‘বেআইনিভাবে’ প্লট নিয়ে ‘অবৈধ টাকায়’ বাড়ি করার মামলা এসকে সিনহার বিরুদ্ধে

ঢাকার উত্তরায় ‘বেআইনিভাবে’ প্লট বরাদ্দ নিয়ে ‘অবৈধ অর্থের মাধ্যমে’ সেখানে নয়তলা ভবন করার অভিযোগে সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Oct 2021, 10:49 AM
Updated : 10 Oct 2021, 08:26 AM

দুদকের উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বৃহস্পতিবার কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ মামলাটি দায়ের করেন বলে দুদক সচিব মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার জানান।

ঢাকা মহানগর জেষ্ঠ্য বিশেষ জজ কেএম ইমরুল কায়েশের আদালতে বৃহস্পতিবার বিকেলে মামলার এজাহার পৌঁছালে তিনি তা গ্রহণ করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ২৩ নভেম্বর দিন রেখেছেন। 

মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ‘ক্ষমতার অপব্যবহার ও প্রভাব খাটিয়ে’ ঢাকার উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরের ৬ নম্বর রোডে ৫ কাঠার একটি প্লট রাজউক থেকে বরাদ্দ নিয়ে সেখানে নয়তলা ভবন নির্মাণ করেছেন এস কে সিনহা।

রাজউকে দেওয়া প্লটের মূল্যসহ ভবন নির্মাণে ব্যয় করা সাত কোটি ১৪ লাখ পাঁচ হাজার ৮৬৫ টাকা এস কে সিনহা ‘বৈধভাবে আয় করেননি’ বলেও দুদকের ভাষ্য।

কমিশন সচিব আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা তার নিজের নামে আগেই রাজউক থেকে উত্তরার একটি প্লট বরাদ্দ পেয়েছিলেন।

“পরে তিনি ক্ষমতা অপব্যবহার করে অবৈধ প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে তার ভাই নরেন্দ্র কুমার সিনহার নামে রাজউক পূর্বাচল প্রকল্পে প্লটের জন্য আবেদন করান।

“প্রথমে সেখানে ৩ কাঠার একটি প্লট বরাদ্দ করান সিনহা। পরে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে তিন কাঠার প্লটটিকে ৫ কাঠার প্লটে উন্নীত করান। পরে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে পূর্বাচল থেকে প্লট স্থানান্তর করে উত্তরার এ প্লটটির জন্য রাজউক থেকে অনুমোদন বের করেন।”

দুদক সচিব বলেন, “সুরেন্দ্র কুমার সিনহা নিজেই প্লটের ৭৫ লাখ টাকা পরিশোধ করেন এবং পরে সেখানে ৯ তলা ভবন নির্মাণ করেন।"

এজাহারে বলা হয়, নিরপেক্ষ প্রকৌশলীর প্রতিবেদন অনুযায়ী, উত্তরার ওই প্লটের জন্য রাজউকের অর্থ পরিশোধসহ ভবনের নির্মাণ করতে সাত কোটি ১৪ লাখ পাঁচ হাজার ৮৬৫ টাকা ব্যয় হয়েছে।

মামলায় বলা হয়, “এই অর্থের কোনো বৈধ উৎস নেই বা তার জ্ঞাত আয়ের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। অবৈধ পন্থায় অর্জিত অর্থ তিনি বিভিন্ন ব্যক্তির হিসাবের মাধ্যমে স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তর করেন।”

সাবেক প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে ২০০৪ সালের দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ২৭(১) ধারা, ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ৪(২) ও (৩ ) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় এবং কিছু পর্যবেক্ষণের কারণে ক্ষমতাসীনদের তোপের মুখে ২০১৭ সালের অক্টোবরের শুরুতে ছুটিতে যান তখনকার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা। পরে বিদেশ থেকেই তিনি পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন।

পরে ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমান পদ্মা ব্যাংক) ঋণের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০১৯ সালের ১০ জুলাই সিনহাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করে দুদক। সেই মামলার রায় হবে আগামী ২১ অক্টোবর।

দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে আসা বিচারপতি সিনহা যুক্তরাষ্ট্রে বসেই ২০১৮ সালে একটি বই প্রকাশ করেন। তাতে তিনি দাবি করেন, তাকে ‘পদত্যাগে বাধ্য করে নির্বাসনে’ পাঠানো হয়েছে।

ওই বছর ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছিলেন এস কে সিনহা। নিউ জার্সিতে ছোট ভাই অনন্ত কুমার সিনহার নামে কেনা একটি বাড়িতেই সে সময় তিনি থাকছিলেন।

পরে ২০১৯ সালের জুলাই মাসে খবর আসে সিনহা যুক্তরাষ্ট্র থেকে কানাডায় গিয়ে সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন।

বিচারপতি সিনহা ছুটি নিয়ে বিদেশ যাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থ পাচার, আর্থিক অনিয়ম ও নৈতিক স্খলনসহ সুনির্দিষ্ট ১১টি অভিযোগ পাওয়ার কথা সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল। বাকি বিষয়গুলো নিয়ে পরে আর কোনো অগ্রগতি হয়নি।