচালক মো. জহুরুল ইসলাম রোহেল,  মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কামরুন নাহার, অস্বচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন (বীর নিবাস) নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক এম ইদ্রিস সিদ্দিকী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।