কুমিল্লার ঘটনার পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে: তথ্যমন্ত্রী

কুরআন অবমাননার কথিত অভিযোগ তুলে শুরু হওয়া সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দেওয়ার পেছনে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্য’ রয়েছে বলে মনে করছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Oct 2021, 10:40 AM
Updated : 14 Oct 2021, 10:40 AM

কুমিল্লার ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় দেশের কয়েকটি স্থানে পূজামণ্ডপে হামলার পর বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি এই মত প্রকাশ করেন।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, “এর পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে। শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়ে একটি মহল সব সময় গুজব রটানোর কাজে লিপ্ত। তারা গুজব রটিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে দেশের সম্প্রীতি শান্তি বিনষ্টের অপকর্মে সব সময় লিপ্ত।

“একটি মহল, যারা এই দেশ রচনার বিরুদ্ধাচারণ করেছিল তারা দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির বিরুদ্ধে। এরা সব সময় ষড়যন্ত্র করছে। তারা বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি থাকুক, তা চায় না। সে জন্য নানা সময় নানা ধরনের গুজব রটনা করেছে। গত কয়েক বছরের এ ধরনের ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এগুলোর পেছনে হীন উদ্দেশ্য ছিল।”

তথ্যমন্ত্রী বলেন, “পদ্মা সেতুর পিলার স্থাপনের কাজ শুরুর পর গুজব রটিয়ে দেওয়া হয় পদ্মা সেতুতে নরবলি দিতে হবে। এ জন্য সারা দেশে ছেলেধরা গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হলো। অনেকগুলো নিরীহ মানুষ হত্যাকাণ্ডের স্বীকার হলো। এটি করা করেছে? যারা বলেছিল পদ্মাসেতু এই সরকার করতে পারবে না, এই সরকারের আমলে কখনো পদ্মাসেতু হবে না।

“যারা পদ্মাসেতুর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিল, বিশ্ব ব্যাংককে সেই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত করেছিল। পরে বিশ্ব ব্যাংক লজ্জাজনকভাবে কানাডার আদালতে হেরে গিয়ে প্রমাণিত হয়েছে সব অভিযোগ অসত্য, সেই একই মহল এই গুজব ছড়িয়েছে। সেই একই মহল আজ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার জন্য এই অপকর্ম করেছে।”

বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা চলার মধ্যেই বুধবার সকালে কুমিল্লায় কুরআন অবমাননার কথিত অভিযোগ নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ পরিস্থিতি শান্ত করতে গেলে তারা তোপের মুখে পড়ে, বাঁধে সংঘর্ষ।

এর জের ধরে চাঁদপুরেও পূজা মণ্ডপে ভাংচুর ও সংঘর্ষ হয়, সেখানে প্রাণহানিও ঘটে। মণ্ডপে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও কর্ণফুলী উপজেলা, কক্সবাজারের পেকুয়া, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ ও কুলাউড়া এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জেও।

ইতিমধ্যে কুমিল্লা, ফেনীসহ দেশের কয়েকটি এলাকায় হামলা-ভাংচুর-সংঘাতের পর দুর্গা পূজায় নিরাপত্তা দিতে ২২ জেলায় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিজিবির সদস্যদের মাঠে নামানো হয়েছে।

কুমিল্লার ঘটনা যারাই ঘটাক না কেন, তাদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার ঘোষণা দেন হাছান মাহমুদ।

“যারা গুজব ছড়ানোর চিন্তা করছেন ও করেছেন, সবাইকে চিহ্নিত করা হবে। সবাইকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে আমরা বদ্ধপরিকর।”

হিন্দু সম্প্রদায়কে নির্ভয়ে পূজা উদযাপনের আহ্বান জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। আপনারা নির্বিঘ্নে, নির্ভয়ে পূজা উৎসব পালন করুন। সরকার, জনগণ আপনাদের পাশে আছে। দুষ্কৃতকারীদের নিবৃত্ত করতে আমরা বদ্ধপরিকর।

“কোনো গুজবে কান দেবেন না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা ধরনের গুজব ছড়ানো হয়, বিভ্রান্ত হবেন না।”

হাছান মাহমুদ বলেন, “কুমিল্লায় নানুয়াদীঘির পাড়ে হিন্দু-মুসলিম সবাই যুগ যুগ ধরে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করছে। সেখানে রাতের বেলা মন্দির বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, কোনো মানুষ ছিল না, লাইটও বন্ধ ছিল। সেই পরিস্থিতিতে কে বা কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, পুলিশ তদন্ত করছে। আমি নিশ্চিত কারা ঘটিয়েছে সেটি খুব সহসা বের হবে।

“এটি যারা করেছে, তাদের আবার সেখানকার পুরোহিত যখন বললেন এটি সরিয়ে ফেলুন, তারা সেটি না করে পুলিশে খবর দিয়েছে, সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরির চেষ্টা করেছে। সেটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে সারা দেশে সাম্প্রদায়িক উসকানি দেওয়ারও চেষ্টা করেছে, উসকানি দিয়েছে। এতে প্রমাণিত হয় যে, একটি মহল, যারা সব সময় এই দুষ্কর্মের সঙ্গে যুক্ত, তারা এই ঘটনাটি ঘটিয়েছে। পুলিশের তদন্তে, অনেকগুলো সংস্থা তদন্ত করছে, তদন্তে তা বেরিয়ে আসবে।”

নাসিরনগরে সাম্প্রদায়িক হামলার সঙ্গে ‘জড়িত’ কয়েকজন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছে।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, “অভিযুক্ত হলেই যে ঘটনা সত্য সেটি বলা যায় না।”