হাই কোর্টে ইভ্যালির নথি তলব

গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা ও অনিয়মের অভিযোগে আলোচিত ই-কমার্স কোম্পানি ইভ্যালির যাবতীয় নথি তলব করেছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Sept 2021, 09:33 AM
Updated : 30 Sept 2021, 09:33 AM

যৌথমূলধনী কোম্পানি ও ফার্মমূহের পরিদপ্তরের নিবন্ধককে আগামী ১২ অক্টোবরের মধ্যে তা আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে।

ইভ্যালির অবসায়ন ও অবসায়নের আগে ইভ্যালির ব্যবসা ও ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জন্য একটি পরিচালনা পর্ষদ গঠনের নির্দেশনা চেয়ে এক গ্রাহকের আবেদনের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের একক বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।

আদালতে আবেদনকারী পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এ এম মাসুম ও সৈয়দ মাহসিব হোসেন। যৌথমূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরের রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এ কে এম বদরুজ্জামান।

ইভ্যালির অবসায়নের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২২ সেপ্টেম্বর ইভ্যালির সম্পদ বিক্রি ও হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা দেয় হাই কোর্ট।

আদেশে বলা হয়, বিক্রি, হস্তান্তর বা অন্য কোনো উপায়ে ইভ্যালির সম্পদে কেউ হাত দিতে পারবে না।

সম্পদ হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি ইভ্যালিকে কেন অবসায়ন করা হবে না, সেই কারণ দর্শানোর নোটিসও দেয় হাই কোর্ট।

ইভ্যালি লিমিটেড, যৌথমূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরের রেজিস্ট্রার, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, নগদ, বিকাশ, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন, ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস), বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাণিজ্য সচিবকে বৃহস্পতিবারের মধ্যে এ নোটিসের জবাব দিতে বলা হয়।

সেদিনের আদেশে আদলত এও বলেছিল, পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে ইভ্যালির ব্যবসা ও ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার আরজি বিবাদীদের উপস্থিতিতে বিবেচনা করা হবে।

সেই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার মামলাটি শুনানির জন্য উঠলে আবেদন অনুযায়ী পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে দেওয়ার আরজি জানান আইনজীবী সৈয়দ মাহসিব হোসেন।

আর ইভ্যালির অবসায়ন প্রশ্নে জারি করা নোটিসের জবাব দিতে সময় চাওয়া হয় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে।

আইনজীবী সৈয়দ মাহসিব হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যেহেতু ইভ্যালির সবাই এখন জেলে, তাই একটি অন্তবর্তী পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে দেওয়ার জন্য বলি। এটা আমদের আবেদনেই ছিল।

“কোর্ট বলল যে, যেহেতু আদলতের সামনে ইভ্যালির কোনো রেকর্ড নাই, তাই ইভ্যালির যাবতীয় রেকর্ড কোর্টে দাখিল করতে রেজিস্ট্রার ফর জয়েন স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসকে নির্দেশনা দিয়েছে। আগামী ১২ অক্টোবরের মধ্যে তা দাখিল করতে বলা হয়েছে।”

গাড়ি, মোটরসাইকেল, গৃহস্থালির আসবাবপত্র, স্মার্ট টিভি, ফ্রিজ, এসি, ওয়াশিং মেশিনসহ বিভিন্ন বিলাসী পণ্য অর্ধেক দামে বিক্রির প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাহকদের নজরে এসেছিল ইভ্যালি।

তাদের চমকদার ‘অফারের’ প্রলোভনে অনেকেই বিপুল অংকের টাকা অগ্রিম দিয়ে পণ্যের অর্ডার করেছিলেন পরে বেশি দামে বিক্রি করে ভালো লাভ করার আশায়।

কিন্তু তাদের অনেকে মাসের পর মাস অপেক্ষা করেও পণ্য বুঝে পাননি, ইভ্যালি অগ্রিম হিসেবে নেওয়া তাদের টাকাও ফেরত দেয়নি।

এভাবে প্রলোভনে পড়ে ব্যাংক ঋণ, ধার-দেনা করে, জমি বা গয়না বেচে সেই টাকা ইভ্যালিতে লগ্নি করে এখন মহাবিপদে আছেন বহু গ্রাহক।

ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল এবং তার স্ত্রী কোম্পানির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে ইতোমধ্যে গ্রাহকের করা প্রতারণার মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ইভ্যালির মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে ৩৩ হাজার ৩০৮ টাকায় স্যামসাংয়ের একটি ওয়াশিং মেশিন কেনেন ফরহাদ হোসেন নামের এক গ্রাহক। গত ৩০ ও ৩১ মে বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে ওই টাকা পরিশোধ করার পর ইভ্যালি থেকে একটি রশিদও দেওয়া হয় অনলাইনে।

নির্ধারিত সময়ে পণ্য বুঝে না পেয়ে যোগাযোগ করলে ইভ্যালি থেকে তাকে আশ্বাস দেওয়া হয়। কিন্তু এতদিনেও তিনি পণ্য বুঝে পাননি, তাকে টাকাও ফেরত দেয়নি ইভ্যালি।

এ বিষয়ে প্রতিকার না পেয়ে এবং ভবিষ্যতে প্রতিকার না পাওয়ার আশঙ্কা থেকে ইভ্যালির অবসায়ন, ইভ্যালির সম্পদ বিক্রি, হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞার নির্দেশনা চেয়ে গত ২২ সেপ্টেম্বর হাই কোর্টে আবেদন করেন ফরহাদ হোসেন।

সে আবেদনেই ইভ্যালির অবসায়ন প্রশ্নে নোটিস জারির পাশাপাশি কোম্পানিটির সম্পদ বিক্রি ও হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা দেয় হাই কোর্ট।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ইভ্যালির দেওয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত জুলাই পর্যন্ত তাদের দায়দেনার পরিমাণ ছিল ৫৪৩ কোটি টাকা।

তবে ইভ্যালির এমডি রাসেলকে গ্রেপ্তারের পর র‌্যাব বলেছিল, বাস্তব অবস্থা আরও খারাপ। ইভ্যালির দায়ের পরিমাণ হাজার কোটি টাকার বেশি বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রাসেল তাদের বলেছেন।