বৃহস্পতিবার বিকালে জয়ন্তের মত শিশুরা খেলনা, পূজা দেখে রাজ্য জয়ের আনন্দেই ছিল; কিন্তু মহামারীর আগের নবমীর সেই জমজমাট ভিড় এবারও হয়নি।
মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কিশোর রঞ্জন মণ্ডল বললেন, “সচরাচর নবমী ও দশমীর দিনে মণ্ডপে ভিড় বাড়ে; তবে গতবার মহামারীর কারণে সেই পরিস্থিতি ছিল না। কেশ্বরী মন্দিরে ভক্ত-দর্শনার্থীদের সংখ্যা আজও অনেকটা কম।”
করোনাভাইরাস নিয়ে গতবছর পূজার সময় যতটা কড়াকড়ি ছিল এবার পরিস্থিতি তার চেয়ে অনেকটা ভালো। তারপরও নবমীতে ভিড় সেভাবে হল না কেন?
কিশোর রঞ্জন মণ্ডল বললেন, “অষ্টমীর দিনে দেশের বিভিন্ন মণ্ডপে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। সে কারণেও দর্শনার্থীদের সংখ্যা কমতে পারে।”
যেসব এলাকায় এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে, সেখানে হিন্দুদের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই ভর করেছে উদ্বেগ আর আতঙ্ক। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই শুক্রবার বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনে দুর্গা পূজার সমাপ্তি হবে এবার।
কিশোর রঞ্জন মণ্ডল বলেন, ঢাকেশ্বরী মন্দিরে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা-ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। স্বরাষ্টমন্ত্রীও নিরাপত্তার ব্যাপারে তাদের আশ্বস্ত করেছেন।
সোমবার ষষ্ঠী তিথিতে দুর্গোৎসবের সূচনার পর দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে দর্শনার্থীর সংখ্যাও বাড়ছিল। বৃহস্পতিবার মহানবমীতে ষোড়শ উপচারে দেবীর বন্দনা করেছেন ভক্তরা; বিকালের দিকে পরিবারের সদস্য, বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছেন কেউ কেউ।
রাজধানীর শ্যামলী থেকে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে এসেছিলেন মধ্য তিরিশের দুই বন্ধু-নয়ন দাস ও অনির্বাণ দাস।
এ উৎসবের জন্য বছরজুড়ে মুখিয়ে থাকেন নয়ন; তবে করোনাভাইরাসের কারণে গত বছরের দুর্গা পূজায় খুব একটা ‘আনন্দ’ করতে পারেননি বলে জানালেন। এবার বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে পারায় তার আনন্দ বেড়েছে।
“গত বছর দোকান বসাতে পারিনি। এবার অনুমতি নিয়ে দোকান বসিয়েছি। আগের বছরের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, নবমীর দিনে মোটামুটি ভালো লোকজন আসতে থাকে। বিক্রিও ভালো হয়। কিন্তু এবার লোকজন একেবারেই কম। বিক্রিবাট্টার অবস্থাও ভালো না।”
পাশের দোকানে শিশুদের খেলনা ‘বাবল’ বিক্রি করছেন আবু হোসেন; ১৮ বছর ধরে ঢাকেশ্বরীর মন্দিরে খেলনার দোকান নিয়ে বসেন তিনি।
আবু বলছেন, “মানুষজন অনেক কম, ফলে বিক্রি নাই বললেই চলে। অল্প দামে বিক্রি করে দিচ্ছি।”
রমনা কালীমন্দির ও আনন্দময়ী আশ্রমের পরিচালনা পরিষদের কোষাধ্যক্ষ পরাণ কৃষ্ণ সাহা জানান, নবমীর দিনে ভক্তরা বিশেষভাবে করোনাভাইরাস মহামারী থেকে মুক্তির জন্য প্রার্থনা করেছেন।
শুক্রবার সকাল ৯টা ১১ মিনিটের মধ্যে বিহিতপূজা ও দর্পন বিসর্জনের মধ্য দিয়ে এ বছরের দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা সারা হবে। বিকালে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দশভূজা দেবী দুর্গা এক বছরের জন্য ফিরে যাবেন দেবালয়ে, এটাই ভক্তদের বিশ্বাস।