ব্যাংকে আড়াই কোটি টাকা: কুড়িগ্রামের সেই পাঁচ শ্রমজীবীর জামিন বহাল

করোনাভাইরাস মহামারীতে প্রণোদনা পাওয়ার আশায় প্রতারক চক্রের ফাঁদে পড়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে গ্রেপ্তার কুড়িগ্রামের শ্রমজীবী পাঁচ জনের জামিন বহাল রেখেছে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Oct 2021, 11:46 AM
Updated : 19 Oct 2021, 11:46 AM

হাই কোর্টের জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে মঙ্গলবার কোনো আদেশ দেননি চেম্বার বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।

ফলে হাই কোর্টের দেওয়া জামিন বহাল থাকছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

চেম্বার আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন। শ্রমজীবী পাঁচ জনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।

শিশির মনির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে আদালত ‘নো অর্ডার’ দিয়েছেন। ফলে হাই কোর্ট থেকে পাওয়া জামিন বহাল থাকছে। আদালত বলেছেন, এরা তো কিছুই জানে না, এরা তো ভিকটিম (প্রতারণার শিকার)।”

জামিন পাওয়া পাঁচজনই পেশায় দিনমজুর। এরা হলেন- কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের ফুলমনি রানী, রণজিৎ কুমার, প্রভাষ চন্দ্র, কমল চন্দ্র রায় ও নিখিল চন্দ্র বর্মন।

গত ৬ অক্টোবর বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ তাদের এক বছরের জন্য জামিন দিয়েছিল।

পরে সে জামিন স্থগিত চেয়ে চেম্বার আদালতে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।   

ঘটনার সূত্রপাত হয়, গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত (মাস্টাররোল) কর্মচারী কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীর তানভীর ইসলাম স্বপন (৩০) এসব শ্রমজীবীর নামে ব্যাংক হিসাব খোলার মধ্য দিয়ে।

সরকারি প্রণোদনা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে এ ব্যক্তি সোনালী ব্যাংকের কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী শাখায় এই পাঁচ জনের নামে ব্যাংক হিসাব খোলান।

এরপর কাগজপত্র স্বাক্ষরের কথা বলে ঢাকায় নিয়ে এসে ব্যাংকের বিভিন্ন কাগজপত্র ও চেক বইয়ে সই নিয়ে তাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন স্বপন।

বাড়িতে পাঠানোর আগে ব্যাংকের সব কাগজপত্র ও চেক বই নিজের কাছে রেখে স্বপন তাদের প্রতিশ্রুতি দেন, প্রত্যেকের ব্যাংক হিসাবে সময়মত প্রণোদনার টাকা চলে যাবে।

কিছুদিন পর এ পাঁচজনের সঞ্চয়ী ব্যাংক হিসাবে ২ কোটি ৪৬ লাখ ৯ হাজার ৯৬০ টাকা স্থানান্তর করা হয়।

এর মধ্যে রণজিতের ব্যাংক হিসাবে ৪৮ লাখ ৪৫ হাজার ৭২০ টাকা, প্রভাষের ব্যাংক হিসাবে ৬৫ লাখ ৭২ হাজার ১২০ টাকা, সুবলের ব্যাংক হিসাবে ৪০ লাখ ৭১ হাজার ৭২০ টাকা, কমলের ব্যাংক হিসাবে ৪২ লাখ ৪৯ হাজার ৮৮০ টাকা ও ফুলমণি রানির ব্যাংক হিসাবে ৪৮ লাখ ৭০ হাজার ৫২০ টাকা আসে।

এ টাকা সোনালী ব্যাংকের কেন্দ্রীয় শাখা থেকে পাঠানো হয়। তবে তাদের হিসাবে কেন এত টাকা স্থানান্তর করা হয়েছে তা এখনও সুস্পষ্ট করা হয়নি।

কয়েকদিন পর অপরিচিত ৩/৪ জন ব্যক্তি গাজীপুরের শ্রীপুরে সোনালী ব্যাংকের শাখায় এই পাঁচ জনের ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা তুলতে গেলে ব্যাংক কর্মকর্তাদের সন্দেহ হয় এবং তারা টাকা উত্তোলন বন্ধ করে দেন।

তবে টাকা তুলতে আসা অপরিচিত লোকগুলোকে আটকের আগেই তারা ব্যাংক থেকে সটকে পড়ে।

পরে ১ জুলাই জালিয়াতি করে সোনালী ব্যাংক থেকে ২ কোটি ৪৬ লাখ ৯ হাজার ৯৬০ টাকা তুলে নেওয়ার চেষ্টার অভিযোগে নয় জনের নামে শ্রীপুর থানায় মামলা করেন ওই শাখার ব্যবস্থাপক রেজাউল হক।

এ মামলায় ওই পাঁচ শ্রমজীবী ব্যক্তি ছাড়াও শ্রীপুর উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা বজলুর রশিদ, হিসাবরক্ষণ অফিসের পরিদর্শক আরিফুর রহমান, কর্মচারী তানভীর ইসলাম স্বপন ও ঢাকার উত্তরখান জামতলা এলাকার বাসিন্দা শাহেনা আক্তারকে আসামী করা হয়।

মামলা করার পরদিনই অর্থাৎ গত ২ জুলাই শ্রমজীবী সেই পাঁচ ব্যক্তিকে তাদের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

পরে নিম্ন আদালতে আসামিদের জামিন না পাওয়ার খবর দেখে তাদের পক্ষে হাই কোর্টে জামিন অবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শিশির মনির।

হাই কোর্ট গত ৬ অক্টোবর তাদের এক বছরের জামিন দেয়।