‘বিচার হয় না বলে’ আবার সাম্প্রদায়িক হামলা

আগের ঘটনাগুলোর বিচার হয়নি বলে এবার আবার দুর্গাপূজার মধ্যে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে মত এসেছে এক প্রতিবাদ সভায়।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Oct 2021, 04:12 PM
Updated : 21 Oct 2021, 04:12 PM

ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে ‘সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিরুদ্ধে নাগরিক প্রতিবাদ’ শীর্ষক এই সভার আয়োজন করে ‘এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম’।

মানবাধিকারকর্মী হামিদা হোসেনের সভাপতিত্বে এই প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী,

পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের সভাপতি খলীকুজ্জমান আহমদ, নাট্যকার মামুনুর রশিদ, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, সিপিডি‘র সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহবায়ক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, আইনজীবী শাহদীন মালিক ও সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা।

অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “সরকার এবং রাষ্ট্রের জবাবদিহি নেই। অপরাধ করলে বিচার হয় না।”

কাজী খলীকুজ্জমান বলেন, “আমি মনে করি, দেশে বিচারহীনতার কারণে সকল ক্ষেত্রে অন্যায় শুরু হচ্ছে।”

শাহদীন মালিক বলেন, “আমি ৯৯ শতাংশ গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, এই মামলারও বিচার হবে না। যখনই শত শত আসামি করা হয়, তখনই বোঝা যায় যে মামলার বিচার হবে না।

“কারণ এখন পুলিশ গ্রেপ্তার বাণিজ্যে নেমে পড়বে। প্রকৃত দোষীকে চিহ্নিত না করে শত শত লোক গ্রেপ্তার করে তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করবে।”

হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর আক্রমণের সঙ্গে ‘ক্ষমতা হারানো’ মানুষের ক্ষোভের সম্পর্কও দেখছেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।

তিনি বলেন, “দেশের ক্ষমতা চলে গেছে অল্প মানুষের হাতে। যাদের টাকা আছে তারাই ক্ষমতাবান হচ্ছে। তারাই সমস্ত কিছু নিয়ন্ত্রণ করছে। এই ক্ষমতাহীনতা এটা অত্যন্ত বড় একটা ব্যাপার।

“দেশের যেসব মানুষ সরকার বা রাষ্ট্রের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে অংশগ্রহণ করতে পারছে না, সেসব হতাশাগ্রস্থ শ্রেণি ক্ষমতা দেখানোর সুযোগ পেলে এই রকম সহিংস হয়ে উঠেন।”

“যারা এই কাজগুলো করছে, তারা বিচ্ছিন্নভাবে ক্ষমতাহীন। তারা হতাশ। সেই লোকগুলো যখন এক সাথে হয় তখন তারা মনে করে একটা সুযোগ পেয়েছি, ক্ষমতা প্রয়োগের একটা ক্ষেত্র পেয়েছি। তখন তারা ওইটাতে (সহিংসতায়) যুক্ত হয়ে গেছে,” বলেন তিনি।

রিজওয়ানা হাসান, “দেশ এমনভাবে চলছে যেখানে অন্য কোনো মতকে সহ্য করছে না। যাদের শক্তি আছে তারাই দুর্বৃত্তায়ন করছে।”

কাজী খলীকুজ্জমান বলেন, প্রশাসনের ভিতরে সাম্প্রদায়িক লোকজন বসে আছে।

“১৩ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী দ্ব্যর্থহীনভাবে নির্দেশ দেওয়ার পরও কেন ঘটনার সময় অনেক ডিসি, এসপিসহ সংশ্লিষ্ট আমলাদের মোবাইল বন্ধ ছিল?”

নাট্যজন মামুনুর রশিদ বলেন, “আমি বিভিন্ন জায়গায় দেখেছি, বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে ওয়াজ মাহফিল হচ্ছে। এসব কিছু হেফাজতের ১১ দফা দাবি মেনে নেওয়ার ফসল।”

এই অবস্থা থেকে উত্তরণে জনগণের কাছে জবাবদিহির ব্যবস্থা নিশ্চিতের পাশাপাশি সংস্কৃতিক জাগরণের উপর জোর দেন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।

সাম্প্রতিক সহিংসতায় কিশোরদের জড়িত থাকার বিষয়টি তুলে ধরে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “কিশোরদের গড়ে তুলতে পাঠাগারগুলোকে সংস্কৃতির কেন্দ্র করতে পারি। পাঠাগারকেন্দ্রিক কিশোর জাগরণের মাধ্যমে আমরা সুস্থ সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনতে পারি।”