রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্থিরতা তৈরির জন্য মিয়ানমার থেকে অস্ত্র আসে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ‘অস্থিরতা’ তৈরির চেষ্টায় ‘মিয়ানমার থেকে বিভিন্নভাবে অস্ত্র আসছে’ বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Oct 2021, 01:47 PM
Updated : 3 Oct 2021, 01:47 PM

তবে তার দাবি, আশ্রয় শিবিরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ‘যথেষ্ট ভালো’ এবং রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহর হত্যাকারীদের ‘শিগগিরই’ আইনে আওতায় আনা সম্ভব হবে।

শারদীয় দুর্গোৎসব সামনে রেখে রোববার সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সভা শেষে সংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন বক্তব্য আসে।

রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে মাদক পাচারের বিষয়টি চলে আসছে বহুদিন ধরেই। কক্সবাজারের আশ্রয় শিবিরগুলো ঘিরে রোহিঙ্গা ডাকাতদের তৎপরতার খবরও প্রায়ই সংবাদমাধ্যমে আসছে। তবে রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহকে ক্যাম্পের ভেতরে গুলি করে হত্যার ঘটনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।

সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে একজন সাংবাদিক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন রেখেছিলেন- তাহলে কি সরকার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না?

এর উত্তর দিতে গিয়ে মন্ত্রী বলেন, “নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না- এই কথাটি কিন্তু আপনি ঠিক বলেননি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেখানে যথেষ্ট সংখ্যক আছে এবং আইনশৃঙ্খলাও সেখানে যথেষ্ট ভালো।”

মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের দিকে ইংগিত করে তিনি বলেন, “এই ধরনের মারামারি আপনারা আগেও দেখেছেন। মিয়ানমার থেকে বিভিন্নভাবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পরিবেশ অস্থির করার জন্য এখানে অস্ত্র আসছে। অস্ত্র নিয়ে তাদের আধিপত্য বিস্তার করার জন্য বিভিন্ন গ্রুপের মারামারিও দেখেছেন।

“যে নেতার (মুহিবুল্লাহ) কথা বলছেন, সে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য সবসময় সোচ্চার ছিল। আমরা মনে করি, তার এই ঘটনাটা তদন্ত করে এর মূল কারণটা বের করতে হবে। সেই অনুযায়ী আমরা কাজ করছি।”

আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি পিস ফর হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহ। ছবি: রয়টার্স

গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে উখিয়ায় লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৪৮ বছর বয়সী মুহিবুল্লাহকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে একদল অস্ত্রধারী। তিনি ছিলেন ‘আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস’ নামে রোহিঙ্গাদের একটি সংগঠনের চেয়ারম্যান।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডুর এলাকার স্কুলশিক্ষক মুহিবুল্লাহ পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যমে ‘রোহিঙ্গাদের কণ্ঠস্বর’ হিসেবে বিবেচিত ছিলেন।

এ হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ইউএনএইচসিআরসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো।

মুহিবুল্লাহর পরিবারের সন্দেহ, রোহিঙ্গাদের আরেকটি সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) তাকে হত্যা করেছে। আর রোহিঙ্গাদের যে অংশটি মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার জন্য কাজ করে আসছিল, তাদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে মুহিবুল্লাহকে হত্যার ঘটনা। 

পুলিশ ইতোমধ্যে পাঁচ রোহিঙ্গাকে গ্রেপ্তার করেছে; তাদের মধ্যে দুজনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হচ্ছে। তবে কারা কেন মুহিবুল্লাহকে খুন করে থাকতে পারে, সে বিষয়ে সরকারের তরফ থেকে কোনো বক্তব্য এখনও আসেনি।  

এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, “যারা তাকে হত্যা করেছে বলে আমরা মনে করছি, মনে করছি খুব শিগগিরই তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পারব। তদন্ত চলছে, খুব শিগগিরই এর ব্যবস্থা করতে পারব বলে বিশ্বাস করি।”

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কারা অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে? কোনো বিদেশি শক্তি এর সঙ্গে জড়িত? এসব প্রশ্নে মন্ত্রীর উত্তর: “সবকিছু তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।… আমরা কিছুই বলতে পারছি না। অনেক কিছুই সন্দেহ করছি। তদন্তের পর আপনাদের জানাব।”

আরেক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলা ‘শিথিল হয়নি’। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চারদিকে কাঁটাতাদের বেড়া দেওয়া হচ্ছে, সেটা কিছুদিনের মধ্যেই শেষ হবে। চতুর্দিকে ওয়াচ টাওয়ারও করা হচ্ছে, সেই সাথে তৈরি করা হচ্ছে রাস্তাঘাট।

সেখানে অল্প জায়গার ভেতরে ১১ লাখ মানুষের বসবাস করার বিষয়টি তুলে ধরে আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, এই বিশাল জনগোষ্ঠী পড়েছে দুটি থানার আওতায়। ফলে সবকিছু ‘মেইনটেইন করা’ সহজ কাজ নয়।

“তারপরও আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সেনাবাহিনী সমন্বিতভাবে ভালো কাজ করছে বলেই আইনশৃঙ্খলা এখনও সঠিক রয়েছে। কক্সবাজার একটা পর্যটন এলাকা, সেখানে লাখ লাখ পর্যটক যাচ্ছেন। সবকিছু মিলিয়ে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী কাজ করছে বলেই সব কিছু ভালো অবস্থায় আছে।”

আরও পড়ুন