রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন: মিয়ানমারকে চাপে রাখার পরামর্শ জাপানি দূতের

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমারের ‍উপর চাপ অব্যাহত রাখতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকায় জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Oct 2021, 04:01 PM
Updated : 14 Oct 2021, 04:01 PM

বৃহস্পতিবার ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশের (ডিক্যাব) আয়োজনে এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এ বিষয়ে কথা বলেন তিনি।

রাষ্ট্রদূত বলেন, “বাস্তবে স্পষ্ট করে বললে, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া খুব দ্রুত শুরু হবে এমন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। আমি জোর দিয়ে বলছি, প্রত্যাবাসন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ভালোমত এগিয়ে আসতে হবে এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পরিবেশ তৈরির জন্য।

“জাপানের দিক থেকে আমরা আলোচনা অব্যাহত রাখব। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত, প্রত্যাবাসন যাতে আর বিলম্বিত না হয়ে দ্রুত হয়, সেজন্য মিয়ানমারের উপর চাপ অব্যাহত রাখা।”

২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট রাখাইনে সেনা অভিযান শুরুর পর কয়েক মাসের মধ্যে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। আগে থেকে বাংলাদেশে ছিল আরও চার লাখ রোহিঙ্গা।

আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও সেই প্রত্যাবাসন আজও শুরু হয়নি।

২০১৯ সালে বছর দুই দফা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও রাখাইন রাজ্যের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কার কথা তুলে ধরে ফিরতে রাজি হননি রোহিঙ্গারা।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারে সামরিক জান্তার ক্ষমতা দখলের পর প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা নতুন করে অনিশ্চয়তায় পড়ে।

সে প্রসঙ্গ ধরে জাপানি রাষ্ট্রদূত নাওকি বলেন, “প্রত্যাবাসন অবশ্যই অগ্রাধিকার। এক্ষেত্রে যথাসম্ভব সব পদক্ষেপ জাপান নিচ্ছে। ফেব্রুয়ারিতে ক্যুর পরে পরিস্থিতি কোন দিকে যায় তা এখনও স্পষ্ট নয়। সামরিক জান্তা ও গণতান্ত্রিক শক্তির অচলাবস্থা আমরা দেখতে পাচ্ছি।”

ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের স্থিতিশীলতার জন্য রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানের পথ বের করা দরকার মন্তব্য করে রাষ্ট্রদূত বলেন, “মানবিক সহায়তা ও প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা এ অঞ্চলের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও অগ্রগতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ; বিশেষ করে বাংলাদেশ আর মিয়ানমারের জন্য।”

কক্সবাজারের উপর চাপ কমাতে রোহিঙ্গাদের একাংশকে নোয়াখালীর ভাসানচরে নেওয়ার উদ্যোগ এরইমধ্যে এগিয়ে নিচ্ছে সরকার।

ওই দ্বীপের পরিবেশ নিয়ে আপত্তি জানিয়ে সেখানকার সহায়তা কার্যক্রম থেকে দূরে ছিল ইউএনএইচসিআরসহ বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক সংস্থা।

তবে আগের অবস্থান পরিবর্তন করে গত শনিবার সরকারের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে ভাসানচরে শরণার্থীদের সহায়তার কাজে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত হয়েছে জাতিসংঘ।

ইউএনএইচসিআরের সম্পৃক্ততাকে স্বাগত জানিয়ে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর প্রক্রিয়ার সফলতা প্রত্যাশা করেন জাপানি দূত।

তিনি বলেন, “যত দ্রুত সম্ভব ভাসানচরের কার্যক্রমে জাতিসংঘের সম্পৃক্ততার জন্য জাপান আগে থেকেই বলে আসছে। আমি স্বাগত জানাই সাম্প্রতিক পদক্ষেপকে।

”আমাদের আশা, স্থানান্তর প্রক্রিয়া সফল হবে। এই সরকার সেখানে অবকাঠামো তৈরিতে বড় বিনিয়োগ করেছে। আমি ভাসানচরে গিয়ে নিজ চোখে দেখেছি, কতটা ভালো ও মজবুত ভাসানচরের অবকাঠামো। আশা করি, জাতিসংঘ ও অন্যান্য সংস্থা সহায়তা দেবে, যাতে এই স্থানান্তর প্রক্রিয়া সফল হয়।”

জাপান থেকে টিকা আসবে আরও

জাপানের রাষ্ট্রদূত বলেন, বৈশ্বিক টিকা সহযোগিতার প্ল্যাটফর্ম কোভ্যাক্সের মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্য করোনাভাইরাস মোকাবেলায় আরও টিকা পাঠাবে তার দেশ।

”আমরা কোভ্যাক্সের মাধ্যমে আরও টিকা পাঠাতে চাই। সঠিক পরিমাণ ও দিনক্ষণ এখনো ঠিক হয়নি। আশা করছি, নভেম্বরের মধ্যে হয়ত আসবে।”

এর আগে জুলাই-অগাস্ট মাসে বাংলাদেশকে ৩০ লাখ ডোজ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা উপহার পাঠিয়ে তাৎক্ষণিক সংকট মিটিয়েছিল জাপান।

ওই উপহার পাওয়ার পর অ্যাস্ট্রাজেনেকার দ্বিতীয় ডোজের অপেক্ষায় থাকা ১৫ লাখের বেশি মানুষকে টিকা দিতে পেরেছিল বাংলাদেশ।

ভারত সরকারের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার কারণে সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা আসা বন্ধ হওয়ায় তাদের দীর্ঘদিন দ্বিতীয় ডোজের অপেক্ষা করতে হয়।

টিকা পাঠানোর পাশাপাশি আরেকটি প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোর জন্য জাপান থেকে চিকিৎসা সরঞ্জাম পাঠানো হবে বলে জানান রাষ্ট্রদূত নাওকি।

ডিক্যাব সভাপতি পান্থ রহমানের সভাপতিত্বে ডিক্যাব টকে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক একেএম মঈনুদ্দিন বক্তব্য দেন।