রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে চুল কাটার ঘটনায় কী ব্যবস্থা, জানতে চেয়েছে হাই কোর্ট

সিরাজগঞ্জের রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চুল কেটে দেওয়ার ঘটনায় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনসহ তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা জানতে চেয়েছে হাই কোর্ট।  

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Sept 2021, 01:48 PM
Updated : 30 Sept 2021, 01:48 PM

এক মাসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার‌্য ও রেজিস্ট্রারকে তা লিখিতভাবে জানাতে বলা হয়েছে।

ফারহানা বাতেনের পাশাপাশি অন্য যে দুই শিক্ষকের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে, তারা হলেন- সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের সহকারী শিক্ষক রাজিব অধিকারী ও জান্নাতুল ফেরদৌস মুন। তারা দুজনই বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর। 

বিশ্ববিদ্যালয়ে সিসি ক্যামেরার ভিডিও দেখে তদন্ত কমিটি শিক্ষার্থীদের চুল কেটে দেওয়ার ‘প্রমাণ পাওয়ার’ মধ্যে বৃহস্পতিবার রুলসহ এ আদেশ দেয় বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ।

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে বুধবার একটি মানবাধিকার সংগঠন হাই কোর্টে রিট আবেদন করে। আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী হুমায়ুন কবির পল্লব ও নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী। সেই রিট আবেদনে আদালতের রুল আসে।

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাফদের সামনে ১৪ শিক্ষার্থীকে চুল কেটে দেওয়া এবং আত্মঘাতী হওয়ার মতো এ ধরনের আইনবহির্ভূত শাস্তি দেওয়া কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।

এছাড়া এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন, সহকারী শিক্ষক রাজিব অধিকারী ও জান্নাতুল ফেরদৌস মুনের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে এবং আইনবহির্ভূত শাস্তির শিকার ১৪ শিক্ষার্থীকে ২০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়েছে আদালত।

সেই সাথে দেশের যে কোনো শিক্ষাঙ্গনে এ ধরনের নিপীড়ন ও নির‌্যাতনমূলক ঘটনা প্রতিরোধে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর জন্য একটি আচরণবিধি প্রণয়নের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।  

শিক্ষা সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার‌্য, রেজিস্ট্রার, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন, সহকারী শিক্ষক রাজিব অধিকারী ও জান্নাতুল ফেরদৌস মুন, সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার, সদর থানার ওসিকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

এদিকে ওই ঘটনায় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনকে স্থায়ীভাবে অপসারণের দাবিতে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো অনশনে চালিয়ে যাচ্ছে একদল শিক্ষার্থী।

ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন।

ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর এবং প্রক্টরিয়াল বোর্ডের সদস্য পদেও দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

সম্প্রতি তিনি নিজেই কাঁচি হাতে ১৪ শিক্ষার্থীর চুল কেটে দেন বলে অভিযোগে ওঠে। সেই শিক্ষার্থীদের একজন আত্মহত্যার চেষ্টা করলে ক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়।

এ পরিস্থিতিতে গত মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিন প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন সহযোগী অধ্যাপক ফারহানা ইয়াসমিন, যদিও তিনি শিক্ষার্থীদের চুল কেটে দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।

তবে তদন্ত কমিটির সভাপতি এবং রবীন্দ্র অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান লায়লা ফেরদৌস হিমেল বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঘটনাস্থলে একটি সিসি ক্যামেরা লাগানো ছিল। ওই ক্যামেরার ফুটেজ আমাদের হাতে এসেছে। ফুটেজে কাঁচি হাতে শিক্ষার্থীদের চুল কাটার ঘটনার সত্যতা মিলেছে।”