অত্যাবশ্যক পরিষেবার কর্মীদের ‘অবৈধ’ ধর্মঘটে শাস্তির বিধান হচ্ছে

যে কোনো পরিষেবাকে ‘অত্যাবশ্যক’ ঘোষণার পর তার কর্মীরা বেআইনিভাবে ধর্মঘট ডাকলে তাদের চাকরিচ্যুতির সঙ্গে সর্বোচ্চ ৬ মাসের জেলের বিধান রেখে একটি আইনের খসড়ার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Oct 2021, 10:55 AM
Updated : 4 Oct 2021, 10:55 AM

সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে ‘অত্যাবশ্যক পরিষেবা আইন, ২০২১’ খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়।

বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এ বিষয়ক দুটো আইন ছিল। ‘অ্যাসেনসিয়াল সার্ভিসেস মেইনটেনেন্স অ্যাক্ট, ১৯৫২’ ও ‘দি অ্যাসেনসিয়াল সার্ভিসেস (সেকেন্ড) অর্ডিন্যান্স ১৯৫৮’ এই দুটোকে একসঙ্গে এনে ‘অত্যাবশ্যক পরিষেবা আইন, ২০২১’  হচ্ছে।

তিনি বলেন, “এই আইন পাস হলে সরকার কোনো সময় যদি প্রয়োজন হয়, বিভিন্ন সার্ভিসকে অত্যাবশ্যক পরিষেবা ডিক্লেয়ার করতে পারবে। এটা ঘোষণা করলে সেখানে স্ট্রাইক (ধর্মঘট) করা যাবে না, বন্ধও করা যাবে না। মলিকরা লে-অফও করতে পারবে না।”

এই ধরনের ক্ষেত্রের উদাহরণ দিতে গিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন,  “যেমন ডাক, টেলিযোগাযোগ, ইন্টারনেট সেবা, তথ্য প্রযুক্তিসহ সব ডিজিটাল সেবা, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল, ডিজিটাল আর্থিক সেবা, বিদ্যুৎ উপাদন ও সরবরাহের সঙ্গে সম্পৃক্ত কাজ।

“এছাড়া জল, স্থল ও আকাশ পথে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন; বিমানবন্দর পরিচালনা; স্থল ও নদীবন্দর পরিচালনা; কাস্টমসের মাধ্যমে কোনো পণ্য ও যাত্রীর পণ্য ছাড় করার কাজ; সশস্ত্র বাহিনীর কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো কার্যক্রম; প্রতিরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পণ্য বা মালপত্র উৎপাদনের সঙ্গে সম্পর্কিত কার্যক্রম বা খাদ্যদ্রব্য ক্রয়; সংগ্রহ ও সংরক্ষণের সঙ্গে সম্পর্কিত কার্যক্রম।”

সরকার যদি মনে করে কোনো কারণে কখনও এগুলোকে অত্যবশ্যকীয় পরিষেবা হিসেবে ঘোষণা করতে হবে, তবে ঘোষণা করতে পারবে। সেই ঘোষণা সর্বোচ্চ ৬ মাসের জন্য কার্যকর থাকবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

সরকার যদি অত্যবশ্যকীয় পরিষেবা ঘোষণা করে তবে সেক্ষেত্রে লে-অফ, ধর্মঘট করা যাবে না জানিয়ে তিনি বলেন, “এই আইন ভাঙলে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। শ্রমিক পর্যায়ে কেউ আইন ভাঙলে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা ৬ মাসের কারাদণ্ড হতে পারে। মালিক পর্যায়ে আইন ভাঙলে এক লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা ও এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হবে।”

খন্দকার আনোয়ারুল বলেন, “কোনো ব্যক্তি বেআইনিভাবে ধর্মঘট করলে তাকে বরখাস্তসহ তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা অর্থাৎ চাকরি থেকে বের করে দেওয়া হবে। এছাড়া তাকে সর্বোচ্চ ৬ মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেওয়া যাবে।”

“কেউ যদি আইন ভাঙতে প্ররোচিত করে তাকে এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেওয়া যাবে।”

মন্ত্রিসভা বৈঠকে ‘চিটাগাং ডিভিশন ডেভলপমেন্ট বোর্ড অর্ডিনেন্স, ১৯৭৬ (রোহিতকরণ) আইন ২০২১’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “এটি একটি ছোট আইন, প্রতিটি ডিভিশনে ডেভেলপমেন্ট বোর্ড ছিল, ১৯৭৬ সালের অর্ডিনেন্স দিয়ে করা হয়েছিল এবং বর্তমানে এর কোন কার্যক্রম নাই। ২০১৩ সালের আদালতের নির্দেশনা ছিল যেগুলোর কার্যক্রম থাকবে না সেগুলো বাতিল করে দেওয়া হবে এবং সেগুলো কার্যক্রম থাকবে সেগুলো আইনে পরিণত করতে হবে। মন্ত্রিপরিষদ বলেছে এটি বাতিল করে দেওয়া হল, যদি মামলা মোকাদ্দমা বা পাওনা থাকে তাহলে সেই আইন অনুযায়ী সেগুলো পরিচালনা হবে।”

এছাড়া বৈঠকে জবরদস্তি শ্রম সম্পর্কিত আইএলও কনভেনশন, ১৯৩০ এর প্রটোকল ২৯ অনুসমর্থনের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “আইএলও ১৯৩০ সালে জবরদস্তি শ্রম নিয়ে একটি কনভেনশন করে, ২০১৪ সালে জরবরদস্তি শ্রম নিয়ে একটি প্রটোকল করে।

“এটি শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে নিয়ে আসা হয়েছে, জাতির পিতার উদ্যেগে ২৬ জুন ১৯৭২ সালে আমরা এই শ্রম কনভেনশন সমর্থন করি, এর জন্য আইএলও ৫২ সদস্য রাষ্ট্র প্রটোকল ২৯ প্রটোকশ সমর্থন করেছে, আমাদের কন্সটিউশনের ৩৪ নম্বর অনুচ্ছেদেও এটি রয়েছে। যেহেতু আমরা ১৯৭২ সালে কনভেনশন সাক্ষর করেছি তাই আমাদের প্রটোকলে সাক্ষর করতে হবে।”

“ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি শর্ত ছিল তোমাদের যে আমরা জিএসপি দিচ্ছি সে অনুযায়ী তোমাদের আইএলও কনভেনশন মেনে চলতে হবে। প্রটোকল মানে হলো সংশোধনী এটি নিয়ে এসেছে তাই করা হয়েছে,” বলেন তিনি।