দুর্গাপূজা উপলক্ষে সোমবার ঢাকার গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসন কার্যালয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি বক্তব্য রাখেন।
ফখরুল বলেন, “এখানে আজকে অনেকে উপস্থিত আছে, যারা ঘটনা স্বচক্ষে দেখেছেন। নোয়াখালীর চৌহমুনীতে কামাক্ষা বাবু (উপস্থিত) তিনি ঘটনা স্বচক্ষে দেখেছেন। সেখানে যারা আক্রমণ চালিয়েছে, তারা বিরেোধী দলের রাজনৈতিক নেতা-কর্মী নয়। এটা আজকে সব জায়গা প্রমাণিত হয়ে গেছে।
“আমরা বার বার বলছি সবসময়, দাঙ্গা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করা এটা ক্ষমতাসীনদের মদদ ছাড়া সম্ভব নয়। এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে আজকে যে আওয়ামী লীগ যারা জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছে, তারা ক্ষমতাকে আরও দীর্ঘায়িত করার জন্য বিভিন্ন রকমের অপকৌশল গ্রহণ করতে শুরু করেছে। এটা তারই একটা প্রমাণ।”
ফখরুল বলেন, “যখনই ঘটনা ঘটেছে, তখনই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব আঙুল তুলে বলেন, বিএনপি না কি ঘটনার সঙ্গে জড়িত। কোনো তদন্ত না করেই এসব কথা বলছেন।
“প্রত্যেকটি ঘটনার সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের জড়িত করে মামলা করা হয়েছে, হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে নোয়াখালীর চৌমুহনীতে ৯০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে যারা নির্বাচন করতে পারে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে।”
সরকার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে এমন মামলা দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
বিএনপি ‘সকল ধর্মের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী’ দাবি করে ফখরুল বলেন, “বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশে রমনা কালীমন্দির পূনর্নির্মাণ করা শুরু হয়। আপনাদের নিশ্চিয়ই মনে আছে, ঢাকেশ্বরী মন্দিরে অনেক জায়গা বেহাত হয়ে গিয়েছিল, সেগুলো সাদেক হোসেন খোকা সাহেব (প্রয়াত মেয়র) দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশে পুনরায় ফেরত নিয়ে দেন।”
খালেদা জিয়ার শাসনামলে হিন্দুদের উপাসনালয় নির্মাণ, সংস্কার এবং মন্দিরভিত্তিক পাঠাগার নির্মাণসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়গুলো তুলে ধরেন সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী।
হিন্দু সম্প্রদায়ের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আপনাদের শুধু এইটুকু বলতে চাই যে, আওয়ামী লীগ প্রতারণার রাজনীতি করে, জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার রাজনীতি করে।”
এই অনুষ্ঠানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন এবং হিন্দু সম্প্রদায়কে শারদীয় শুভেচ্ছা জানান।
সিরাজগঞ্জ, নেত্রকোনা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, জয়দেবপুর, লক্ষ্মীপুর, নওগাঁ, কিশোরগঞ্জ, নড়াইল, ময়মনসিংহ, বরিশাল, জামালপুরসহ নানা জেলা থেকে হিন্দু,বৌদ্ধ, খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্ট ও ছাত্র- যুব ফ্রন্টের দেড় শতাধিক সদস্য এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
অনুষ্ঠানের সূচনাতে কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে পূজামণ্ডপ ও রংপুরে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলায় ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়।
অনুষ্ঠানের শেষে হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের প্রসাদ দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়।
গণফোরাম নেতা সুব্রত চৌধুরী বলেন, “গত ১৩ তারিখ কুমিল্লার ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন, ‘আমরা সজাগ আছি’। ২০ জেলায় বিজিবি নামানো হয়েছে। এরপর অষ্টমী, নবমী হলো আপনারা পূজামণ্ডপে বিজিবি দেখেছেন কি?
“এরা (সরকার) মিথ্যাচার করছে, ধোঁকা দিচ্ছে। এরা আমাদের ঘাঁড়ের উপর চেপে বসে আছে, এদেরকে তাড়াতে হবে। এজন্য আজকে এই দিনে আমাদের অঙ্গীকার হউক আন্দোলনের জন্য আমরা ঐক্যবদ্ধ হব।”
বিএনপি নেতা গৌতম চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে ও অমলেন্দু দাস অপুর সঞ্চালনায় মতবিনিময় অনুষ্ঠানে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, নিতাই রায় চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, বিজন কান্তি সরকার, কেন্দ্রীয় নেতা জয়ন্ত কুমার কুন্ড, অপর্ণা রায় দাস, জন গোমেজ, অশোক কুন্ড, সুশীল বড়ুয়া, রমেশ দত্ত, কামাক্ষা চন্দ্র দাস, সঞ্জয় দে রিপন, সৌরভ পাল, মিল্টন বৈদ্য, জয়দেব জয়, বিশ্বজিত ভদ্র, সীমান্ত দাস, সঞ্চয় গুপ্ত, পলাশ মন্ডল বক্তব্য রাখেন।