৩১১ কোটি টাকা পাচারে ১৩ নাম সিআইডির প্রতিবেদনে

ঢাকা ও চট্টগ্রামে তদন্তাধীন সাত মামলায় বিভিন্ন ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের ৩১০ কোটি ৮০ লাখ ১৪ হাজার ৭৪৮ টাকা পাচারের তথ্য হাই কোর্টকে দিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Oct 2021, 02:53 PM
Updated : 17 Oct 2021, 02:53 PM

এসব ব্যক্তির মধ্যে রয়েছে যুবলীগের বহিস্কৃত নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর এ কে এম মোমিনুল হক ওরফে সাঈদের নাম।

এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ফিলিপিন্স, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা ও দুবাইয়ে টাকা পাচার করেছেন বলে সিআইডির প্রতিবেদনে তথ্য দেওয়া হয়েছে।  

তালিকায় থাকা বাকিরা হলেন, ফরিদুপরের বোয়ালমারীর রাজীব হোসেন রানা, নেত্রকোনার বারহাট্টার জামাল, কুমিল্লার দাউদকান্দির শরিফুল ইসলাম ও আউলাদ হোসেন, ফেনীর ছাগলনাইয়ার এনামুল হক, কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের মো. শাহজাহান বাবলু, চট্টগ্রামের খুলশীর নাজমুল আবেদীন, সোহেল আবেদীন, পাহারতলী এলাকার এ কে এম জাহিদ হোসেনসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও চার থেকে পাঁচজন।

এছাড়া প্রতিষ্ঠান হিসেবে চট্টগ্রামের ‘এ অ্যান্ড বি আউটারওয়্যার অ্যান্ড নর্ম আউটফিট অ্যান্ড একসেসরিজ লিমিটেডের নাম রয়েছে।

বাংলাদেশের কত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সুইস ব্যাংকসহ অন্যান্য বিদেশি ব্যাংকে কত টাকা টাকা পাচার করেছে, আদালত সেই তথ্য জানতে চাওয়ার প্রেক্ষিতে এ প্রতিবেদন দিয়েছে সিআইডি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া সিঙ্গাপুরে, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় তিন ধাপে মোট ৮ কোটি ৮৩ লাখ ৬৮ হাজার ৬৯৮ টাকা পাচার করেছেন।

ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট ও খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া

ফরিদপুরের রাজীব হোসেন রানা ও নেত্রকোণার বারহাট্টার জামাল সিঙ্গাপুরে ৮১ লাখ টাকা, কুমিল্লার দাউদকান্দির শরিফুল ইসলাম ও আউলাদ হোসেন ৮৩ লাখ টাকা, ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট ও এনামুল হক ২৩ কোটি ২৩ লাখ ৭৫৩ হাজার ৬৯১ টাকা,  এ কে এম মোমিনুল হক ওরফে সাঈদ ২ কোটি ২৪ কোটি ৯৯ লাখ ৮২ হাজার ৩৫৯ টাকা পাচার করেছেন বলে সিআইডির ভাষ্য।

এছাড়া কুমিল্লার মো. শাহজাহান বাবলু ২১ লাখ এবং চট্টগ্রামের নাজমুল আবেদীন, সোহেল আবেদীন, এ কে এম জাহিদ হোসেন ও অজ্ঞাত আরও চার থেকে পাঁচজনসহ এ অ্যান্ড বি আউটারওয়্যার অ্যান্ড নর্ম আউটফিট অ্যান্ড একসেসরিজ লিমিটেড ৪০ কোটি ৮৫ লাখ ১০ হাজার টাকা পাচার করেছেন বলে তথ্য দিয়েছে সিআইডি।

সেই সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ১০১ মিলিয়ন ডলার পাচারের তথ্য প্রতিবেদনে দিয়েছি সিআইডি।

এর মধ্যে ফিলিপিন্স ও শ্রীলঙ্কা থেকে ৩৪ দশমিক ৬১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার উদ্ধারের কথাও সেখানে বলা হয়েছে।  

ডেপুটি অ্যাটর্নি জোনরেল এ কে এম আমনি উদ্দিন মানিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অর্থ পাচার সংক্রান্ত সিআইডির প্রতিবেদনটি আমরা পেয়েছি। এতদিন মহামারীর কারণে নিয়মিত কোর্ট না থাকায় আদালতে তা উপস্থাপন করা হয়নি। নিয়মিত আদালত চালু হলে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হবে।”      

গত বছর ১৮ নভেম্বর ডিআরইউর মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে এসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বাংলাদেশ থেকে কানাডায় টাকা পাচারের সত্যতা পাওয়ার কথা বলেন।

সে সময় তিনি বলেছিলেন, প্রাথমিকভাবে অর্থপাচারে জড়িত যাদের তথ্য পাওয়া গেছে, তার মধ্যে ‘সরকারি কর্মচারীই বেশি’। এছাড়া রাজনীতিবিদ এবং ব্যবসায়ীও রয়েছেন। তবে সেদিন কারও নাম তিনি প্রকাশ করেননি।

সে বক্তব্যের বরাত দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বাঙালি অধ্যুষিত কানাডার কথিত ‘বেগম পাড়ার’ প্রসঙ্গ উঠে আসে।

সেসব প্রতিবেদন নজরে আসার পর গত বছর ২২ নভেম্বর হাই কোর্ট ‘অর্থপাচারকারী দুর্বৃত্তদের নাম-ঠিকানা চাওয়ার পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা, তা জানতে চায়।

স্বরাষ্ট্র সচিব, পররাষ্ট্র সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), দুর্নীতি দমন কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানকে ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে তা জানাতে বলা হয়।

এছাড়া প্রচলিত আইন লঙ্ঘন করে অর্থপাচারকারী সরকারি কর্মচারী, ব্যবসায়ী, রাজনীতিক, ব্যাংক কর্মকর্তা ও অন্যদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্টদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ও আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয় রুলে।

নির্দেশ অনুযায়ী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), দুর্নীতি দমন কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করা হয়।

এসব প্রতিবেদনের উপর শুনানির পর আদালত আবার অর্থ পাচারকারীদের নাম ঠিকানাসহ যাবতীয় তথ্য চেয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি তারিখ রাখে।

এদিকে বিদেশি ব্যাংক, বিশেষ করে সুইস ব্যাংকে পাচার করা ‘বিপুল পরিমাণ’ অর্থ উদ্ধারের যথাযথ পদক্ষেপের নির্দেশনা চেয়ে গত ১ ফেব্রুয়ারি হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আব্দুল কাইয়ুম খান ও সুবীর নন্দী দাস।

সে রিটের প্রাথমিক শুনানির পর গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের হাই কোর্ট বেঞ্চ রুলসহ আদেশ দেয়।

সুইস ব্যাংকসহ অন্যান্য বিদেশি ব্যাংকে বাংলাদেশের ব্যাক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কোনো সত্ত্বা কে-কত টাকা পাচার করেছে, পাচার করা টাকা ফিরিয়ে আনতে এবং পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সে তথ্য জানতে চাওয়া হয়।

তারই ধারাবাহিকতায় গত ১২ জুলাই অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে প্রতিবেদন জমা দেয় সিআইডি; যেটি আদালতে উপস্থাপনের অপেক্ষায় আছে।